chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

কমে এসেছে ডিজেল বিক্রি, পণ্যের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: ন্দরের তিন নম্বর জেটির পাশেই অবস্থিত স্ট্যান্ডার্ড অটো ফিলিং স্টেশন। এই জেটি থেকে প্রতিদিন দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন পণ্য পাঠানো হয়। এসব পরিবহনকে যাতায়াতের তেলের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অটো ফিলিং স্টেশনে আসতে হয়।

পরিবহনের চাপে সকাল নয়টা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত স্টেশনটিতে পণ্য বোঝাই ট্রাকের ভিড় লেগেই থাকে। ফলে শ্রমিক থেকে শুরু করে স্টেশনের ম্যানেজারদের দম ফেলার ফুসরত মেলে না। তেল নিতে চালক ও সহযোগীদের মাঝে রীতিমতো প্রতিযোগিতা শুরু হয়।

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) উল্টে চিত্র চোখে পড়ল ব্যস্ত ফিলিং স্টেশনটিতে। তেল নিতে প্রতিদিনকার মতো ওই স্টেশনে পণ্য বোঝাই ট্রাকের তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। শ্রমিক থেকে শুরু করে ম্যানেজারদের দেখা গেলো অলস সময় কাটাতে। মাঝে মধ্যে একটি ট্রাক আসতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন শ্রমিকরা।
স্টেশটিতে তেল বিক্রির রশিদ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এক কর্মচারী জানালেন গতকাল রাতে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় তেল বিক্রি কমে এসেছে।

ফিলিং স্টেশনটির ম্যানেজারের কক্ষের সামনে সাঁটানো হয়েছে সরকারের নির্ধারিত ডিজেল ও কেরোসিনের নতুন মূল্য তালিকার পত্রিকার কপি। কথা হয় কর্মকর্তা মো. ইসমাইলের সঙ্গে। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, তেল বিক্রি অর্ধেকে কমে এসেছে। গতকাল দুপুর দুইটা পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি লিটার ডিজেল বিক্রি করেছি। আজ বিকেল চারটা বাজলেও এক হাজারের বেশি ডিজেল বিক্রি হয়নি। গাড়ির চালকরা তেল বিক্রির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। শ্রমিকদের সঙ্গে গাড়ির চালকদের কথা কাটাকাটি হচ্ছে। সড়কেও পরিবহনের সংখ্যা কমে গেছে।

নগরের রশিদ বিল্ডিং মোড়ে মেসার্স দাম্মাম ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার শেইখ মো. ওবায়দুল হক চট্টলার খবরকে বলেন, তিন থেকে সাত টাকা বাড়াতে পারতো। কিন্তু এক লাফে পনের টাকা বাড়ানো হয়েছে। যারা ২০ লিটার তেল নেওয়ার কথা তিনি নিচ্ছেন ১৫ লিটার। আগে রংপুরে যাওয়া একটি চালের ট্রাক ভাড়া চাইতো ২২ হাজার টাকা। তিনি এখন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা চাইবে। পাঁচ টাকার গাড়ি ভাড়া চাওয়া হবে সাত টাকা। পনের হাজার টাকা পণ্যবোঝাই ট্রাক চাইবে সতের থেকে উনিশ হাজার টাকা। তেলের সাথে সব কিছু সম্পৃক্ত। সব কিছুর দাম নতুন করে কয়েক গুণ বাড়বে। সাধারণ মানুষ যাবে কই ?

বন্দরের তিন নম্বর জেটিতে পিকআপসহ দাঁড়িয়ে ছিলেন চালক মো. মনির হোসেন। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতেই রেগে যান। তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, দাম পাঁচ টাকা বাড়োনো যেতো। এক সঙ্গে পনের টাকা বাড়িয়েছি। বাড়তি দামে তেল কিনে মাল পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু আমাদের ভাড়াতো বাড়বে না। আমদানিকারকদের কোনো ক্ষতি নেই। তারা আগের দামে মাল পাঠাতে চাইবে।

বাড়তি দামের কারণে আগামীকাল সড়কে ৪০ শতাংশ পরিবহন চলাচলে কমে যাবে বলে জানালেন আরেক ট্রাক চালক মো. রেজোয়ান। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, এর আগে এভাবে দাম বাড়ানো হয়নি। শুনলাম ঢাকায় এ বিষয়ে বৈঠক হচ্ছে। বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত না আসলে সড়কে যান চলাচল কমে যাবে। গণপরিবহনের চালকরাও এ সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে দিবে।

এদিকে দফায় দফায় দফায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চড়া মূল্যের রেশ টেনে না ধরতেই কেরোসিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন ও খেটে খাওয়র মানুষকে খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হবে। বাণিজ্যিক ও আবাসন খাতে কেরোসিনের ব্যবহার কিছুটা কমলেও, রান্নার জ্বালানির জন্য নিম্ন আয়ের মানুষকে কেরোসিনের ওপর নির্ভর করতে হয়।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তেলের দাম বৃদ্ধিতে পণ্য পরিবহন, যাতায়াত খাত থেকে শুরু করে প্রতিটি পণ্য ও সেবার দাম ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। বিবৃতিতে এর ফলে জনজীবনে মারাত্মক দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে বলে ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন জানিয়েছেন।

অপরদিকে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে মূল্যে পরিবহন চলাচল সম্ভব নয় বলে দাবি করেন নেতারা।

আরকে/নচ

এই বিভাগের আরও খবর