chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

উন্নয়ন নির্ভর করে সরকারের চিন্তার ওপর: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন নির্ভর করে সরকারের চিন্তার ওপর। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন, সবসময় দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথাই চিন্তা করেছেন জাতির পিতা। আমরা সেই পথ অনুসরণ করেছি।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকালে নবনির্মিত রংপুর বিভাগীয় সদর দফতর কমপ্লেক্স ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রংপুর বিভাগীয় সদর দফতর কমপ্লেক্সে মাল্টিপারপাস হলে যুক্ত ছিলেন।

মঙ্গা আর বন্যার সময় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন এলাকায় ছুটে গিয়ে মানুষকে সহযোগিতা করার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘তখন এমন একটা অবস্থা ছিল যে, যাতায়াত ব্যবস্থা বলে কিছু ছিল না, রাস্তাঘাট ছিল না। নদীর পাড় দিয়ে কাঁদামাটি ভেঙে হেঁটে যেতে হয়েছে। একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলে গিয়েছি। গঙ্গাচড়ার নৈহালি থেকে শুরু করে কুড়িগ্রামের চিলমারি কোনো জায়গা বাদ দিইনি। রাজীবপুরে যখন গেছি, তখন সেখানে কিছুই নেই, একটা রিকশাও নেই। এইভাবে সারা বাংলাদেশ কিন্তু ঘুরেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অঞ্চলে প্রতিবছর মঙ্গা হতো। বিশেষ করে চৈত্র এবং কার্তিক মাসে, বছরে দুইবার মঙ্গা লেগেই থাকত। আমরা এই কারণটা খোঁজার চেষ্টা করেছি। কী কারণে এটা হচ্ছে। আমরা দেখেছি মানুষের কোনো কাজ থাকত না। কোনো উৎপাদন থাকত না। মানুষের খাবারের ব্যবস্থা থাকত না। এ ধরনের একটা পরিস্থিতি। কাজেই তখন থেকে আমরা পরিকল্পনা নিই কীভাবে মঙ্গা দূর করব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসি, তখন আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে কিন্তু মঙ্গা ছিল না। আপনারা রংপুরবাসী একটু মনে করে করতে পারেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল, আমরা কিন্তু ১৯৯৮ সাল থেকেই মঙ্গা দূর করে দিয়েছিলাম। ১৯৯৮ সালের বন্যার পর আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়ে। এ সময় এই অঞ্চলে ওই সময়টায় যেন কিছুটা ফসল হয়, আমরা রিসার্চ করে সেটি বের করে উৎপাদন শুরু করি এবং ওই অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারে থাকতে কোনো মঙ্গা ছিল না। দুভার্গ্য যে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে আবার এই অঞ্চলে মঙ্গা শুরু হয়। ২০০৮-এ সরকারে এসে আমরা আবার পদক্ষেপ নিই। রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত ছিল রংপুর। ১৬টা জেলা। আমরা যখন আমাদের দলীয় সম্মেলন করি, তখন আমরা ভাগ করে করে এই সম্মেলনগুরো করেছিলাম ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, এই অঞ্চলগুলোকে আমাদের ছোট ইউনিট করতে হবে। যেন জনগণ সেবাটা পায়। সেজন্য আমরা ২০০৯-এ সরকার গঠন করে ২০১০-এ রংপুর বিভাগ করে দেই।

তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমরা সরকারে আসার পর এই অঞ্চলে আর মঙ্গা দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এখন খাদ্য উদ্বৃত্তির অঞ্চল হয়ে গেছে রংপুর। যেখানে একসময় খাবারের অভাবে মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মারা যেত। কারণ আমার এখনো সেই চিত্র মনে পড়ে। আমি যে মানুষগুলোকে দেখেছি, যখন তারা দাঁড়াত মনে হতো শুধু হাড় আর চামড়া ছাড়া শরীরে কিছু নেই। জীবন্ত কঙ্কাল যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে, এ অবস্থা আমার নিজের চোখে দেখা। কিন্তু আল্লাহর রহমতে এখন আর সেই অবস্থা নেই। সেই অবস্থার পরিববর্তন হয়েছে।’

যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আজকে এই অঞ্চল থেকে দুর্ভিক্ষ তো দূরেই হয়েছে বরং এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আসলে উন্নয়নগুলো নির্ভর করে এক-একটি সরকারের চিন্তার জন্য। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন, সবসময় দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কথাই চিন্তা করেছেন জাতির পিতা; আমরা সেই পথ অনুসরণ করেছি। যার ফলে এ অঞ্চলের উন্নতি হচ্ছে।’

বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন ভূমিহীন থাকবে না এ জন্য প্রশাসনসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার লক্ষ্য হচ্ছে এই দেশে কোনো ভূমিহীন মানুষ থাকবে না, দরকার হলে জমি কিনে ঘর করে দেব।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চেয়েছি এমন একটা জায়গায় এই কমপ্লেক্স ভবনটা করে দেওয়া। যেন সব জেলাগুলোর একটি সেন্টার পয়েন্ট হয়। সেখানে গিয়ে তারা কাজ করতে পারে, সেবাটি নিতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ হয়েছে এবং টাকাও সাশ্রয় হয়েছে। সাধারণত কোনো একটি প্রজেক্ট নিলে পরে টাকা সাশ্রয় হয় না বরং আরও চায়। কিন্তু এখানে প্রায় ২৫ কোটি সাশ্রয় হয়েছে। সেটিও কম কীসের। আমরা তো কখনো বাঁচাতে দেখি না। ২৫ কোটি টাকা সেভ করা হয়েছে সে জন্য ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি, ভবিষ্যতে অন্যান্য কমপ্লেক্সগুলো যারা করবে তারাও যেন এই কথাটা একটু মাথায় রাখে, একটু কমালে পরে আমাদের একটা ধন্যবাদ পাবে তারা।’

উত্তরবঙ্গের তরি-তরকারি তথা সবজি প্রক্রিয়াজাত করে কীভাবে বিদেশে রফতানি করা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও অবহিত করেন।

গ্রামকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত করে যেন গ্রামের মানুষ গ্রামে বসবাস করে নাগরিক সব সুবিধা পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে তার সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বলেও অবহিত করেন।

‘আজকে বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে বলেন,আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি গঠন করে বাংলাদশেকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ করতে চাই, সেটা আমাদের লক্ষ্য। ২০০৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে আমরা যে ঘোষণাগুলো দিয়েছিলাম আল্লাহর রহমতে একে একে তা বাস্তবায়ন করেছি। আজকে বাংলাদেশ হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশ। এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। সে পরিকল্পনা আমি করে দিয়েছি।’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যে, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে। তার জন্য ২০০২১ থেকে ২০৪১ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি এবং এটাও বাস্তবায়ন হবে ইনশাল্লাহ। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ ভবিষ্যতে থামাতে পারবে না।’

নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই কিন্তু রংপুরবাসী এই সব সুযোগ সুবিধাগুলো পেয়েছেন সেটাও বোধহয় ভুললে চলবে না বলেও হাসির ছলে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমি জানি এবার একটু বেশি শীত পড়েছে, সবাই একটু শীতে কষ্ট পাচ্ছেন। আমরা সাধ্যমত সহযোগিতা করেছি। আর যারা বিত্তশালি আছেন তাদেরকে আমরা অনুরোধ করছি, আপনারাও শীতবস্ত্র বিতরণ করতে পারেন। সরকারের পক্ষ থেকে আমরাও ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর