গৌরবের ৫৬ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
নিজস্ব প্রতিবেদক : পাহাড়ঘেরা চির সবুজ ক্যাম্পাসের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর যাত্রা শুরুর পর ৫৬ বছরে পা রাখল দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। এই দীর্ঘ সময়ে নানা অর্জন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদানের মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে ‘শাটল ট্রেনের’ ক্যাম্পাসটি।
দিবসটি উদযাপনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সেজেছে বর্ণিল সাজে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও স্থাপনাগুলোতে করা হয়েছে আলোকসজ্জা। সাবেক ও বর্তমানদের নিয়ে উদযাপনে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে আনন্দ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে দিবসের কার্যক্রম। জারুলতলায় হচ্ছে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেক কাটার পর সাড়ে ১১টায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহীবুল আজিজ। দুপুর ১২টায় আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণা এবং বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠটি অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হাটহাজারী উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি ও সমতল ভূমির ওপর। ২ হাজার ১০০ একরের ক্যাম্পাসটি আয়তনে দেশের সর্ববৃহৎ। দেশের চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেও একটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৬৬ সালে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি ও ইতিহাস বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে ৫২টি বিভাগ, ৬টি ইনস্টিটিউট, ৫টি গবেষণা কেন্দ্র, ১৩টি হল, ৯২০ জন শিক্ষক এবং প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চলছে এখানে।
দেশে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিত আরেকটি কারণে, শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চলাচল করা শাটল ট্রেন। শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় ১৯৮০ সালে চালু হয় শাটল ট্রেন। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫ হাজার শিক্ষার্থী এতে যাওয়া-আসা করেন।
মুক্তিযুদ্ধেও অসামান্য অবদান রেখেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, স্বাধীনতার সংগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ১৯৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনেও ছিল তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ।
মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থী, একজন শিক্ষক ও তিনজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেনকে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে স্থাপিত স্মরণ স্মৃতিস্তম্ভে রয়েছে সাত মুক্তিযোদ্ধার ছবি ও পরিচয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে একটি। এখানে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ বিরল বই, জার্নাল, অডিও-ভিজ্যুয়াল উপাদান, পাণ্ডুলিপি এবং অন্ধদের জন্য ব্রেইল।
দেশে একমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই রয়েছে তিনটি জাদুঘর। ১৯৭৩ সালে মধ্যযুগের চারটি কামান নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে রয়েছে প্রাগৈতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গ্যালারি, ভাস্কর্য গ্যালারি, ইসলামিক আর্ট গ্যালারি, লোকশিল্প গ্যালারি এবং সমসাময়িক আর্ট গ্যালারি।
এ ছাড়া রয়েছে প্রাণিবিদ্যা জাদুঘর ও সমুদ্র সম্পদ জাদুঘর। তার মধ্যে প্রাণিবিদ্যা জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে প্রায় ৫৪০টি নমুনা।
আর হাঙ্গর থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক মাছ, আজব বাণাকেল, অক্টোপাস, শামুক, বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ অসংখ্য বিস্ময়কর জীববৈচিত্র্য নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে চবির সমুদ্রবিজ্ঞান জাদুঘর।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটি জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিক দিয়েও অনন্য। এখানে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন, হেলিপ্যাড, কলা অনুষদের পেছনের ঝরনা, ঝুলন্ত সেতু, চালন্দা গিরিপথ, জীববিজ্ঞান অনুষদ পুকুর, প্যাগোডা, স্লুইচ গেট, ভিসি হিল, টেলিটক হিল, হতাশার মোড়, দোলা সরণি, ফরেস্ট্রি ও বিশাল সেন্ট্রাল ফিল্ড।
জীববৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে মায়া হরিণ, শজারু, নানা রঙের পাখি, বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ নানা প্রাণী।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা অনেক ওপরে উঠাতে চাই, এটা আমাদের স্বপ্ন ও পরিকল্পনার অংশ। সেটার জন্য সবার সহযোগিতা, সময় ও অনুকূল পরিবেশের দরকার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে প্রত্যাশা, সবার সহযোগিতা নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব।
এসএএস/এমআই