সীতাকুণ্ড, মীরসরাই ও ফটিকছড়িতে ইউপি চেয়ারম্যান হলেন যারা
নিজস্ব প্রতিবেদক : কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় ধাপে গতকাল চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ড-মীরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলায় ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের ৩১ জন এবং স্বতন্ত্র ৫জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এরমধ্যে গতকাল সরাসরি ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সীতাকুণ্ডে আওয়ামী লীগের তিনজন, মীরসরাইয়ে আওয়ামী লীগের তিনজন এবং ফটিকছড়িতে ১১ (আওয়ামী লীগের ৬ জন ও স্বতন্ত্র ৫জন) জন।
নির্বাচনের আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মীরসরাইয়ে আওয়ামী লীগের ১৩ জন, সীতাকুণ্ডে আওয়ামী লীগের ৫জন এবং ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের ১ জন।
ফটিকছড়ি উপজেলা : ফটিকছড়ির ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে বৃহস্পতিবার ১২টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হয়েছে ১১ ইউনিয়নে। আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বর্তমান চেয়ারম্যান ওহিদুল আলম।
লেলাং ও বখতপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচন হাই কোর্ট স্থগিত করায় এই দুই ইউনিয়নে মেম্বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাতে এই ১১ ইউনিয়নের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের ৬ জন এবং স্বতন্ত্র ৫জন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন এবং এক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১২টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ফটিকছড়ির বাগান বাজার ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী প্রার্থী) ডা. শাহাদাত হোসেন সাজু ৯ হাজার ৯ শত ৯৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. রুস্তম আলী পেয়েছেন ৬ হাজার ৫ শত ৯৪ ভোট।
দাতঁমারা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান জানে আলম ১০ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী প্রার্থী) নুরুল আলম পেয়েছেন ৯ হাজার ৫৯১ ভোট। নারায়ণহাট ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী (জাসদ নেতা) আবু জাফর মাহামুদ সিকদার ৮ হাজার ৫৭৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. হারুন রশীদ পেয়েছেন ৬ হাজার ৯৬২ ভোট।
হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী ৭ হাজার ৩৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জুলফিকার আলী ভুট্টো পেয়েছেন ৪ হাজার ৯০৬ ভোট।
পাইন্দং ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম ছরওয়ার হোসেন স্বপন পেয়েছেন ৪হাজার ৫৮১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহ আলম সিকদার পেয়েছেন ২ হাজার ৬৪৩ ভোট।
কাঞ্চন নগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কাজী মোহাম্মদ দিদারুল আলম ৬ হাজার ৯৫০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রশীদ উদ্দীন চৌধুরী কাতেব পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৮৭ ভোট।
সুন্দরপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ চৌধুরী ৭ হাজার ৮৩৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. শহীদুল আজম পেয়েছেন ৪ হাজার ১৪২ ভোট।
রোসাংগীরি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সোয়েব আল সালেহীন ৪ হাজার ৪১৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
তার নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী প্রার্থী) মো. তারেক নেওয়াজ পেয়েছেন ১ হাজার ৬৩৮ ভোট। সমিতিরহাট ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হারুন অর রশিদ ইমন ৭ হাজার ৩২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নাছির উদ্দীন পেয়েছেন ১ হাজার ৮১২ ভোট।
ধর্মপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কাজী মাহমুদুল হক ৯ হাজার ৮৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. মোরশেদুল আলম পেয়েছেন ১৪০ ভোট।
জাফতনগর ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী প্রার্থী) জিয়া উদ্দিন জিয়া ৩হাজার ৬৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আব্দুল হালিম পেয়েছেন ১ হাজার ৯৫০ভোট। আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন অহিদুল আলম জুয়েল।
অন্যদিকে লেলাং ও বখতপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর রিট আপিল জটিলতায় চেয়ারম্যান পদে ৬ সপ্তাহ হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত রেখেছেন। তাই সেখানে সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে।
মীরসরাই উপজেলা : মীরসরাই উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের মধ্যে গতকাল ভোটের দিন শুধুমাত্র ৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোট হয়েছে। অপর ১৩টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীগণ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন আগেই। তবে গতকাল ১৬ ইউপিতে মেম্বার পদে নির্বাচন হয়েছে। যে তিন ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন তারা হলেন, ৬নং ইছাখালী ইউনিয়নে নৌকার মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ মোস্তফা ৯ হাজার ৫১০ ভোট পেয়েছেন। অপর বিদ্রোহী প্রতিদ্বন্দ্বী নুরুল মোস্তফা (আনারস) পেয়েছেন ৩ হাজার ৩১৯ ভোট।
৯নং মীরসরাই ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শামছুল আলম ৭৩৮০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীগণ পেয়েছেন মো: সাইফুল্লাহ (ঘোড়া) ৬২ ভোট, খায়রুল বাশার ফারুক (আনারস) ৪৮ ভোট ও আজম উদ্দিন (চশমা) ৪১ ভোট।
১২নং খৈয়াছরা ইউনিয়নে বিজয়ী নৌকা প্রতীকের মাহফুজুল হক জুনু পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৩৯ ভোট। স্বতন্ত্র বিদ্রোহী প্রার্থী জাহেদ ইকবাল চৌধুরী (ঘোড়া) পেয়েছেন ৭৯২ ভোট, জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নুর নবী (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৬১২ ভোট। এছাড়া উপজেলার ১৬ ইউনিয়নের প্রতি ইউনিয়নে ৯জন করে ১৪৪ জন ইউপি সদস্য ও ৪৮ জন মহিলা সদস্যসহ মোট ১৯২ জন ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
১৩ ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীগণ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছেন। বিজয়ীরা হলেন, যথাক্রমে ১নং করেরহাট ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়ন, ২নং হিঙ্গুলী ইউনিয়নে সোনা মিয়া সওদাগর, ৩নং জোরারগঞ্জে মাস্টার রেজাউল করিম, ৪নং ধুম ইউনিয়নে একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া, ৫নং ওচমানপুর ইউনিয়নে মফিজুল হক মাস্টার, ৭নং কাটাছরা ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী হুমায়ুন, ৮নং দুর্গাপুরে আবু ছুফিয়ান বিপ্লব, ১০নং মিঠানালা ইউনিয়নে এডভোকেট আবুল কাশেম, ১১নং মঘাদিয়া ইউনিয়নে জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার, ১৩নং মায়ানী ইউনিয়নে কবির আহমদ নিজামী, ১৪নং হাইতকান্দি ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, ১৫ নং ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে ফজলুল কবির ফিরোজ ও ১৬ নং সাহেরখালী ইউনিয়নে কামরুল হায়দার চৌধুরী।
সীতাকুণ্ড উপজেলা : সীতাকুণ্ডে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গতকাল ৪টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে ৩টিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিপুল ভোটে বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। একটি ইউনিয়নে ২টি কেন্দ্র স্থগিত হওয়ায় সেখানে চেয়ারম্যান নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। এই ইউনিয়নে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
২নং বারৈয়াঢালা ইউপিতে রেহান উদ্দিন রেহান (নৌকা) ১২ হাজার ৫৬৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবু জাফর (আনারস)-২ হাজার ১৫৩ ভোট পেয়েছেন।
৫নং বাড়বকুণ্ডে ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী(নৌকা) ৭ হাজার ৭৪৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এ.জে.এম বেলাল উদ্দিন (লাঙ্গল)৪ হাজার ২৭৪ এবং জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া (আনারস)১৪৩ ভোট পেয়েছেন এবং ১০নং সলিমপুরে সালাউদ্দিন আজিজ (নৌকা)১৬ হাজার ৫২২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুর গফুর (আনারস)৩ হাজার ৯৫ ভোট পেয়েছেন। এছাড়া স্থগিত ৬নং বাঁশবাড়িয়া ইউপিতে ৭টি কেন্দ্রে শওকত আলী জাহাঙ্গীর (নৌকা) ৬ হাজার ৪২৬, আরিফুল আলম রাজু (আনারস) ২ হাজার ৯৫৭ পেয়েছেন। সেখানে ২টি কেন্দ্র স্থগিত। ওই দুই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ৫০০টি। এর আগে ৫টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তারা হলেন- ১নং সৈয়দপুর ইউনিয়নে তাজুল ইসলাম নিজামী, ৪নং মুরাদপুরে এস এম রেজাউল করিম বাহার, ৭ নং কুমিরায় মোরশেদ হোসেন চৌধুরী, ৮নং সোনাইছড়িতে মনির আহমেদ এবং ৯নং ভাটিয়ারীতে মো. নাজীম উদ্দিন।
এসএএস/এমআই