উৎসবের বর্ষবরণ বয়ে আনুক মঙ্গল
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ `মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’ এসো হে বৈশাখ, এসো এসো‘ রবীন্দ্রনাথের কালজয়ী এই গান জানান দেয় বৈশাখের অগমনী বার্তার। ধরনীতে আবার এসেছে বৈশাখ। চলছে বাংলা বর্ষবরণের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মহামারী করোনার কালো থাবায় গত দুই বছর বর্ষ বরনের আমেজ থেকে বঞ্চিত হলেও এই বছর তার কিছুটা পুষিয়ে নিতে প্রস্তুত নগরবাসী। চাওয়া একটাই, উৎসবের বর্ষবরণ বয়ে আনুক সবার মঙ্গল।
এদিকে ব্যস্ত সময় পার করছেন চারুকলার শিল্পী ও শিক্ষার্থীরা। রং তুলিতে আঁকা হচ্ছে মুখোশ, ব্যানার, ফেস্টুন। নগরীর ডিসি হিল, সিআরবির শিরীষতলা ও শিল্পকলা একাডেমিতে বর্ষবরণের জন্য প্যান্ডেল তৈরিসহ সকল প্রস্তুতি শেষ। নববর্ষকে ঘিরে বাঙালির আগ্রহের পারদ উর্ধ্বমুখী হলেও পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে এ বছরও বর্ষবরণ উৎসবের সকল আয়োজন সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।
সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে নতুন বছর ১৪২৯ বাংলাকে বরণ করা হবে। শেষ হবে দুপুরের দুইটার মধ্যে। উৎসবে থাকছে বর্ষবিদায়, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বর্ষবরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। মহামারী করোনাকে ছাপিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও বর্ষবরণের আয়োজন করতে পেরে খুশি আয়োজক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।
চট্টগ্রাম নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সদস্য কবি ও বরেণ্য সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদল চট্টলার খবরকে বলেন, মহামারী করোনার কারণে গত দুই বছর তেমন কোন আয়োজন ছিলো। এই বছর রমজানের কারণে আমাদের আয়োজন সীমিত করা হয়েছে। তবুও আমরা সাধ্যমতো আয়োজনের চেষ্টা করেছি। আজ বুধবার আমরা চলতি বর্ষকে বিদায় জানাবো। তেমনি আগামীকাল সকালে নতুন বর্ষকে বরণ করে নেবো। আগামীকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সিআরবির সিরিষ তলায় নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজন থাকবে। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম নববর্ষ উদযাপন পরিষদের সভাপতি দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এমএ মালেক একুশে পদক লাভ করায় তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ইকবাল হায়দার বলেন, ১৯৭৮ সাল থেকে ডিসি হিলে বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণের আয়োজন থাকে। ব্যাতিক্রম ছিলো গত দুই বছর। এবার করোনার ক্ষত কিছুটা নিয়ন্ত্রনে থাকলেও রমজান মাস চলছে। তাই আয়োজন সীমিত পরিসরে হচ্ছে। সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ৪৫ তম বৈশাখ বরণে এবারের থিম ‘পহেলা বৈশাখ বাঙালির সবার যোগে জয়যুক্ত হোক’।
হোটেল-রেস্টুরেন্ট সেজেছে বর্ণিল সাজে:
বাংলা নবর্বষ উদযাপনকে ঘিরে বর্ণিল সাজে সেজেছে নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল-মোটেল থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলো। আয়োজন করা হয়েছে বাঙালি খাবারের। নগরবাসীরা নিতে পারবেন পান্তা ইলিশের স্বাদ। অভিজাত পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লুর জনসংযোগ কর্মকর্তা রাহ্ফাত সালমান চট্টলার খবরকে বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে ১৪ শতাংশ ছাড়ে বুফে ডিনারের ব্যবস্থা রয়েছে। খাবারের তালিকায় পান্তা ইলিশ রয়েছে। ইফতারের পর থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বিশেষ অফার পাওয়া যাবে।
পুলিশের যত নির্দেশনা: নবর্বষকে ঘিরে কিছু নির্দেশনা জারি করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ। নগরবাসীকে এসব নির্দেশনা মেনে পুলিশকে সহায়তা করার অনুরোধ করা হয়েছে। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে দুপুর দুইটার মধ্যে নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান শেষ করে অনুষ্ঠানস্থল থেকে দর্শনার্থীদের চলে যেতে হবে। অনুষ্ঠানে আসা দর্শনার্থীদের মুখোশ ব্যবহার করা যাবে না। বর্ষবরণের অনুষ্ঠানস্থল ডিসি হিল ও সিআরবি এলাকায় দর্শকদের নির্ধারিত প্রবেশ ও বাহির পথ অনুরসণ করা, বড় ব্যাগ, পোটলা, ব্যাক প্যাক বহন না, অনুষ্ঠানে আসা নারী, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রতি সৌজন্যমূলক আচরণ,সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তি বা বস্তু দেখলে পুলিশকে অবহিত করা, মাদকদ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা এবং উৎসব প্রাঙ্গণে কোনো খাবারের দোকান স্থাপন না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এমএইচকে/চখ