chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

পটিয়ায় ধনেপাতার বাম্পার ফলন

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের পটিয়ায় ধনেপাতার বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার বিস্তির্ণ এলাকায় কৃষকরা এ ধনেপাতা চাষ করেছেন। এবারে চাষে আবাহাওয়া পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়ায় কৃষকরা চাষ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

পটিয়া পৌর সদরে শ্রীমতি খালের দুই পাড়ের চাষাবাদ করে ভাল ফলন পেয়ে হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। এ এলাকার শত শত একর কৃষি জমিতে ধনেপাতা চাষের বাম্পার ফলন হয়েছে।

শ্রীমতি খালের দুই পাড়ের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুগে ধনে পাতার সুগন্ধি উপলব্ধি হচ্ছে। নীল রংয়ের ধনেপাতায় এক অন্যরকম সৌন্দর্য্য ফুটে উঠেছে যা সরেজমিনে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না।

শ্রীমতি খাল পাড়ের সবজি কৃষক রাখাল দাশ তার নিজ জমিসহ ধারকৃত প্রায় ১শ একর জায়গাতে ধনে পাতা গাছের বীজ বপন করেছেন। আবহাওয়া ভাল থাকায় খুব ভালভাবেই সবগুলো গাছ উঠেছে।

রাখাল জানান, খুবই অল্প সময়ে এই ধনে পাতা চাষ হয়ে যায়। আর এইবার ভাল আবহাওয়ার জন্য গাছের তেমন ক্ষতি হয়নি। তাছাড়া ভাল ফলন ও ভাল দামে বিক্রি করতে পেরে অনেক খুশি কৃষক রাখাল।

বর্তমান বাজার দরে প্রতি কেজি পাইকারী মূল্য ৫০ টাকা এবং খুচরা ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়।

বাজার মূল্য ভাল পাওয়ায় একেককটি জমি থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার লাভ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক মেহেরুন, কালিপদ, শুক্লা,আমেনা, বাদল,শঞদি ও বিপ্লব।

তারা আরো বলেন, একই জমির ধনে পাতা বিক্রি করে পরে আবার ধনের জন্য বীজ বপন করা যায়। এতে করে আরো অনেক লাভ হয়।

ধনে পাতা ও তার গুন সম্পর্কে একটু জেনে আসি : ধনেপাতা একটি সুগন্ধি ঔষধি গাছ। ধনিয়া পাতার বৈজ্ঞানিক নাম একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়াতে বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।

ধনে পাতা পছন্দ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। যদিও ধনিয়া পাতা বছরের সব সময় পাওয়া যায়। তবে শীতকালে এর স্বাদই আলাদা। এটি শুধু খাবারে স্বাদই বাড়ায়। তার পাশাপাশি ধনিয়া পাতার রয়েছে একগুচ্ছ ঔষধি গুণাগুণ।

বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র ধনের বীজ খাবারের মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সুস্বাদু ধনের পাতা বাংলাদেশী চাটনি ও মেক্সিকান সালসাতে ব্যবহার করা হয়। ধনে পাতাকে আমরা সালাদ এবং রান্নার স্বাদ বাড়ানোর কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে থাকি।

কিন্তু শুধু স্বাদ এবং ঘ্রাণ বাড়ানোর কাজেই এর গুণাগুণ শেষ হয়ে যায় না। এ পাতা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো একটি তৃণ জাতীয় খাবার।

অধিকাংশ মানুষ ধনে পাতার উপকারিতা না জেনেই নিয়মিত বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার করে আসছে। এতে রয়েছে ১১ জাতের এসেনশিয়াল অয়েল তন্মধ্যে লিনোলেয়িক এসিড, লিনোলেনিক এসিড, স্টিয়ারিক এসিড, পামিটিক এসিড ইত্যাদি অন্যতম।

এতে রয়েছে ফাইবার। ভিটামিন সমূহের মধ্যে এতে রয়েছে, ভিটামিন এ ভিটামিন সি ভিটামিন কে থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন ইত্যাদি। মিনারেলের মধ্যে রয়েছে ম্যাংগানিজ, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্লোরিন এবং জিংক, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি।

এছাড়াও এতে প্রচুর পরিমানে পলিফেনল ও ফাইটোকেমিক্যাল রয়েছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটিতে কোলেস্টেরল এর মাত্রা শূন্য। তাই এ পাতাকে সাধারণ কিছু ভাবার কোনো কারণ নেই।

চিকিৎসকদের মতে, ধনে পাতার অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা ধনে পাতা খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমে যায়, ভাল কোলেস্টরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কারন এতে কোলেস্টেরল এর মাত্রা শূন্য।

এছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্যে ধনে পাতা বিশেষ উপকারি। এটি ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তের সুগারের মাত্রা কমায়।

তাছাড়া ধনে পাতায় থাকা অ্যান্টি-সেপটিক মুখে আলসার নিরাময়েও উপকারী, চোখের জন্যেও ভাল। মেয়েদের ঋতুস্রাবের সময় রক্তসঞ্চানল ভাল হওয়ার জন্যে ধনে পাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়। এতে থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা সারাতেও বেশ উপকারী এমন অভিমত মেডিসিন বিশেষজ্ঞর।

তা ছাড়া ধনে পাতার থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন –অ্যাসকরবিক এসিড, বিটা ক্যারেটিন, ম্যাংগানিজ পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। ধনে পাতায় রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা বাতের ব্যথাসহ হাড় এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশমে কাজ করে।

স্মৃতিশক্তি প্রখর এবং মস্তিষ্কের নার্ভ (স্নায়ু) সচল রাখতে সাহায্য করে ধনে পাতা। ধনে পাতার ভিটামিন ‘কে’ অ্যালঝেইমার রোগের চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী।

ধনেপাতায় এসেনশিয়াল অয়েল লিনোলেয়িক এবং লিনোলিক অ্যাসিড থাকে যার মধ্যে অ্যান্টিরিউম্যাটিক এবং অ্যান্টি-আথ্র্রাইটিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এরা ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে।

ডিসইনফেকট্যান্ট, ডিটক্সিফাইং বা বিষাক্ততা রোধকারী, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে এরা বিভিন্ন স্কিন ডিজঅর্ডার বা ত্বকের অসুস্থতা (একজিমা, ত্বকের শুষ্কতা এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন) সারাতে সাহায্য করে।

ত্বক সুস্থ ও সতেজ রাখতে তাই ধনে পাতার উপকারিতা অনেক। অ্যান্টি হিস্টামিন উপাদান থাকায় এরা অ্যালার্জি বা এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দূরে রাখে।খাবারের মাধ্যমে সৃষ্ট সবচেয়ে ভয়াবহ রোগ সালমোনেলা।

ধনে পাতায় উপস্থিত ডডেসিনাল উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে সালমোনেলা জাতীয় রোগ সারিয়ে তুলতে অ্যান্টিবায়টিকের থেকে দ্বিগুণ কার্যকরে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিইনফেকসাস, ডিটক্সিফাইং, ভিটামিন সি এবং আয়রন গুটিবসন্ত প্রতিকার এবং প্রতিরোধ করে।

চখ/আর এস

এই বিভাগের আরও খবর