ইভটিজিংকান্ডে মিরসরাইতে তুলকালাম!
ছাত্রলীগের ২ গ্রুপে দফায় দফায় সংঘর্ষ
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের মিরসরাইতে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক কলেজ ছাত্রীকে ইভটিজিং করার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
গত দুই দিনের পৃথক সংঘর্ষে মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগ ও পৌরসভা ছাত্রলীগের ৮ নেতাকর্মী আহত হওয়ার কবর পাওয়া গেছে। তাছাড়া এসব ঘটনায় দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও এক ছাত্রলীগ নেতার বাড়ীঘর ভাঙ্গচুর করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় মিরসরাই থানা পুলিশ দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া তাদের ব্যবহৃত দুটি রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেল জব্দ করে থানা হেফাজতে নিয়েছে। তবে হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত কোন অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।
সর্বশেষ রবিবার (২৩ জানুয়ারী) সকাল ১১টায় উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকের সামনে দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে ধারালো অস্ত্রদিয়ে মারাত্মক আহত করা হয়েছে। বর্তমানে তারা আশঙ্কাজনক আবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধিন আছেন।
জানা গেছে, গত শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকালে মিরসরাই বিশ্বিবিদ্যালয় কলেজ সড়কে কলেজের এক শিক্ষার্থীকে ইভটিজিং করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক ও পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাফর ইকবাল নাহিদের সমর্থকরা কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য শাহনেওয়াজ নিশাদ অনুসারিদের ধাওয়া দেয়।
ঘটনার রেশ ধরে পরদিন (গতকাল রবিবার) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মিরসরাই পৌরসভা মার্কেটের সামনে কলেজ ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য শাহনেওয়াজ নিশাদ ও তার সহপাঠিদের ওপর হামলা হয়।
হামলায় নিশাদসহ তার অনুসারি রাজিব, সাকিব, সজিব ও হাছান নামের পাঁচজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়।
সাড়ে ১২টার দিকে মিরসরাই পৌর বাজারের ফুট ওভার ব্রীজের নিচে আহত ছাত্রলীগ নেতা নিশাদের গ্রুপের নেতাকর্মীরা হামলা চালায় মিরসরাই পৌরসভা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর।
এসময় উপজেলা সড়কে হাসান নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর সময় তার মা নিজ সন্তানকে বাঁচাতে পেছন পেছন আহাজারী করতে দেখা যায়।
সর্বশেষ বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পুনরায় কলেজ ছাত্রলীগ নেতা নিশাদের কর্মীরা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ তালবাড়ীয়া গ্রামে হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মী রিয়াদের বাড়িতে।
এসময় তারা ঘরের দরজা জানালা ভাংচুর করে এবং রিয়াদকে না পেয়ে তার বড় ভাই সালমান ও রিয়াদের মোটর বাইকে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেয়। হামলার ঘটনায় আহত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ভর্তি করা হয়েছে।
হামলার ঘটনায় আহত ছাত্রলীগ নেতা শাহনেওয়াজ নিশাদ অভিযোগ করেন, ‘গত শনিবার সকালে আমার কলেজের এক শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়তে আসলে কয়েকজন বখাটে তাকে ইভটিজিং করে। এসময় আমরা বখাটেদের ধাওয়া করলে ঘটনার সূত্রপাত হয়।
এ ঘটনার জেরে রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর ইকবালের অনুগতরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অতর্কিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি পারিবারিক কাজে নারায়নগঞ্জে আছি। যে ঘটনা ঘটেছে এটি একটি ইভটিজিং এর ঘটনা।
ঘটনার সাথে অহেতুক আমাকে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। উল্টো মোবাইল ফোনে ফোন করে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
মিরসরাই বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আবছার বলেন, ‘কলেজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়তে আসতে পারে। তবে ক্যাম্পাসে এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। ক্যাম্পাসের বাহিরে ঘটতে পারে। তবে আমাকে কেউ এ বিষয়ে জানায়নি।
এ বিষয়ে মিরসরাই থানার সেকেন্ড অফিসার (উপ-পরিদর্শক) রাজিব পোদ্দার জানান, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় কয়েকজন আহত হয়েছে। ঘটনার পরপর পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়া ইমতিয়াজ ও সায়মন নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে।
চখ/আর এস