chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চতুর্থ স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় তৃতীয় স্ত্রীসহ স্বামী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক : নগরীর হালিশহর এলাকায় দেড় বছর আগে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নিহতের স্বামীসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া পাওয়া গেছে খুন হওয়া নারীর পরিচয়ও।

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম ) মো. আবদুল ওয়ারিশ বলেন, ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে নিহত লাকী আক্তার পিংকীর স্বামী সোহাইল আহমদকে (৪০) বাগেরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। পরে সোহাইলের তৃতীয় স্ত্রী নাহিদা আক্তারকে (২২) পতেঙ্গা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

হালিশহর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, গত বছরের ২১ জুলাই থানার রহমানবাগ আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মুখমণ্ডল বিকৃত অবস্থায় থাকায় ওই সময় তার পরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় বাড়ির কেয়ারটেকার মো. নুর নবী হালিশহর থানায় এজাহার দায়ের করেন। এরপরই পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। রেজাউল করিম নাম বলে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে এবং একটি জাতীয় পরিচয়পত্রের অস্পষ্ট ফটোকপি কেয়ারটেকার নুর নবীর কাছে জমা দেয় বাসাটি ভাড়া নেন সোহাইল।

তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তার পুলিশ জানতে পারে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সোহাইল আহমেদই জড়িত। একইসঙ্গে পুলিশ সোহাইল আহমেদের ছবি সংগ্রহ করে। পরে কেয়ারটেকার নুর নবী তার বাসায় রেজাউল করিম নামে ভাড়া থাকা ব্যক্তি হিসেবে ছবির ব্যক্তিটিকে শনাক্ত করেন। তখনই জানা যায় সোহাইল মিথ্যা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় উঠেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গা দ্রুত স্থান বদল করেছেন সোহাইল। যে কারণে তাকে গ্রেফতারে বেগ পেতে হয়েছে। পরে সোহাইলের তথ্যে তার তৃতীয় স্ত্রী নাহিদা আক্তারকে (২২) পতেঙ্গা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। উভয়কে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ঘটনায় নিহত ভিকটিমের নাম লাকী আক্তার পিংকি বলে জানা যায়।
পিংকি দক্ষিণ পতেঙ্গা ডুরিয়া পাড়া এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের মেয়ে। তিনি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে হালিশহর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আল মামুন বলেন, গ্রেফতার সোহাইল, নাহিদা ও ভিকটিম লাকী আক্তার পিংকি চট্টগ্রামের পৃথক পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সোহাইল ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পিংকিকে বিয়ে করেন। এরপর তাকে হালিশহরের এই বাসা রাখেন। খুন হওয়া পিংকী ছিলেন আসামি সোহাইল আহমেদের চতুর্থ স্ত্রী। আর গ্রেফতার নাহিদা আক্তার সোহাইলের তৃতীয় স্ত্রী। যাকে ২০১৬ সালে বিয়ে করেন তিনি। নাহিদা পতেঙ্গা এলাকায় পৃথক একটি বাসায় থাকতেন। বাকি স্ত্রীরা বাগেরহাটে।

তিনি আরও বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই সোহাইল ও লাকী হালিশহর থানার রহমানবাগ আবাসিক এলাকার বাসায় ছিলেন। ওইদিন সন্ধ্যায় সোহাইলের তৃতীয় স্ত্রী নাহিদাও তাদের বাসায় ছিল। সোহাইল স্ত্রী লাকীর চালচলন নিয়ে সন্দেহ করতো। এ নিয়ে তাদের মাঝে প্রায়ই ঝগড়া হতো।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সোহাইল ১৬ জুলাই রাতে লাকীকে ব্যাপক মারধর করে। মারধরে লাকী অজ্ঞান হয়ে যায়। এরপর সোহাইল লাকীর পরনের জামা-কাপড় খুলে গলায় ফাঁস দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মৃতদেহটি বিছানার চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে রান্না ঘরে রাখে সে পালিয়ে যায়।

ঘটনাটি নাহিদা দেখলেও সে চুপ থাকে। এরপর সোহাইল ও নাহিদা সকালে বাসা থেকে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যায়। ঘটনার পাঁচদিনের মাথায় ২১ জুলাই পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।

এসএএস/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর