‘রাশিয়ান মুদ্রা দিয়ে ব্যবসা বন্ধের ব্যবস্থা করব’
ডেস্ক নিউজঃ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়া বিনা উস্কানিতে নির্মম এক অভিযান শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগে থেকেই এটি বুঝতে পেরে সাবধান করে দিয়ে আসছিল। তিনি ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ জিÑ৭ মিত্রদের কঠোর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন।
হোয়াইট হাউস থেকে বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে একটায় ভাষণ শুরু করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, রাশিয়া পূর্বপরিকল্পিতভাবে আক্রমণ শুরু করেছে। বিনা উস্কানিতে নির্মম এ অভিযান শুরু করেছে তারা। বাইডেন বলেন, এ হামলার পেছনে অনেক মাস ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এ হামলার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে আসছিল। রাশিয়া পৌনে দুই লাখ সেনা মোতায়েন করে। তারা সীমান্তে রক্ত সরবরাহের ব্যবস্থা এবং ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করেছিল। আমরা তা থেকেই বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলাম। রাশিয়া যুদ্ধ বাঁধানোর জন্য পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী এলাকাসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন এলাকায় সাজানো হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাইডেন। তিনি আরো বলেন, রাশিয়া পাশ্চাত্যের দেওয়া সব আলোচনার প্রস্তাব উপেক্ষা করেছে।
জো বাইডেন বলেন, রাশিয়া যাতে ডলার, ইউরো ,পাউন্ড ও ইয়েন দিয়ে ব্যবসা করতে না পারে তিনি ও জি-৭ এর মিত্ররা তার ব্যবস্থা করতে একমত হয়েছেন। এ নিষেধাজ্ঞা যাতে রাশিয়ার ওপর সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের প্রতি ন্যুনতম প্রভাব ফেলে তা নিশ্চিত করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর অর্থায়ন ও তাকে আরও বড় করার সক্ষমতা বন্ধ করবে। তিনি বলেন, আমরা রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম ব্যাংকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি যাতে দেশের ব্যাংকিং খাতের এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ রয়েছে। বাইডেন জানান, রাশিয়ার যেসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তাদের মোট সম্পদের মূল্যমান এক ট্রিলিয়ন ডলার।
বাইডেন আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘ন্যাটো ভূখণ্ডের প্রতিটি ইঞ্চি’ রক্ষা করবে। তবে ইউক্রেনে সেনা পাঠানো হবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের সেনারা পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধ করতে যাচ্ছে না। বরং যাচ্ছে ন্যাটো মিত্রসহ পূর্ব ইউরোপের মিত্রদের সুরক্ষা দিতে। ’
পূর্ব ইউরোপের মিত্র দেশ লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া, রুমানিয়া ও পোল্যান্ডকে রাশিয়ার কাছ থেকে নিরাপত্তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র কয়েক হাজার স্থলসেনা ও বিভিন্ন অস্ত্র-সরঞ্জাম মোতায়েন রেখেছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত সোমবার পূর্ব ইউক্রেনের দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে পর্যায়ক্রমে অবরোধের ঘোষণা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর দেশগুলো রাশিয়ার ওপর আরো কঠোর অবরোধের পদক্ষেপ নেয়।
নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকালই জি-৭-এর মিত্রদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। আগে ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত বুধবার রাশিয়ার সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনীর কমান্ডার, ক্রেমলিনের চিফ অব স্টাফ, রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেল আরটির প্রধান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রসহ উচ্চপদস্থ ২৩ ব্যক্তির সম্পদ জব্দ এবং ভিসা বাতিল করে।
পুতিনকে বিদেশে সেনা পাঠানোর ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করা রুশ পার্লামেন্ট দুমার নিুকক্ষের ৩৫১ জন সদস্যের সম্পদ জব্দ ও ভিসা বাতিল করে। পাশাপাশি ২৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
যুক্তরাষ্ট্র : রাশিয়ার দুটি ব্যাংক ও তাদের ৪২টি শাখার ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ক্রেমলিনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা পাঁচ ধনকুবেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
যুক্তরাজ্য : রাশিয়ার পাঁচ ব্যাংক ও তিন ধনকুবেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
জার্মানি : রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহের নর্ড স্ট্রিম ২ পাইপলাইন প্রকল্পের অনুমোদন স্থগিত করেছে।
জাপান : জাপান রাশিয়ার সরকারি বন্ডে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। কথিত দুই রাষ্ট্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভিসায় নিষেধাজ্ঞা দেয়। এ ছাড়া কিছু ব্যক্তির সম্পদ জব্দ এবং ওই দুই অঞ্চলের বাণিজ্যে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
অস্ট্রেলিয়া : রাশিয়ার নিরাপত্তা কাউন্সিলের আট সদস্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সামরিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, রাশিয়ার এমন ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
সূত্র : এএফপি, বিবিসি