chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

অবৈধ দোকানে ছেয়ে গেছে পতেঙ্গা সৈকত

 শীঘ্রই উচ্ছেদ বলছে সিডিএ

নিজস্ব প্রতিবেদক: অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। কর্ণফুলী নদীর তীরে বঙ্গোপসাগরের কিনারায় পাহাড় আর টিলায় পরতে পরতে খেলা করছে সৌন্দর্যের সমাহার। প্রকৃতির এই সৌন্দর্য সহজেই আকৃষ্ট করে ভ্রমণপ্রিয় পর্যটকদের।

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পর্যটনকেন্দ্র পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত নিয়েও মানুষের আগ্রহের যেনো কমতি নেই। ছুটির দিনসহ প্রায় সময় এই সৈকতে পরিবার-পরিজন আর নানান বয়সী মানুষের সমাগম ঘটে।

কিন্তু ক্রমেই পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত যেনো তার সৌন্দর্যের আবেদন হারাতে বসেছে। প্রভাবশালীদের দাপটে অবৈধ দোকানপাট আর ভাসমান হকারের ছেয়ে গেছে সৈকত। তাদের দৃষ্টি থেকে বাদ পড়েনি শিশুদের জন্য সংরক্ষিত ‘কিডস জোন’। ফলে সৈকতে আসা পর্যটকদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

অবৈধ দোকানে ছেয়ে গেছে পতেঙ্গা সৈকত
প্রভাবশালীদের দাপটে অবৈধ দোকানপাট দিতে ব্যস্ত ভাসমান হকাররা। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সংরক্ষিত ‘কিডস জোন’। ছবিটি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে তুলেছেন আলোকচিত্রী এম ফয়সাল এলাহী

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) উদ্যোগে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের আধুনিকায়ন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ করা হয়। বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র তৈরি আর পর্যটকদের হাঁটার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে। এই ওয়াকওয়েতে এক সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ হাঁটার সুযোগ রয়েছে।

সূত্র মতে, সমুদ্র সৈকত ও পাঁচ কিলোমিটার ওয়াকওয়েজুড়ে গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় পাঁচ শতাধিক দোকান। অবাধে গড়ে ওঠা এসব দোকানের নিয়ন্ত্রণে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট চক্র। এই সিন্ডিকেটের অধীনে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে এখানকার প্রতিষ্ঠান।

তবে সিডিএ বলছে, সৈকতে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট বন্ধে শীঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের জন্যে নির্মিত সেই ওয়াকওয়ে এখন অবৈধ দোকানিদের দখলে। নানা রঙের ছাতা আর দোকানের ভিড়ে সমুদ্র এখন যেন দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে।

অবৈধ দোকানে ছেয়ে গেছে পতেঙ্গা সৈকত
পর্যটকদের জন্যে নির্মিত সেই ওয়াকওয়ে এখন অবৈধ দোকানিদের দখলে। নানা রঙের ছাতা আর দোকানের ভিড়ে সমুদ্র এখন যেন দৃষ্টির আড়ালে চলে গেছে। ছবিটি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে তুলেছেন আলোকচিত্রী এম ফয়সাল এলাহী

 

এখানকার দোকানদার এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন সন্ধ্যায় প্রতি দোকান থেকে আকারভেদে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। দোকানের এই টাকা তোলেন সাহাবুদ্দিন এবং মঞ্জু নামে দুই ব্যক্তি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সমুদ্র সৈকতের হকার মালিক সমিতির সভাপতি নুর মোহাম্মদ বলী এই বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নুর মোহাম্মদ বলী বলেন, অবৈধ দোকান বাণিজ্যের সঙ্গে আমি জড়িত না, আপনি ভুল শুনছেন। আমরা কোনো চাঁদা তুলি না। আমাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। হকারদের সঞ্চয়ের জন্য সব হকার থেকে ১০ টাকা করে নেই। এর বাহিরে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। এটা শুধু আমাদের পতেঙ্গাতে নয়, সারা দেশেই আছে।

প্রত্যেক দোকানি থেকে ৫০ – ১৫০ টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা ডাহা মিথ্যা কথা, আপনাকে ওরা ভুল তথ্য দিয়েছে।

সৈকতে অবাধে গড়ে ওঠা হকারের বিষয়ে কথা হয় সমুদ্র সৈকত হকার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এর সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে দোকান বেশী ছিল, এখন আগের তুলনায় অনেক কম। সেখানে ১৫০ টার মতো দোকান আছে।

দোকান থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা জেনারেটরের বাইরে আর কোনো ভাড়া নেই না। কেউ কোনো টাকা তুলে না। এখানে কোনো চাঁদাবাজি চলে না। এমন কিছু হলে কোনো পর্যটক আসতো না।

অবৈধ দোকানে ছেয়ে গেছে পতেঙ্গা সৈকত
প্রভাবশালীদের দাপটে অবৈধ দোকানপাট দিতে ব্যস্ত ভাসমান হকাররা। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সংরক্ষিত ‘কিডস জোন’। ছবিটি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত থেকে তুলেছেন আলোকচিত্রী এম ফয়সাল এলাহী

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী ও পতেঙ্গা সৈকত ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য কাজী হাসান বিন শামস চট্টলার খবরকে বলেন,  মানুষের হাঁটার জন্য সৈকত করা হয়েছে। কিন্তু দোকানের জন্য মানুষ হাঁটতেও পারে না। নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগের কার্ডধারী ব্যবসায়ীদের কান্ট্রিসাইডে দোকান করতে দেওয়া হবে। সৈকতে কেউ বসতে পারবে না, আমরা সবাইকেই উচ্ছেদ করব।

অবৈধ এসব দোকান বসানোর বিষয়ে সিডিএর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এসব দোকান বসাতে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া  হয়নি। এরা অবৈধ সিন্ডিকেট, অনেক দিন ধরে তারা সৈকত এলাকা দখলের চেষ্টা করছে।  এই বানিজ্যে জড়িত কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কেএম/চখ

এই বিভাগের আরও খবর