ইসি গঠনে জাতীয় পার্টির তিন প্রস্তাব সংলাপে!
রাজনীতি ডেস্ক : নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে সংবিধানের ধারা অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)।
নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে সংলাপে অংশ নিয়ে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে সংসদে প্রধান বিরোধী দল। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে আইন প্রণয়ন সম্ভব না হলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে ইসি গঠন চায় দলটি।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে বঙ্গভবনে প্রবেশ করে জাতীয় পার্টির (জাপা) ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল। সংলাপ শেষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে জাপা। নির্বাচন কমিশন গঠনে আমরা আইন করতে বলেছি।
আইন না মানলে কমিশনের সাজার বিধান থাকতে হবে নতুন আইনে। প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতি অর্ডিন্যান্স জারি করতে পারেন। সরকার চাইলে জাতীয় পার্টি সহায়তা করতে পারে।
তিনি আরও জানান, সার্চ কমিটির জন্য চার থেকে পাঁচজনের নাম দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে।
প্রস্তাবগুলো হলো- নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রনয়ণের প্রস্তাব। সংবিধানের সপ্তম ভাগে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে উল্লেখ আছে।
এখানে অনুচ্ছেদ ১১৮ (১) উল্লেখ আছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চার জন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোন আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’
জাপার প্রস্তাবে আরও বলা হয়, সংবিধানে আইনের দ্বারা নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও অদ্যাবধি নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষে কোন আইন প্রণীত হয়নি।
আমরা মনে করি, আগামীতে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে তার জন্য উপরোক্ত সংবিধানের বিধান অনুসরণে একটি আইন করা দরকার।
আইনের উদ্দেশ্যে হবে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষে কমিশন গঠন ও সে অনুযায়ী যোগ্য এবং মোটামুটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের বাছাই করার মাপকাঠি, পন্থা সুনির্দিষ্ট করা।
জাতীয় পার্টির প্রস্তাবগুলোয় আরও উল্লেখ আছে, সংবিধানের সপ্তম ভাগ; নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ অনুচ্ছেদে বলা আছে ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপালনে সহায়তা করা সকল নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’
কীভাবে এটি প্রযোজ্য হবে বা কার্যকর করা যাবে তার বিস্তারিত বর্ণনা থাকা আবশ্যক। সে কারণে এ বিষয়ে একটি আইন থাকা প্রয়োজন। যে আইনে এটি না করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে ও কী ধরনের শাস্তি হবে তা সুস্পষ্টভাবে বলা থাকবে।
সময় স্বল্পতার কারণে যদি সংসদে আইনগুলো প্রণয়ন সম্ভব না হয়, তাহলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে এগুলো বলবত করতে পারেন।
যদি কোন কারণে উক্ত অধ্যাদেশ করা সম্ভব না হয় এবং পূর্বের ন্যায় সার্চ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়; সেক্ষেত্রে সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য জাপার পক্ষ হতে কয়েকজনের নাম প্রস্তাব করা হয়।
যদি সার্চ কমিটি গঠন না করে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মনোনয়ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির পক্ষ হতে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনোনীত করার জন্য একজনের নাম সুপারিশ করা হয়।
২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্বভার গ্রহণ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন। সে হিসাবে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে এই কমিশনের মেয়াদ।
এর আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়েই সোমবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্রথম দিনের সংলাপে অংশ নেয় জাপা।
নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির এ সংলাপ। সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত কমিশন নিরপেক্ষ হতে পারে না দাবি করে বিএনপি বলছে, এ সংলাপে অংশ নেবে না তারা।
উল্লেখ্য, সংবিধানের ১১৮ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত আইনের বিধানা বলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ করবেন।
কিন্তু গত ৫০ বছরেও হয়নি নির্বাচন কমিশন গঠনের সেই আইন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে শেষ হচ্ছে বর্তমান কমিশনের মেয়াদ। তাই নতুন কমিশন গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করছেন রাষ্ট্রপতি।
এ পর্যন্ত গঠিত ১২টি নির্বাচন কমিশনের মধ্যে শেষ দুটি কমিশন রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করেন।
চখ/আর এস