চট্টগ্রামে চলছে গণপরিবহন, দিগুণ ভাড়া আদায়ে যাত্রীরা অসহায়
নিজস্ব প্রতিবেদক: দুইদিন ধর্মঘটে বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রাম নগরীতে চলাচল করছে সব ধরনের গণপরিবহন। তবে দুরপাল্লার বাস ও ট্রাক কার্ভাডভ্যান কম চলাচল করেত দেখা গেছে। গণপরিবহন চলাচল করলেও যাত্রীদের থেকে আদায় করা হচ্ছে দিগুণ ভাড়া। এ নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা।
আজ রবিবার (০৭ নভেম্বর) নগরীর সবকটি রোডে দিগুণ ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে সরকার আকস্মিকভাবে ডিজেল-কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যা ওইদিন থেকে কার্যকর হয়। এ কারণে সারাদেশে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘটে নামে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রামে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের একাংশ। ৭টির মধ্যে ৫টি সংগঠন ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছে, তবে ৫ টাকার জায়গায় ১০ টাকা ভাড়া নিয়ে পরিবহন করছে যাত্রী।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল চট্টলার খবরকে বলেন, দুইদিন ধর্মঘটের পর আজ সকাল থেকে নগরীতে সব ধরনের যাত্রীবাহী পরিবহন চলাচল করছে। তবে ভাড়া নির্ধারণ না হওয়ায় চালকরা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে শুনেছি। আমরা চালকদেরকে বুঝিয়ে রাস্তায় নামিয়েছি।
তিনি বলেন, আজ ঢাকায় বৈঠক বসেছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হবে কত টাকা ভাড়া বাড়বে। আমরাও চট্টগ্রামে ভাড়া বাড়ানোর জন্য মিটিং করছি। একটা নতুন ভাড়ার তালিকা তৈরি করছি। আগামীকাল সকাল থেকে নতুন ভাড়ায় গণপরিবহন চলবে। তখন দিগুণ ভাড়া আদায় করা হবে না। আজকের দিনটা আমরা দেখছি।
চট্টগ্রামের ১৩টি রুটে বাসসহ গণপরিবহন চলছে। তবে আজ চট্টগ্রাম নগরীতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় রাস্তায় গাড়ি কম। তাই জনভোগান্তির পুরোপুরি অবসান হয়নি। যেসব যানবাহন চলছে, তারা প্রায় সবাই বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। সর্বনিম্ন ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে পরিবহনগুলো। এ নিয়ে সকালে বেশ কয়েক জায়গায় যাত্রীদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের বাকবিতণ্ডার মতো ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে।
এদিকে চট্টগ্রামের ১৩টি রুটেই বাসজাতীয় বড় গণপরিবহনের সাথে চলছে ছোট ছোট পরিবহনও। বাসের সাথে সাথে বেড়েছে টেম্পু, টমটম ও এজাতীয় অন্যান্য পরিবহনের ভাড়াও।
৩ নম্বর বাসের এক চালকের সহকারী নজরুল ইসলাম বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ছে। তাই গাড়িতে ওঠানামা ১০ টাকা দিতে হবে। যা দুইদিন আগেও ছিল ৫ টাকা। এভাবে দিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কালুরঘাট থেকে নিউ মার্কেটগামী ২ নাম্বার পরিবহনেও। বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে কাটগড় পর্যন্ত চলাচল করা ১০ নম্বর পরিবহনেরও দিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
নগরীর ষোলশহর থেকে দেওয়ানহাট আসা যাত্রী মাজেদুল ইসলাম বলেন, ৫ টাকার ভাড়া ১০ টাকা দিতে হয়েছে। এদিকে লালখানবাজার থেকে দেওয়ানহাট পর্যন্ত আধাকিলোমিটার এলাকার ভাড়াও ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা নিচ্ছে সব গণপরিবহন। বিআরটিসি দোতলা বাসও আগের ভাড়া উপেক্ষা করে দিগুণ ভাড়া আদায় করার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
দেওয়ানহাটে হামিদুল্লাহ নামে এক যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, লালখান বাজার থেকে দেওয়ানহাটের দূরত্ব আধা কিলোমিটার হবে। সেখানে ৫ টাকা ভাড়া দিলেও বেশি হয়। সেখানে আজ কোন ঘোষণা ছাড়া ১০ টাকা নিয়ে নিলো বাসের কন্ট্রাকটর।
চট্টগ্রামের পরিবহন মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজ সকাল ১১টায় মন্ত্রণালয়ে ভাড়া নিয়ে যে বৈঠক হবে, সেটার সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। তারা বলছেন, কিছু জটিলতা হওয়ায় তারা গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে বৈঠকে যদি তাদের স্বার্থানুযায়ী সিদ্ধান্ত না হয়, সেক্ষেত্রে তারা আবার ধর্মঘট করতে পারেন, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
আজ রবিবার বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে সরকারের একটি বৈঠক করার কথা রয়েছে। আশা করা হচ্ছে সেই বৈঠকে এ ব্যাপারে একটি সমাধান আসবে। এতে অবসান হতে পারে তিন দিনের অচলাবস্থার।
এসএএস/এমআই/চখ