chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

জাতীয় ডেস্ক : বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। বুধবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হওয়া এ ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সরাসরি সম্প্রচার করেছে।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। আবহমানকাল ধরে বাংলার গ্রাম-গঞ্জে, আনাচে-কানাচে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। গ্রামীণ মেলা, হালখাতা, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ছিল বর্ষবরণের মূল অনুসঙ্গ।

ব্যবসায়ীরা আগের বছরের দেনা-পাওনা আদায়ের জন্য আয়োজন করতেন হালখাতা উৎসবের। গ্রামীণ পরিবারগুলো মেলা থেকে সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় তৈজষপত্র কিনে রাখতেন। গৃহস্থ বাড়িতে রান্না হতো সাধ্যমত উন্নতমানের খাবারের।

বাঙালি জাতীয়তাবাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় স্নাত হয়ে বাংলাদেশকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরের বিভিন্নস্থানে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের চল ছিল। আজিমপুর, ওয়ারি, ওয়াইজঘাট, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে হালখাতা উৎসব হতো, মেলা বসতো।

মেলায় পণ্য বেচাকেনা, গান-বাজনা, যাত্রা-সার্কাস ইত্যাদির আয়োজন হতো। ষাটের দশকে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ, সঙ্গীত পরিবশেন শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সঙ্কীর্ণতা, কূপমণ্ডুকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পয়লা বৈশাখ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। মনের ভেতরের সব ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার শক্তি যোগায়, স্বপ্ন দেখায়।

আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে এ স্বজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।

তিনি বলেন, আজ শুধু দেশে নয়, বিশ্বের যে প্রান্তেই বাঙালি তার বসবাস গড়ে তুলেছেন, সেখানেই বাঙালির হাজার বছরের লোক-সংস্কৃতিকে বয়ে নিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন।

বর্ষবরণসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তারা জানান দেন তারা বাঙালি। আর এর মাধ্যমেই পৃথিবী জুড়ে তৈরি হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির সেতুবন্ধন।

সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিগত দুই বছর জনসমাগম করে উন্মুক্ত স্থানে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানমালা করা যায়নি। বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ অনেকটাই কমেছে। তাই এবার সীমিত আকারে হলেও বহিরাঙ্গণে অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে।

তবে করোনাভাইরাস একেবারে নির্মূল হয়নি। নতুনরূপে করোনাভাইরাস আবার যেকোনো সময় যেকোনো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব অনুষ্ঠানে যোগদানের আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা অবশ্য যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছি। ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ টিকা পাওয়ার যোগ্য মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের পর এখন বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০২২ এবং ২০২৩ হবে বাংলাদেশের জন্য অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক বছর। আর কয়েক মাস পরেই চালু হতে যাচ্ছে বহুল আকাঙিক্ষত পদ্মাসেতু। এই সেতু জিডিপিতে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

তিনি জানান, এ বছরের শেষ নাগাদ উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল চালু হবে। আশা করা যায়, মেট্রোরেল রাজধানী ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। আগামী অক্টোবরে চট্টগ্রামে কর্ণফুলির নদীর তলদেশ দিয়ে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল।

এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন প্রথম ইউনিট আগামী বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

গত মাসে পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্ধারিত সময়ের আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি বিগত ১৩ বছরে যে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছে তা অর্থনীতির সামস্টিক সূচকগুলো বিবেচনা করলেই স্পষ্ট হয়।

২০০৯ সালে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ১০২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে তা ৪১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মাথাপিছু আয় ৭০২ মার্কিন ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলার।’

তিনি বলেন, ‘এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ভাবনা এবং দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে।

গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রেখে মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার ফলেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি মনে করি, দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করা সরকারের দায়িত্ব। জাতির পিতা যে সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়ন করতে অবদান রাখতে পারছি বলে আমরা গর্বিত।

যতদিন বেঁচে আছি, মহান রাব্বুল আলামিন আমাকে কাজ করার সামর্থ্য দিবেন, ততদিন মানুষের জন্য কাজ করে যাব, জনগণের সেবা করে যাব।’

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর