chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সুমনাকে আর সুমন ডাকবেনা বাবা মনিরুল!

ঝাউতলায় বাস-সিএনজি-ট্রেনের ত্রিমুখী সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: টিউশন শেষে বাসায় এসে বন্ধু-সহপাঠিদের সঙ্গে মুঠোফোনে পড়াশোনা আর স্কুলের আড্ডা নিয়েই খোশগল্প করতেন ফাতেমা খাতুন সুমনা। কখনও সুমনা ফোন করে তাদের খোঁজ নিতেন, কখনও আবার বন্ধুরা ফোন করতেন সুমনাকে।

আজও সুমনার মুঠোফোনে কল এসেছে, কথাও বলেছেন সহপাঠীদের সঙ্গে। তবে খোশগল্প বা আড্ডায় নয়, পুরো সময়ে অনবরত কান্না করেছেন। মুঠোফোনে কথা বলার এক পর্যায়ে সে বলছিল, আমার আব্বুতো চলি গেছে, তোমরা দোয়া করিও। এরপরও আর কোনা কথা বলার শক্তি ছিল না তার। অনবরত কান্নাই করে গিয়েছেন। পাশে মা আর বোনের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠে হাসপাতালের পরিবেশ।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) নগরের খুলশী থানার ঝাউতলা রেলক্রসিং এলাকায় ডেমু ট্রেন ও সিএনজি অটোরিকশার ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে মারা যান দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য মনিরুল ইসলাম (৪৯)। এ ঘটনায় পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থী সাতরাজ উদ্দীন শাহিন (২০) ও ডালিয়ার কনস্ট্রাকশনের সার্ভিসিং ইঞ্জিনিয়ার বাহা উদ্দীন সোহাগ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ছয় জন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভেতরে বসে ছিলেন সুমনা। তাকে সান্তনা দিতে এসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদেছেন দায়িত্বরত মহিলা পুলিশ সদস্যরাও।
সুমনাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানায় হলেও বাবার চাকরির সুবাধে চট্টগ্রামে থাকতেন তারা। সে হিসেবে সুমনার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের বায়োজিদ থানার চন্দন নগর আবাসিক এলাকায়। দুই মেয়ে ও এক ছেলে মনিরুলের।
বড় মেয়ে মাহমুদা ফেরদৌস লিমার বিয়ে হয়েছে। ছোট ছেলে পড়েছে চতুর্থ শ্রেণিতে। মেজো মেয়ে বাসার পাশেই একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
সুমনা চট্টলার খবরকে বলেন, সকালে টিউশন পড়তে যাওয়ার আগে আমি ফ্রেশ হতে বাথরুমে যেতে চেয়েছিলাম। তখন বড় আপু বাথরুমে ছিল। আব্বু আমাকে ডেকে বলেছিল, সুমন তাড়াতাড়ি রেড়ি হয়ে টিউশনে চলে যাও। আমি তাড়াতাড়ি করে বাসা থেবে বের হয়ে যাই। আব্বুর সাথে আর কোনা কথা হয়নি। এরপর কি হয়েছে জানি না।

এক প্রশ্নের উত্তরে সুমনার কান্না যেনো আরও বেড়ে যায়। কান্না সংরবরণ করে তিনি বলেন, আমার নাম সুমনার পরও আব্বু আমাকে আদর করে সুমন বলে ডাকতেন। আব্বু আমাকে সবচেয়ে বেশি আদর করতেন। ছোট বেলায় মসজিদে নিয়ে যেতেন। কিছু আবদার করলে না করতেন না। ট্রেন যাওয়া সময় সিগন্যাল দেয়নি। আব্বু সিএনজিকে বাঁচাতে গিয়ে মারা গেছেন। সিগন্যাল দিলে আজ আব্বু মারা যেতো না। আমাদের কী হবে?

এই ঘটনায় পর চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে পুলিশ। তদন্তে কি উঠে আসবে নেপথ্যের কথা? যদিও আসে, তবু সহসায় থামবেনা এ পরিবারের আহাজারি।

আরকে/এমকে/চখ

এই বিভাগের আরও খবর