chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

কাল থেকে শুরু মালেশিয়ায় কর্মী নিয়োগের নিবন্ধন

চট্টলা ডেস্ক: বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। সে প্রক্রিয়ায় আগ্রহীদের জন্য অনলাইনে নিবন্ধনের সুযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার।

দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসময়ে কেবল বনায়ন খাতের জন্যই আবেদন নেওয়া হবে। অন্যান্য খাতের জন্য নিবন্ধন শুরু হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে।

দীর্ঘ তিন বছর পর বাংলদেশের জন্য খুলতে যাওয়া এই শ্রমবাজার নিয়ে অবশ্য এখনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে পারেনি। মালয়েশিয়ার সঙ্গে জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী সরকারি ডাটাবেজ থেকে কর্মী নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত সেই ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক অবশ্য বলছেন, মালয়েশিয়ায় নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও আরও দুই-তিন ধাপ শেষ হয়ে চূড়ান্ত নিয়োগে কিছুটা সময় লাগবে। এই সময়ের মধ্যেই তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারবেন।

গত ১৫ জানুয়ারি একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে মালয়েশিয়া সরকারের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মালয়েশিয়ায় বৃক্ষরোপণ খাতে শ্রমিক ঘাটতি কমাতে ৩২ হাজার বিদেশি শ্রমিক আনার জন্য সরকার বিশেষ অনুমোদন দিয়েছে গত বছরের সেপ্টেম্বরে। সে প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ২৮ জানুয়ারি থেকে এই খাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগে আবেদন জমা নেওয়া হবে। দেশটিতে যেতে ইচ্ছুক কর্মীরা ওই সময় থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। নিয়োগকর্তারাও ওয়েবসাইটে কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেখানে তারা বৃক্ষরোপণ খাতসহ অন্যান্য খাতে কর্মী নিয়োগের অপশন পাবেন। তারা আবেদন করবেন www.fwcms.com.my এই ওয়েবসাইটে।

এদিকে, বিদেশি কর্মী নিয়োগে মালিয়েশিয়া প্রক্রিয়া শুরুর পথে থাকলেও কর্মী পাঠানোর প্রস্তুতি এখনো নিতে পারেনি বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মালয়েশিয়া প্রক্রিয়া শুরুর পথে থাকলেও নিয়োগ চূড়ান্ত করতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। সেই সময়ের মধ্যে কর্মী পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, কাল থেকে অনলাইন আবেদন শুরু হচ্ছে। তখন মালয়েশিয়া তাদের নিয়োগ কোম্পানিগুলোকে অনুমতি দেবে। যেসব কোম্পানি আবেদন করবে, সেই আবেদন যাচাই-বাছাই করে নিয়োগকর্তা তালিকাভুক্ত করবে মালয়েশিয়া সরকার। তারপর কর্মীর চাহিদা জমা হবে। এরপর সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে, ওই কোম্পানির কর্মী রাখার ক্ষমতা আছে কি না এবং কোম্পানিও উপযুক্ত কি না। তারপর তাদের কর্মী নিয়োগের অনুমতি দেওয়া হবে।

বিএমইটি মহাপরিচালক বলেন, কোম্পানি সরকারের অনুমতি পাওয়ার বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে রিক্রুটিং এজেন্সি খুঁজবে। সেটি সিলেক্ট হলে রিক্রুটিং এজোন্সি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবে। মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে ওই রিক্রুটিং এজেন্সিকে অনুমতি দেবে। লেবার কাউন্সিলের অনুমোদন, মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই করে বিএমইটিকে পাঠাবে। তখন বিএমইটি ভিসা যাচাই করে ক্লিয়ারেন্স কার্ড দেবে।

তিনি বলেন, ২৮ তারিখ অনলাইন আবেদন উন্মুক্ত হলেও বাকি দুই-তিন ধাপ শেষ করতে একটু সময় লাগবে। ওইখানকার (মালয়েশিয়া) প্রক্রিয়া শেষ করে এখান (বাংলাদেশ) পর্যন্ত আসতে একটু সময় লাগবে। অর্থাৎ ডিমান্ড দাখিল হওয়ার পরও কিছুদিন সময় লাগবে।

এদিকে, প্রক্রিয়া শুরুর আগেই কর্মীরা দালালের মাধ্যমে টাকা-পয়সার লেনদেন শুরু করেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিএমইটি মহাপরিচালক বলেন, বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমত পাসপোর্ট থাকতে হবে, দ্বিতীয় ভ্যাকসিন নেওয়া (করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন) থাকতে হবে। যাওয়ার আগে কিছু প্রস্তুতিও নিতে হবে। বিএমইটির যে টিটিসি (কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র) আছে, সেখানে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আবার তিনি যে পেশায় যাবেন, সেই পেশাগত দক্ষতার সনদ থাকতে হবে। আবার তিন দিনের প্রস্তুতিমূলক আরেকটি একটা প্রশিক্ষণও নিতে হবে।

মহাপরিচালক বলেন, এই চারটির ফল মিলিয়ে তারপরই এক জন কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হবেন। এর আগেই যদি কেউ বলে তাকে পাঠিয়ে দেবে, তাহলে সেটি মিথ্যা আশ্বাস হবে। কারণ মালয়েশিয়া যদি ব্যক্তির পছন্দের পরিবর্ততে বিএমইটির ডাটাবেজ থেকে জনশক্তি নির্বাচন করে, তাহলেও ওই কর্মীকে এই চার শর্ত মেনেই বিএমইটিতে নাম লেখাতে হবে। আবেদন করতে হবে। তখন নিয়োগকর্তা বেছে তার পছন্দমতো কর্মী নিয়োগ দিতে পারবেন।

মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহীদের এসব শর্ত পূরণের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বলতে চাই— কাউকে টাকা দেবেন না। বরং নিজে প্রস্তুতি নিন। টাকা জোগাড় করতে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। বিএমইটিতে যখন অনলাইন আবেদন উন্মুক্ত করা হবে, বিএমইটিতে নিবন্ধিত হোন। এখানে নিবন্ধন থাকলে সুযোগ পাবেন।

মালয়েশিয়া যাওয়ার বিষয়ে এখনো বাংলাদেশ কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেনি জানিয়ে বিএমইটি মহাপরিচালক বলেন, আমরা মালয়েশিয়া যাওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রক্রিয়া শুরু করিনি। কত টাকা লাগবে, তা নির্ধারণ করা হয়নি। কোন শ্রেণিপেশার মানুষ যেতে পারবে, প্রশিক্ষণ নেওয়ার ব্যবস্থা কী হবে— এসবের কিছুই এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তাই কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি আগাম টাকা নেয় কিংবা পাসপোর্ট নেয়, সেটি অপরাধ। এগুলো করার সুযোগ কারও নেই। এ বিষয়ে আমরা এরই মধ্যে জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপন দিয়েছি। সবাই সচেতন থাকুন।

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে গত ১৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি সই হয়, সেখানে মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহীদের জন্য কিছু যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। এসব কর্মীদের ন্যূনতম ইংরেজি ভাষাজ্ঞান অর্থাৎ ইংরেজি পড়া ও কিছুটা বলার দক্ষতা থাকার কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে মালয় ভাষায় দক্ষতা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে কৃষি, নির্মাণ, খনি, গৃহকর্ম, বাগান ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেবে মালয়েশিয়া। প্রথম ধাপে তারা ৩২ হাজার বিদেশি কর্মী নেবে কেবল প্ল্যান্টেশন তথা বনায়ন খাতের জন্য। এই ৩২ হাজার কর্মীর বেশিরভাগই বাংলাদেশ থেকে নেওয়া হতে পারে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর আগে, ১৯৯২ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি শুরু করে বাংলাদেশ। ওই বছর দুই দেশ জনশক্তি রফতানি বিষয়ক চুক্তি করে। কিন্তু সে উদ্যোগের ধারাবাহিকা রাখা যায়নি। দীর্ঘ বিরতির পর ২০০৬ সালে আবার কর্মী পাঠাতে শুরু করে বাংলাদেশ। কিন্তু দেশটিতে বিপুলসংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি ধরা পড়ার পর ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করা হয়।

এর তিন বছর পর আবার ২০১২ সালে নতুন করে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় আসে। ফের চুক্তিবদ্ধ হয় দুই দেশ। এবার জি-টু-জি তথা সরকারের সঙ্গে সরকারের চুক্তির মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়। এরপর দেশটিতে কর্মী নিয়োগ শুরু হলেও ২০১৮ সালে দুর্নীতি আর সিন্ডিকেট তৈরির মাধ্যমে জনশক্তি রফতানিকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে ফের বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেশটি। আবার তিন বছরের বিরতির পর ফের দেশটির শ্রমবাজার খুলতে যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য।

জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর