‘আমার মায়ের বুক খালি হয়ে গেছে’
নিজস্ব প্রতিবেদক: দীনি শিক্ষায় সন্তানকে বেড়ে তুলতে বোয়ালখালীর প্রবাসী আব্দুল মালেক সন্তানকে স্থানীয় আল্লামা হযরত শেখ অছিয়র রহমান ফারুকী (রহ.) এতিমখানা ও হেফজখানায় ভর্তি করেন। সাত বছরের ছেলে ইফতেখার মালিকুল মাশফি সম্প্রতি কায়দা পড়া শেষ করেন। কারো অনুমতি ছাড়া সে কোথাও যেতো না। এমনকি মাদ্রাসার গণশৌচাগারের গেলেও বন্ধুদের সঙ্গে করে নিয়ে যেতো। কখনও শিক্ষকদের অবাধ্য হননি।
শনিবার (৫ মার্চ) সকাল ৭ টার দিকে মাদ্রাসার শিক্ষকরা মাশফিকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে তার পরিবারকে জানান। এরপর পরিবারের সদস্যরা তার খোঁজ শুরু করেন। মাদ্রাসার ক্লাস রুম, অ্যাকাডেমিক ভবনসহ আশেপাশে কোথাও তার খোঁজ মেলেনি।
মাশফির বন্ধুদের জিজ্ঞস করা হলেও কেউ তার সন্ধান দিতে পারে নি। এক পর্যায়ে মাদ্রাসার দ্বিতীয় তলায় উল্টো অবস্থায় পড়ে থাকা একজনের পা দেখতে পান মাদ্রাসার ছাত্ররা।
ধরাধরি করে নিচে আনার পর গলা কাটা অবস্থায় মাশফিকে দেখতে পায়। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ মানুষ মাদ্রাসা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করতে থাকে। তারা মাদ্রাসার তিন শিক্ষককে এক রুমে আটকে রাখেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাদ্রাসায় ছুটে যান এএসপি, বোয়ালখালী থানার ওসিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
ছোট ভাইয়েরে খোঁজ পেতে বড় ভাই ইমতিয়াজ মালেকুল মাজেদ ফেসবুকে পোস্ট করেন। পিতা আব্দুল মালেকের তিন ছেলের মধ্যে মাশফি সবার ছোট। গেল বছরের অক্টোবরে তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়।
মাশফির ছোট মামা মোহাম্মদ মামুন খান বলেন, আমার ভাগিনা খুব ভিতু ছিল। কখনও শিক্ষকদের অনুমতি ছাড়া মাদ্রাসা থেকে বের হয়নি। বাথরুমে গেলেও বন্ধুদের নিয়ে যেতো। কী এমন দোষ ছিল তার? তাকে এভাবে গলা কেটে খুন করা হয়েছে। আমরা এর বিচার চাই।
আর মাশফির মেজো ভাই মো. ইসতিয়াক মালেকুল মাহির কান্না সংবরণ করতে না পেরে বলেন, আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে সে সবার আদরের ছিল। আমার আদরের ভাইটাকে তারা মেরে ফেলছে। আমার মায়ের বুক খালি হয়ে গেছে। আমরা থানায় এসেছি, হত্যার বিচার চাই।
জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) তারিক রহমান বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাদ্রাসার তিন শিক্ষককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯ টায় উপজেলার পশ্চিম চরণদ্বীপ ইউনিয়নের অছিউর রহমান হেফজ খানার দ্বিতীয় তলার স্টোর রুম থেকে ওই ছাত্রের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত চরণদ্বীপ ইউনিয়নের ফকিরাখালী গ্রামের দুবাই প্রবাসী আব্দুল মালেকের ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আরকে/নচ/চখ