chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

আবহাওয়ার মিশ্র আচরণে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ

৪-১২ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক

রকিব কামাল: তিন মাস ছয় দিনের কন্যা শিশুকে নিয়ে গত ১০ দিন আগে মা তাসনিম আক্তার এসেছিলেন আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত জ্বরে ভর্তির পর শিশুটিকে ছয় দিন আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থা কিছুটা উন্নত হলে দুদিন আগে শিশুটিকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।

এরপরও শিশুটির শারীরিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত মা তাসনিম আক্তার ও বাবা মো. লিটন। শনিবার (২০ নভেম্বর) দুপুরে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে শয্যার পাশে দেখা মিলে ওই দম্পতিকে। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার পদুয়া ইউনিয়নের পদুয়া মৌলভীপাড়া গ্রামের তাদের বসবাস। দুজনের চোখ-মুখে চিন্তার চাপ।

শিশুটির মা. তাসনিম আক্তার চট্টলার খবরকে বলেন, হঠাৎ করেই মেয়েটার শ্বাসকষ্ট আর বেড়ে যায়। বাড়ির কাছের দোকান থেকে ওষুধ খাওয়ানোর পর ভালো হয়নি। এখানে ভর্তির পর ডাক্তার নিউমোনিয়া হয়েছে। আইসিউতে রাখার পর এখন ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে। কবে ভালো হবে জানি না, ডাক্তার বলছে ধৈর্য ধরতে, আরও সময় দিতে।

হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাসমিন আক্তারের মতো অনেকেই ঠাণ্ডাজনিত রোগের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভিড় করছে। দিনে গরম, সন্ধ্যায় ও রাতে মৃদু শীতের আমেজ। এই মৌসুমে আবহাওয়ার মিশ্র এই আচরণে বড়দের সমস্যা না হলেও, শিশুদের নিয়ে বিপত্তিতে পড়েছেন অভিভাবকরা। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত রোগের সঙ্গে গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালে আসছেন ডেঙ্গু রোগীরা। এসব রোগ চাপ সামলাতে গিয়ে রীতিমিতো হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।

শিশু ওয়ার্ডের এক স্বাস্থ্যকর্মী চট্টলার খবরকে বলেন, গত কয়েকদিন হাসপাতালেই নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছেন। পাশাপশি ডেঙ্গু রোগীও রয়েছে এখানে।

চট্টগ্রাম মা ওশিশু হাসপাতালের নবজাতক ও শিশুরোগ চিকিৎসক ডা. রিয়াজ উদ্দীন চট্টলার খবরকে বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৪ থেকে ১২ বছর বয়সী রোগীর সংখ্যা বেশি। আইসিইউতে ভর্তির পর কয়েকজন শিশু শীতকালীন রোগে মারা গেছেন বলেও জানালেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, শিশু ওয়ার্ড ছাড়াও হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। ডায়রিয়ার রোগীর ক্ষেত্রে গাইড লাইন অনুসরণের পরও অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে অসেক রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না। এখনও আইসিইউতে ১০ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

ডা. রিয়াজ বলেন, শীতকালে মৌসুমী আবহাওয়ার কারণে অনেক শিশু ঠাণ্ডাজনিত রোগী ভুগেন। এসময় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের বাড়তি যত্ন নিতে হবে। অনেক মা বাচ্চাদের ‍সুইয়ে বুকের দুধ পান করান। এতে শিশুদের শ্বাসনালীতে আঘাত করে। অনেক সময় বুকের দুধ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিছানায় শুয়ে রাখেন। অতিরিক্ত দুধ পান করান। এতে করে শিশু বমি করে দেয়। অবশ্যই শিশুদের বসিয়ে মাথা ও পায়ের ব্যালেন্স করে দুধ পান করাতে হবে।

এদিকে, মৌসুমী ভাইরাল ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালেও রোগীর চাপ বেড়েছে। এক্ষেত্রে তিনদিনের বেশি জ্বর হলে চিকিৎসকদের শরনাপন্ন হওয়ায় আহ্ববান জানিয়েছেন চমেকের শিশু পেডিয়াট্রিক ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. বাদল।

তিনি বলেন, প্রতিদিন অসংখ্য রোগী আসছে। হাসপাতালে বর্হিবিভাগে দৈনিক ১৭০ থেকে ১৮০ জন রোগী ভাইরাল ফ্লু নিয়ে আসা রোগী দেখছি। মৌসুমি আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে সন্ধ্যায় গরম হলেও শেষ রাতে মৃদু শীত অনুভূত হচ্ছে। যার কারণে সন্ধ্যায় চালানো ফ্যান শেষ রাতে বন্ধ না করায় বাচ্চারা ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া ধূলাবালি, অতিরিক্ত এসির বাতাস, বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ ঠিকভাবে পরিষ্কার না রাখায় নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

এই চিকৎসক আরও বলেন, অন্যান্য বছরে অক্টোবরে ডেঙ্গুর মাত্রা কমে আসলেও নভেম্বর মাঝামাঝি সময়ে এসেও ডেঙ্গু বিস্তার করছে। প্রাথমিক অবস্থায় শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়লে ভাইরাল ফ্লু নাকি ডেঙ্গু বুঝা যায় না। অবশ্যই তিন দিনের মধ্যে জ্বরের মাত্রা কমে না আসলে, গায়ে লালচে দাগ ভাব দেখা দিলে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। এ সময় প্রচুর পরিমাণে তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। জ্বর হলে শরীর মুছে দিতে হবে। ধুলা বালি থেকে দূরে রাখতে হবে। ডেঙ্গুর প্রকোপ কমিয়ে আনতে মশক নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে।

আরকে/এমকে/চখ

এই বিভাগের আরও খবর