chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

জেলে পাড়ায় চলছে সাগর যাত্রার প্রস্তুতি

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাগরে বন্ধ মাছ ধরা। নেই জেলেদের ব্যস্ততা। ডাঙায় নোঙর করে আছে হাজারো ট্রলার। সে ট্রলারের একটিতে বসে ছিলেন মো. আরিফুল ইসলাম। কাজ না থাকায় কয়েকদিন আগে বাধ্য হয়ে তাকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছিল। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার খবরে আবারও জীবিকার তাগিদে ছুটে এসেছেন ঘাটে।

আরিফুল চট্টলার খবরকে বলেন, কাজ না থাকায় আমার মতো অনেকে বেকার হয়ে গিয়েছিল। সরকারের সিদ্ধান্তকে সম্মান দিয়ে আমরা সাগরে যাইনি। পরিবার চালাতে গিয়ে আমাদের ধার দেনা করতে হয়েছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে কোনা রকমে দিন গেছে। আল্লায় এবার মুখ তুলে তাকালে কিছু টাকা পামু।

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। নিষেধাজ্ঞার সময়ে জাল ফেলা, মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ ছিল। কর্মহীন হয়ে পড়ে অধিকাংশ জেলে শ্রমিক। নগরের ফিশারীঘাট ও অভয়মিত্র ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাগরে মাছ ধরার আগাম প্রস্তুতি সারছেন শ্রমিকরা।

জেলে পাড়ায় চলছে সাগর যাত্রার প্রস্তুতি
জেলে পাড়ায় চলছে সাগর যাত্রার প্রস্তুতি। ছবিটি নতুন ফিশারিঘাট থেকে তোলা। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

কেউ মাছ ধরার ড্রাম পরিষ্কার, ট্রলার মেরামত, কেউ বুনন করা নতুন জাল সারিবদ্ধ আকারে নৌকায় তুলছেন। মাছ ফ্রিজিং করার বাক্সগুলো মেরামত করছেন কেউ কেউ। রাতের আঁধারে মাছ ধরার জন্য কুপিতে তেল ভরে নিচ্ছেন অনেকে। মাছ রাখার জন্য ছোট ঝুপড়িও তৈরি করা হয়েছে। আবারও জালে ধরা দিবে সাগরের মাছ, বাজারে শুরু হবে হাঁকডাক। কষ্টের লাঘব হবে, ছেলে মেয়েদের দু‘মুঠো অন্নের ব্যবস্থা হবে। এমন প্রত্যাশায় দিন পার করছেন জেলে ও ট্রলার মালিকরা। সব মিলিয়ে জেলে পাড়ার মানুষগুলো চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস আর আনন্দের ঝিলিক যেনো লেগেই আছে।

এখানে কাজ করা অধিকাংশ জেলের পরিবার চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, কক্সবাজারের চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা ও ময়মনসিংহের।

ইতোমধ্যে মাছ ধরার জন্য ট্রলার নিয়ে জেলেরা সাগরে অবস্থান করছেন বলে জানালেন মৎসজীবী লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আলহাজ্ব মো. আমিনুল বাবুল। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, নিষেধাজ্ঞা কারণে অনেক শ্রমিক বাড়িতে চলে গিয়েছিল।দুই একদিনের মধ্যে অধিকাংশ শ্রমিক ঘাটে ফিরে আসবে। সরকারের সিদ্ধান্ত পেলেই ছোট বড় প্রায় ৬৭ হাজার ট্রলার সাগরে মাছ ধরার জন্য প্রস্তুত। বড় ট্রলারে ১০ থেকে ১৫ জন ও ছোট ট্রলারে ৭ থেকে ৯ জন জেলে মাছ ধরতে যান।

নতুন ফিরিঙ্গবাজারের ট্রলার মালিক সাইফুল ইসলাম চট্টলার খবরকে বলেন, মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জেলেরা ট্রলার মালিকদের কাছে ধার দেনা করে চলেছে। মাছ ব্যবসায়ীরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারলেও জেলেরা বেকাদায় পড়ে যান। এটি ছাড়া তাদের আর কোনো পেশা নেই। আশা করছি নিষেধাজ্ঞার পর ভালো মাছ পাওয়া যাবে।

এদিকে সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা শেষ হতে যাওয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে কাঁচাবাজারেও। সরবরাহ কম থাকায় চওড়া দামে বিক্রি হয়েছিল সব ধরনের দাম। জেলে, পাইকার ও আড়তদারের পদচারণা বাড়বে উপকূলে।

নগরের কাজীর দেউড়ির কাঁচাবাজারের মাছ বিক্রেতা মো. সরওয়ার আলম চট্টলার খবরকে বলেন, নিষোধাজ্ঞার মধ্যে ফ্রিজিং করা সাগরের মাছগুলো বাজারে চলেছে। তবে সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম ছিল বেশি। সাগরে মাছ ধরা চালু হলে পাইকারীতে মাছের দাম কমে আসবে, খুচরায় পর্যায়ে দাম সহনীয় মাত্রা চলে আসবে।

আরকে/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর