শুষ্ক মৌসুমেই শেষ করতে হবে জলাবদ্ধতার কাজ : মেয়র
চট্টলা ডেস্ক: নগরীর যেকোনো উন্নয়নকাজ করতে হলে চসিকের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। জলাবদ্ধতা নিয়ে যে সংকট, জনদুর্ভোগ এখন বিদ্যমান তা এই শুষ্ক মৌসুমে শেষ করে ফেলার তাগিদ দেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।এছাড়া ১৮টি খালে যে কাজগুলো ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বলে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা অবগত করেছে তা সম্পূর্ণভাবে পানি চলাচলের উপযোগী করতে সকল সহযোগিতা করতে হবে।
রোববার (৯ জানুয়ারি) টাইগারপাসে চসিক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে নগরের জলবদ্ধতা সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।
তিনি বলেন, নগরের প্রকৃতি বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হলো অবৈধভাবে পাহাড় কাটা এবং খাল, নালা-নর্দমায় বর্জ্য ফেলা। লক্ষ্য করা যাচ্ছে কর্ণফুলী নদী যেভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রাম বন্দর সম্পূর্ণভাবে অচল হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে পুরো বাংলাদেশ অচল হয়ে যাওয়া। সুতরাং এখন থেকেই এ ব্যাপারে সর্তকতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া আজ সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য যে ৩৬টি খালগুলোতে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হচ্ছে তার বাইরে যে ২১টি খাল রয়েছে তার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়ে তাতে নতুন প্রকল্প গ্রহণপূর্বক জলাবদ্ধতা সম্পূর্ণ নিরসনে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
নগর প্রধান বলেন, বে-টার্মিনাল নির্মাণের যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে তাতে নগরীর পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। চসিক নগরীতে যে সড়কগুলো নির্মাণ করছে তা দিয়ে ৮-১০ টনের বেশি পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করার উপযোগী নয় তবে বর্তমানে বন্দর কর্তৃপক্ষের ৩০-৪০ টনের গাড়ি চলাচল করছে এতে করে সড়কগুলোতে বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি এ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানান।
রেজাউল করিম বলেন, অতিরিক্ত জলাবদ্ধতাপ্রবণ চকবাজার, বাকলিয়া, শুলকবহর, চান্দগাঁও, বহদ্দারহাটসহ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে এসব জায়গার খালগুলোর উন্নয়নকাজ এই মৌসুমের মধ্যে শেষ করা প্রয়োজন বলে মনে করি। জনদুর্ভোগ লাঘবে যে কাজগুলো করা আবশ্যিক সেগুলো সম্পন্ন করতে সমন্বয়ের প্রয়োজন নেই, যথাযথ কর্তৃপক্ষই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। এক্ষেত্রে বিলম্ব বা দীর্ঘসূত্রতার কোনো অবকাশ নেই।
তিনি জানান ইতিমধ্যে ছোট খাল নালা-নর্দমার পরিচ্ছন্নতার কাজ চসিক শুরু করেছে। তিনি সিডিএ কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প বহির্ভূত খাল, নালাগুলোর তালিকা চসিককে হস্তান্তর করার অনুরোধ জানান।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহুরুল আলম দোভাষ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর সচল রেখে সব উন্নয়নকাজ করতে হবে।কর্ণফুলী রক্ষায় পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরকে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া ছোট যে ড্রেনগুলোর কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে তা চসিককে বুঝে নিতে অনুরোধ জানান। এবং যে সুইসগেটগুলো চউক ইতিমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন করেছে তা পরিচালনার দায়িত্ব চসিককে নেওয়ার নিমিত্তে জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান। আইসিডি স্থাপনে নগরের অন্তত ২০ কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রাখতে বন্দর কর্তৃপক্ষকে সদয় দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানানো হয়।
মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থার প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ আলী বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে নগরের ১৮-২০টি খালের কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হবে। ৪২টি সিলট্রেপ স্থাপনের কাজ চলছে। সব ঝুঁকিপূর্ণ ড্রেনের ওপর স্ল্যাব করা হবে। উন্মুক্ত খালগুলোতে ২ ফুট উচ্চতার রেলিং করা হবে।
তিনি রাজাখালী, রুবি সিমেন্ট, রামপুর ও ত্রিপুরা খালের কাজ এ বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানান।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান খান বলেন, কর্ণফুলী নদীর রক্ষণাবেক্ষণ করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। নদীর একটি ব্যাঙ্ক লাইন থাকে, এই ব্যাঙ্ক লাইন মেনে চলতে না পারলে নদী ভরাট হয়ে যায় এবং তার নিজস্ব গতিপথ হারিয়ে ফেলে। কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে নগরের ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ খালের সংযোগ রয়েছে। এই খালগুলো দিয়ে বর্জ্য পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বে-টার্মিনাল নির্মাণের আগে সব সেবা সংস্থার মতামত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শিবেন্দু খাস্তগীর বলেন, বে-টার্মিনাল নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশনে যাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। পাহাড় কাটার কারণে কর্ণফুলী ও হালদা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ হাজার ৬২০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। তিনি এ কাজগুলো বাস্তবায়নে চসিকসহ সেবা সংস্থাগুলোর সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়ঃনিষ্কাশন প্রকল্প ও রোড কাটিংয়ের কাজ সমন্বয় করতে একজন প্রকৌশলীকে লিয়াজো করার দায়িত্ব অর্পণ করা হচ্ছে।
সিএমপি’র উপ পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. তারেক আহম্মেদ বলেন, উন্নয়নকাজের জন্য রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ওয়াসা যে রাস্তাগুলো কাটে সে বিষয়ে পুলিশকে অবগত করা হয় না বলে যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনতে বেগ পেতে হয়। তিনি রাস্তা কাটার বিষয়ে চসিক যে অনুমতিপত্র দিয়ে থাকে তার একটি অনুলিপি ট্রাফিক বিভাগ বরাবর পাঠাতে অনুরোধ জানান।
চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, চউক সচিব মো. আনোয়ার পাশা, প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামছ, বন্দরের সিনিয়র হাইড্রোগ্রাফার মো. নাছির উদ্দিন, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি রায়হান মাহবুব, পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হক।
জেএইচ/এমকে/চখ