টিউশনিতে পোষায় না, ডেলিভারী কাজে ঝুঁকছে শিক্ষার্থীরা
নিলা চাকমা: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ুয়া শিক্ষার্থী আজিজুল ইসলাম মানিক(ছদ্মনাম) টিউশনের জন্য শহরে থাকেন। দিনে তিনটি টিউশনি করে মাস শেষে পান ৮ হাজার টাকা। টিউশনির টাকায় পড়াশোনাসহ যাবতীয় খরচ চালাতে হয় তাকে এই শিক্ষার্থীকে।
কিন্তু এই টাকায় খরচ চালাতে গিয়ে হিমশিত খেতে হয় মানিককে। যেনো দিনে এনে দিনে খাওয়ার অবস্থা। টিউশনির সঙ্গে নতুন কিছুর চিন্তা থেকে সে যুক্ত হন অ্যাপভিত্তিক খাবার ডেলিভারীর কাজে। সারাদিন অনলাইনে পণ্যের অর্ডারের পৌঁছে যেন শহরের এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে।
আজিজুল ইসলাম মানিক চট্টলার খবরকে বলেন, টিউশনির জন্য আমাকে শহরে থাকতে হয়। মাসে তিনটা টিউশনি করেও খরচ চালাতে পারছি না। পরিবার থেকেও তেমন সার্পোট পাচ্ছি না। সারাদিন টিউশন আর ডেলিভারী খাটাখাটনির পর রাতে বাসায় ফিরলে ঘুমে চোখ ভেঙে আসে। পড়াশোনা আরও হয়ে উঠে না। পরীক্ষার রেজাল্টও খারাপ হচ্ছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধীন চট্টগ্রাম কলেজের আরেক শিক্ষার্থী পুনক বড়ুয়া টিউশনির গল্পটাও আরও আক্ষেপের। অসুস্থ বাবা আর পরিবারের হাল ধরতে তাকে নেমে পড়তে হয়ে জীবন যুদ্ধে। পুনক চট্টলার খবরকে বলেন, পড়ি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে, যতই ভালো পড়াই পাবলিক শিক্ষার্থীদের তুলনায় আমাদর সম্মানি কম। চাকরি নেই, টিউশনির টাকায় চলে না। তাই রাত অবধী ডেলিভারীর কাজ করেও শহরে ঠেকা দায় হয়ে পড়েছে। এই মুহুর্তে পরিবার নিয়ে খুব বিপদে আছি। এ সমস্যা কোথায় গেলে নিস্তার তার উত্তর কেউ দিতে পারেনা।
কেবল মানিক, পুনকই নন করোনার ধাক্কায় পাল্টে গেছে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জীবিকার দৃশ্যপট। বর্তমান বাজার দরের সঙ্গে প্রতিনিয়ত তাদেরও হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হচ্ছে। টিউশনিতে খরচ চালাতে না পেরে অনেকে ডেলিভারী চাকরি নেন,কেউ যুক্ত হয়ে পড়েন বিভিন্ন অনলাইন ব্যবসায়। তবে আশার হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হওয়ায় নতুন নতুন টিউশনিতে জুটছে তাদের।
কথায় আছে অভাগা যেদিকে চায়, সাগর শুকিয়ে যায়। করোনা ধাক্কার সঙ্গে নিত্য নতুন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ডবল দোলাই হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। ভোগ্যপণ্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সব ধরনের পণ্যের দাম। এর সঙ্গে ঘরভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ বিল বিলসহ যাবতীয় বিল দিয়ে মাস চলাটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম মহিলা কলেজ পড়ুয়া আনিকা রহমান বলেন, আগে টিউশনি করে চলতে পারতাম। কিন্তু এখন চলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। টিউশনির সংখ্যা বেড়ের যাওয়ার সঙ্গে পরিশ্রম বাড়ছে। ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে পারি না। এজন্য সামান্য সম্মানিতে একটি অনলাইন পেইজে মডরেটর হিসেবে কাজ নিয়েছি। সারাদিন প্রায় ওই পেইজে কাজ করতে হয়। এদিকে বাবা-মার থেকেও নিতে পারি না। খুবই দুর্বিষহ দিন যাচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারি পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারিগরী শিক্ষার দাবি জানিয়েছে অনেক শিক্ষার্থীরা। এদিকে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির মুখে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) হতদরিদ্র মানুষের মাঝে নায্যমুল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি করা হয়। টিসিবিতে কম মূল্যে শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা একটি বুথের দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।
আরকে/নচ