আমি শুধু ছেলের শরীরটাই চাই!
নিজস্ব প্রতিবেদক: সোমবার (৬ ডিসেম্বর) বন্ধু রাকিবের সঙ্গে ঘুরতে বের হয়েছিলে কামাল উদ্দীন (১০)। ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে ষোলশহর শপিং কমপ্লেক্সের পাশের ফুটপাতের নালায় ভাসমান ককসিটে খেলা করছিল। ওই সময় নালায় হলুদ রঙের একটি খেলনা দেখতে পেয়ে পানিতে নেমে পড়েন দুজন। তবে বৃষ্টিতে পানির স্রোত বেড়ে যাওয়ায় দুজন নিচে তলিয়ে যায়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে রাকিব দেয়ালে আটকে পড়ে উঠে আসতে পারলেও, তলিয়ে যায় কামাল।
অনেক খুঁজেও সে বন্ধুর খোঁজ পায়নি। নালার পাশে বেশ কিছুক্ষণ কামালের জন্য অপেক্ষার পর সে বাসায় চলে যায়। ভয়ে সে বিষয়টি কাউকে জানায়নি। তবে এক প্রত্যক্ষদর্শী সন্ধ্যায় কামালের বাবা মো. আলী কাউসারকে ছেলে নালায় পড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানান। এরপর ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন তিনি।
এসব তথ্যগুলো মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টলার খবরকে জানাচ্ছিলেন নালায় তলিয়ে যাওয়া শিশু কামালের বন্ধু মো. রাকিব।
ছেলেকে হারানোর পর দিনমজুর কাউসার বেশ কিছুক্ষণ নালায় নেমে খোঁজ করেন। নালার ময়লা পরিস্কার করেন। কিন্তু খোঁজ না পেয়ে তিনি এক পুলিশ সদস্যকে জানান। তাতেও কাজ না হলেও মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) তিনি বেশ কয়েকজনের কাছে ধর্ণা দেন। পরে এক গণমাধ্যমকর্মীর মারফতে ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চালায় ফায়ার সার্ভিস।
ছেলের ছবি হাতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন কামালের বাবা। তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ষোলশহরের পাশের বস্তিতে থাকে। একটি এনজিও অধীনে কামাল বিদ্যুতের কাজ শিখতো।
বাবা বাবা করে খুঁজলাম: কান্নাজড়িত কণ্ঠে মো. আলী কাউসারকে চট্টলার খবরকে বলেন, ছোট্ট জায়গা হলে পেতাম। এত পানি কোথায় খুঁজে পাব। ময়লা তুললাম ও ফেলাম না। সকালে হাউজিং সোসাইটির ওইদিকে গেলো না কিনা খুঁজলাম। বাবা বাবা বলে খুঁজলাম, বাবা আমার আসে নাই। পুলিশকে বলছি, পুলিশ বলছে তুই খুঁজে বের কর। আমি আমার ছেলের শরীরটাই চাই। তার মা ও ফুফুদেও বুঝ দিতে পারব।
ব্যারিকেড না থাকায় ঘটনা বাড়ছে : আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মো. ফরিদ উদ্দীন চট্টলার খবরকে বলেন, দুইটা ছেলে ময়লা খুঁজতে গিয়ে একসাথে ড্রেনে নামে। একজন উঠতে পারলেও, আরেকজন ময়লার কারণে উঠতে পারে নাই। এমন খবর পেয়ে আমাদের ডুবুরি টিম অভিযান শুরু করেছে। এখানে বেশি ময়লা। আমরা সিটি করপোরেশনকে জানিয়েছি।
এক প্রশ্নের জবাবে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, এসব নালার পাশে কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় ঘটনা বেড়ে চলছে। এর কারণে সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমদের মতো একই ঘটনা ঘটেছে। যার কারণে ছেলেরা ইচ্ছে করে নীচে নেমে গেছে। আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি থাকবে না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাব কামালকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে।।
উল্লেখ্য, ২৭ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদে নালায় পড়ে শেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া নামে, বিদ্যালয় পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এর আগে গত ২৫ আগস্ট নগরের মুরাদপুর এলাকায় চশমা খালে পড়ে সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ নিখোঁজ জন। এখনও তার হদিস মেলেনি।
আরকে/এমকে/চখ