চট্টগ্রামের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডে চসিকের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী নগরীতে সরকারের যে সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে সেগুলো যেন ঝুঁকি ও ঝামেলা মুক্ত থাকে, নাগরিক নিরাপত্তা বিঘ্ন ও জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে না দাঁড়ায় এবং নির্বিঘ্নে কাজ সম্পাদন হতে পারে সে জন্য দেখ-ভাল, তদারকী ও সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব, কর্তৃত্ব ও কর্তব্য পালনে চসিককে সম্পৃক্ত করতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করে বলেন, চসিকের কর্মপরিষদ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত। যে কোন কর্মকান্ডে জবাবদিহিতা দায়বদ্ধতার বিষয়টি অন্যান্য সেবা সংস্থার তুলনায় চসিকেরই সবচেয়ে বেশি।
নগরীর চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডে ও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সিডিএ, ওয়াসা, বিদ্যুৎসহ অন্যান্য সেবা সংস্থার বড় ধরণের যে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সে তুলনায় চসিকের সম্পৃক্ততা সামান্য। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কার্যক্রমের অনেক ক্ষেত্রেই নানান সমস্যা, ভোগান্তি এমনকি অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানি ঘটছে। এসবের দায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের হলেও সাধারণ মানুষের সমালোচনার তীর থাকে চসিকের দিকেই। কারণ চসিক কর্মপরিষদ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিয়েই গঠিত।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আন্দরকিল্লাস্থ পুরাতন নগর ভবনের কে.বি আবদুস সাত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত চসিকের ৬ষ্ঠ পরিষদের ৯ম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে মেয়র একথাগুলো বলেন।
মেয়র আরো বলেন, আমি ক্লিন সিটি দেখতে চাই। পরিচ্ছন্ন বিভাগে কয়েক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী আছে তাদের তদারকী করছেন কাউন্সিলরগণ। তারপরও চট্টগ্রাম পরিপূর্ণ ক্লিন সিটি হয়ে উঠতে পারেনি। কোন কোন স্থানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, এখন থেকে এর দায় বর্তাবে কাউন্সিলরগণের উপর। নগরীর আলোকায়নের বিষয়ে কোন অজুহাত শুনতে চাই না। তার চুরি হয়েছে, বাল্ব নষ্ট হয়ে গেছে এসব ঠুনকো কারণ দাঁড় করানো যাবে না। আলোকায়নের ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া যাবে না।
মেয়র পলিথিনমুক্ত নগরীর অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, আপাতত চকবাজার, কর্ণফুলী, কাজীর দেউরী কাঁচা বাজারকে পলিথিন মুক্ত করার আওতায় আনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে পুরো নগরীর কাঁচা বাজারগুলোকে এই কার্যক্রমের আওতায় আনা হবে।
নগরীর ফুটপাতগুলো অবৈধ দখল মুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, নগরীর ফুটপাতগুলো যতবারই দখল মুক্ত করা হয়েছে তা ততবারই আবারও বেদখল হয়ে যায়! এবারও ফুটপাতগুলো অবৈধ দখল মুক্ত করা হবে। এরপরও যদি কেউ ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, অবৈধভাবে নালা-নদর্মা-খাল সমূহের উপর স্ল্যাব ও স্থাপনা কারণও জলাবদ্ধতার আরেকটি বড় কারণ। অবৈধ স্ল্যাব ও স্থাপনাগুলো নিজ উদ্যোগে সরিয়ে ফেলতে হবে। অন্যাথায় কর্পোরেশন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল জরিমানসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে নালার উপর স্ল্যাব বসানোর দায়িত্ব চসিকের।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বহদ্দারহাট মোড় থেকে রোজ গার্ডেন পর্যন্ত ও ডিটি রোডের কিছু অংশের বেহাল অবস্থা ৪ বছরেও কাটেনি। এই অংশগুলো নগরীর একটি দুর্বিষহ চিত্র।
তিনি জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেস প্রকল্প ও জলাবদ্ধতার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যে মাটিগুলো উত্তোলন করা হয়েছে তা খালের দু’পাশে অন্যদিকে রাস্তার পাশে রাখার ফলে যানজট ও জলজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই শুষ্ক মৌসুমে প্রকল্প বাস্তবায়নকারীগণকে নিজ দায়িত্বে উত্তোলিত মাটি সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন সংস্থার সাথে সমন্বয়ের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। তিনি আরো জানান, নগরীর উপকূলবর্তী ১১টি ওয়ার্ডে আপদকালীন আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে এবং যেখানে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থাকা উচিত সেখানে তা স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জন্মনিবন্ধন নিয়ে জঠিলতা সম্পর্কে তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়াটি খুবই টেকিনিক্যাল সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমকে অধিকতর গতিশীল করা হবে।
মেয়র মশক নিধনের ব্যাপার আরো ৩ মাস সময় নির্ধারণের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই সময়ে যারা স্প্রে করবেন তাদের নিরাপদ সুরক্ষা পোষাক দেয়া হবে। মেয়র নগরীর সড়কের যে অংশে ট্রাক, কার্ভাড ভ্যান দাঁড়িয়ে থেকে অঘোষিত স্ট্যান্ডে পরিণত করা হয়েছে সেগুলো সনাক্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কাউন্সিলদের পরামর্শ দেন। চসিক মালিকানাধীন যে সকল জায়গা অবৈধ দখলদারদের দখলে আছে তার একটি তালিকা প্রস্তুত করার জন্য কাউন্সিলরদের প্রতি আহবান জানান। সভায় স্ট্যান্ডিং কমিটির কার্যক্রম সমূহ সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদন করা হয়।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিকসহ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরবৃন্দ।
সভায় এক প্রস্তাবে বিগত সাধারণ সভার পর থেকে এ পর্যন্ত নগরীতে যারা মৃত্যু বরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়। সভার শুরুতে কোরান তেলাওয়াত ও মোনাজাত পরিচালনা করেন চসিক মাদ্রাসা পরিদর্শক মাওলানা মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ।
এসএএস/জেএইচ/চখ