chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ভালো থাকুক প্রতিটি প্রাণ ও ধূলিকণা

৫৬’এ শাটল ট্রেনের চবি

নুর নবী রবিন: প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছর পার করে আজ ৫৬ বছরে পা রাখলো শাটল ট্রেনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। জন্মদিনে কী ভাবছে বর্তমান শিক্ষার্থীরা? তাদের সে সব প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থীর মতামত গ্রহন করেছে চট্টলার খবর।
জান্নাতুল ফেরদৌস, সমাজতত্ত্ব বিভাগ: আমার প্রাণের ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার পথচলার ৬ বছর পূর্ণ হলো মাস দুয়েক আগে, যদিও চবির খুব কাছে আমার বাড়ি হওয়ায় অনেক আগে থেকেই আমি পরিচিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে। আমি ছিলাম বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী আর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর স্বপ্ন কখনোই ছিলনা সমাজতত্ত¡ পড়ার। আবার এই বিষয় পড়তে পারব কিনা সেটি নিয়েও আমি শঙ্কিত ছিলাম। কিš‘ আমি পেরেছি, ভয়কে আমি জয় করতে পেরেছি। সমাজতত্ত্ব আমি পড়তে পেরেছি ও এখনও পড়ছি। আর এই পারার পেছনে ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ ও আমার সহপাঠীরা, যাদেরকে আমি পেয়েছি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারার সুবাদে। ধন্যবাদ চবি, আমার মতো লাখো শিক্ষার্থীকে আশার আলো দেখানোর জন্য। তোমার ছায়ায় আশ্রয় পেয়ে আমি ধন্য, তোমার রূপলাবণ্যে আমি মুগ্ধ।
এলিনা আকতার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আমার কাছে একটি আবেগ আর অনুভূতির নাম। ৬ বছর আগে আমার নামের পাশেও যুক্ত হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। কেউ জিজ্ঞেস করলেও গর্ব করে বলতাম, আমিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। ভর্তির পর ট্রেনে আসা যাওয়া নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ৬ বছর জীবনের খুবই কম। তার অবশ্য কারণও আছে। ক্লাস করে ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় বন্ধুবান্ধবরা সবাই মিলে শাটলে উঠি। স্বাভাবিকভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭হাজার ৮৩৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য শাটল পর্যাপ্ত নয়। তাই ধাক্কাধাক্কি করে সিট ধরতে হতো তখন। সেদিন সিট না পেয়ে আমি আর এক বান্ধবী মিলে বসলাম শাটল ট্রেনের দরজায়। ভালোই লাগছিলো ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পার হওয়ার পর ট্রেন যখন একটু স্পিড হচ্ছিল, বাইরে থেকে কে জানি আমার ব্যাগ টান দিলো। যদি ও ব্যাগটা আমার হাতের মধ্যেই ছিল বলে সেবার বেঁচে গেলাম। এরপর থেকে ট্রেনে আসা যাওয়া খুব একটা করা হয়ে উঠে না। তার উপর গ্রীষ্মকালে তীব্র গাদাগাদি করে দাঁড়ানো, ঝুলে ঝুলে আসা যাওয়া আমার দ্বারা হয়ে উঠতো না। এর পর থেকে বাস ই শেষ ভরসা। যদি আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করে ৬ বছরে আমার প্রাপ্তি কতটুকু পূর্তা পেয়েছে? উত্তরে আমি বলব শতভাগ মোটেও নই। যদি যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে বলে তাহলে সবার আগে আসে শাটল ট্রেন মেরামত, বগিবৃদ্ধি আর নতুন শাটল চালু করা। কেননা এত বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য শাটলে সিট পর্যাপ্ত না। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য টিচারদের মতো স্টুডেন্ট বাসও চালু করা যেতে পারে। আর ট্রেনের পাথর নিক্ষেপ, ব্যাগ টান নিয়ে নিজে সচেতন থাকা, ট্রেনের দরজা আর ট্রেনের উপরে না উঠা। এত কিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যেন আমার কাছে এক স্বপ্নে বাস। আই ই আর আমার ভালোবাসার জায়গা। স্বপ্ন দেখি এসব সমস্যা কাটিয়ে আই ই আর ও একসময় সবার পছন্দের শীর্ষে থাকবে। মানুষ হাসিখুশি আই ই আরে ভর্তি হবে, অন্যদেরও ভর্তি হতে উৎসাহিত করবে। এসব না পাওয়ার কষ্ট ও আমাদের ত্যাগকে তখন হাসিমুখে স্মৃতিতে জায়গা দিবে , ইনশাআল্লাহ।

মাহাবুবুল মাওলা, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান: স্বপ্ন ছোঁয়ার উদ্যম সেদিন-ই শুরু হয়েছিল যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে আমার পদচারণা শুরু হয়েছিল। সেদিন জন্মসূত্রে পাওয়া একটি পরিবারের পর আরেকটি পরিবার পেয়েছিলাম। যে পরিবার আমাকে সযত্নে আগলে রেখেছে এ কটি বছর। ২১০০ একরের এ ভূমি যেন আমার মায়ের আঁচলসম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি শিখিয়েছে জীবন সম্পর্কিত অনেককিছু। তাই ভালোবেসে প্রিয় বিদ্যাপীঠকে বলি আমার ও আমার প্রথম পরিবারের স্বপ্নের ঠিকানা৷ প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে এ ক্যাম্পাসে আমার বিচরণ। আজ অবধি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি প্রত্যাশার চেয়ে বেশি পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শিখিয়েছে কীভাবে ভালোবাসতে হয়, কীভাবে সবার সাথে মানিয়ে নিতে হয়৷ যদি কেউ প্রশ্ন করে জীবনে কী পেয়েছি?- তাহলে শুরুতেই বলবো চবির মতো একটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছি। শুভ জন্মদিন শাটলের চবি।

নুজহাত তাবাসসুম তুরী, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা: গৌরব আর ঐতিহ্যের ৫৫ বছর পেরিয়ে ৫৬তে পা দিলো চিরসবুজ চবি। বর্তমান একজন শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে আমার ভাবনা হল, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শতভাগ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা। সুষ্ঠু পরিবেশ গড়ে তুলতে সুস্থ রাজনীতির চর্চা, খেলাধুলা, মুক্তচিন্তা ও সাংস্কৃতিক চর্চার পাশাপাশি গবেষণা ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত চিন্তার অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। যেখানে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে মনোজগতের উৎকর্ষ সাধিত হয়।

ইনসান আলী, মার্কেটিং বিভাগ: পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম যে দিকটি আমার হৃদয়ে আছড় কেটেছে তা হলো এর অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ১৯৬৬ সালে যাত্রা শুরু করা এ বিদ্যপিঠটির মুক্তিযুদ্ধে ছিলো সক্রিয় অবদান। দেশবরেণ্য বহু খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বের প্রিয় ক্যাম্পাস এ চবি। শিক্ষাঙ্গনের আয়তনের দিক দিয়ে সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে উল্লেখ করার মতো নানা দিক। একমাত্র চবির রয়েছে নিজস্ব শাটল ব্যবস্থা। ক্যাম্পাসে খ্যাতনামা শিল্পীদের নজরকাড়া স্থাপত্যকর্ম গুলো ধারণ করে আছে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এখানে রয়েছে দেশের তৃতীয় সর্ববৃহৎ লাইব্রেরি। যেখানে রয়েছে দেশী-বিদেশী প্রায় দুই লক্ষাধিক বইয়ের সংগ্রহশালা। চবির যাদুঘরে রয়েছে ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি ও প্রত্ত্বতাত্বিক নিদর্শনসমূহ। সব মিলিয়ে অনন্য যৌবনা চবির একজন শিক্ষার্থীর জন্য হতে পারাটা আনন্দ ও গর্বের। সবশেষে বলব, সেশনজটজনিত কিছু সমস্যা কয়েকটা বিভাগে যদিও আজও রয়ে গেছে যা কাটিয়ে উঠতে পারলে চবি একদিন হয়ে উঠবে দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ। আর এ দিনে একটাই প্রত্যাশা, ভাল থাকুক চবির সাথে জড়িয়ে থাকা প্রতিটি প্রাণ ও ধূলিকণা।

এনএনআর/এমকে/চখ

এই বিভাগের আরও খবর