রড শিল্পে অস্থিরতা, চাকরী হারাতে পারে লাখো শ্রমিক !
ডেস্ক নিউজ: দেশের নির্মাণ শিল্পের অন্যতম অনুষঙ্গ রড। রড উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত প্রধান কাঁচামাল গলনশীল স্ক্র্যাপ (মেল্টিং স্ক্র্যাপ)। আর্ন্তজাতিক বাজারে রডের কাঁচামালের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও দেশের উৎপাদকেরাও দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে রডের দাম।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখন শীর্ষস্থানীয় ৫ ব্র্যান্ডের রড প্রতি টন ৭৭ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও, তা আগামী এক দু মাসের মধ্যে লাখ টাকায় পৌঁছানোর শঙ্কা রয়েছে। করোনার ভয়াবহতার কারণে গত ২০২০ সালে অক্টোবর -নভেম্বর মাসের
প্রথম দিকে রডের দাম বাড়ে। কিন্তু করোনা সংক্রমণ কমে গেলেও ভরা মৌসুম শুরুতে উল্টো রডের দাম না কমে বাড়ছে। এতে নির্মাণ শিল্পে কাঠছে না স্থবিরতা।
বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যদের বাড়ি নির্মাণ অনেকটা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। শিল্পের সঙ্গে জড়িত লাখ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে এর সামগ্রিক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতিতেও।
ইস্পাত খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, এই শিল্প আমদানি নির্ভর তাই এসব স্ক্র্যাপ আমদানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ
পর্যন্ত স্ক্র্যাপ আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি করতে হয়। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে এসব দেশে সরবরাহ যেমন কমেছে তেমনি তাদের নিজস্ব চাহিদাও বেড়েছে। তাই বিশ্ববাজারে আগের সব রেকর্ড ভেঙ্গে রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বাড়ছে। যার প্রভাবে দেশের বাজারে
নির্মাণ খাতের অন্যতম অনুসঙ্গ রডের দামও বেড়েছে । এছাড়া কাঁচামালের পাশাপাশি এখন ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ায় এবং জ্বালানির খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেও রডের দামে প্রভাব পড়বে।
বাজার ঘুরে জানা যায়, চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে এখন শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি ব্র্যান্ডের রড প্রতি টন ৭৭ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত মাসের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে ছয়-সাত হাজার টাকা বেশি। গত বছরের এই সময়ে কোম্পানিভেদে প্রতি টন রড বিক্রি হয়েছিল সাড়ে ৫২ থেকে সাড়ে ৫৫ হাজার টাকা।
সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে রডের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বিভাগ ও সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে গত বছরের নভেম্বরে প্রতি টন গলনশীল ভারি লোহার টুকরার (এইচএমএস) দাম ছিল ৩০৭ ডলার। এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ৫৭৫ ডলারে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে টনপ্রতি কাঁচামালের দাম বেড়েছে
২৬৮ ডলার বা ৮৭ শতাংশ। জাহাজভাঙা কারখানায় বর্তমানে প্রতি টন পুরোনো লোহার টুকরা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ হাজার টাকায়।
উদ্যোক্তাদের মতে, কাস্টম ডিউটি, আমদানি অগ্রিম আয়কর ও ভ্যাট না কমালে রড তৈরির কাঁচামালের সঙ্কট দেখা দিবে। পাশাপাশি রডের মূল্য অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে বাজারে প্রতি টন ৫০০/৬০ গ্রেডের রড ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত ৬ মাস আগেও যা ছিল ৬০ হাজার
থেকে ৬৫ হাজার টাকার মধ্যে। দাম বাড়লে নির্মাণ খাত স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
নচ/চখ