chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

টিকার খরচে সরকার ও টিআইবি হিসেবে ব্যাপক গড়মিল!

জাতীয় ডেস্ক : মহামারি করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া টিকা কার্যক্রমে অর্থ ব্যয়ে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকারও বেশি হিসাবে গড়মিল রয়েছে দাবি করছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের সময় টিআইবির পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা মোকাবিলায় সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে পর্যবেক্ষণও তুলে ধরে টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ২০২১ সালের জুলাই-এ গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে টিকা প্রতি ৩ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

পরে ২০২২ সালের ১০ মার্চ গণমাধ্যমে টিকা কার্যক্রমে মোট ব্যয় ৪০ হাজার কোটি টাকা বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তবে, টিআইবি বলছে ভ্যাকসিন প্রতি খরচ হতে পারে সর্বোচ্চ ২২৫ টাকা।

মঙ্গলবার এক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই খরচ সর্বোচ্চ ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি হবার কথা নয়।

সরকারি তথ্য মতে ৩১ মার্চ ২০২১ পর্যন্ত মোট ২৪.৩৬ কোটি ডোজ টিকাদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের টিকা পরিকল্পনায় টিকা কার্যক্রম সম্পর্কিত ব্যয় টিকা প্রতি দুই ডলার (১৭০ টাকা) হিসেবে ধরা হয়।

টিকা ক্রয়ের পর থেকে মানুষকে টিকা দেওয়া পর্যন্ত সকল ব্যয় হিসাব করে টিকা প্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ০.৮৪ ডলার (৭১.৪ টাকা) থেকে ০২.৬৪ ডলার (২২৪.৪ টাকা)।

সেই হিসাবে টিকা কার্যক্রম সংক্রান্ত ব্যয়ের প্রাক্কলিত পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৩৯.৬ কোটি টাকা থেকে ৫ হাজার ৪৬৭.৩ কোটি টাকার মধ্যে। জাতীয় টিকা পরিকল্পনায় প্রাকল্লিত ব্যয় ৮ হাজার ১৪২ কোটি টাকা এবং টিকার প্রাক্কলিত মূল্য ১১ হাজার ২৫৪ দশমিক ৪ কোটি টাকা।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচের কথা বললেও টিকার প্রাক্কলিত ক্রয়মূল্য ও টিকা ব্যবস্থাপনার প্রাক্কলিত মোট ব্যয় দাঁড়ায় ১২ হাজার ৯৯৩ কোটি টাকা থেকে ১৬ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। যা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেওয়া হিসাবের অর্ধেকেরও কম। ফলে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকারও বেশি টাকার গরমিল রয়েছে।

টিআইবি জানায়, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত গবেষণাটি করা হয়। গবেষণার অংশ হিসেবে ৪৩টি জেলায় ১০৫টি টিকা কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা হয়।

যার মধ্যে ৬০টি অস্থায়ী এবং ৪৫টি স্থায়ী টিকা কেন্দ্র ছিল। এ ছাড়া ৪৩ জেলার ৪৮টি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৬৭১ জনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে এ গবেষণায়।

টিআইবি বলছে, ভ্যাকসিন কার্যক্রমে টিকা পরিবহন, সংরক্ষণ, টিকাকর্মী নিয়োগ এবং তাদের বেতন-ভাতা, বিদ্যমান অবকাঠামো, জনবলের ব্যবহারসহ যতো খরচ হতে পারে সব বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করা হয়েছে। এই মডেলের মাধ্যমে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিনের খরচ কেমন হতে পারে তা দেখানো হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘ভ্যাকসিন ক্রয় ও ব্যবস্থাপনায় সচ্ছতার ঘাটতি ছিলো। শুধু একটি দেশের ক্ষেত্রে টিকার ক্রয়মূল্য প্রকাশ না করার শর্ত থাকলেও অন্যান্য উৎস থেকে কেনা টিকার ব্যয় এবং টিকা কার্যক্রমে কোন কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি।

ভ্যাকসিন কার্যক্রমে অর্থ ব্যয় সম্পর্কে মোটাদাগে কোনো তথ্য দেয়নি স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে ব্যয়ের কথা বলেছে তা বাস্তব ব্যয়ের অর্ধেক। টিআইবির এই গবেষণা প্রতিবেদনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কিছু জানানো হয়নি।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর