chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

মাদ্রাসার নাম পরিবর্তন নিয়ে বিরোধ, প্রাণ গেল প্রতিষ্ঠাতার

নিজস্ব প্রতিবেদক : পটিয়া উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নে একটি মাদ্রাসার সাইনবোর্ডের নাম নিয়ে বিরোধের জের ধরে দু’পক্ষের বিরোধের থামাতে গিয়ে প্রাণ গেল মোহাম্মদ রুহুল আমিন চৌধুরী (৫৭) নামের এক বৃদ্ধের।

শুক্রবার(২২অক্টোবর) সকাল ১১ টায় উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মল্লপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রুহুল আমিন ওই এলাকার মৃত শফিউর রহমান চৌধুরীর ছেলে। পরে পটিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মল্লপাড়া গ্রামের আশিয়া আহমদীয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসাটি ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন রুহুল আমিন চৌধুরী।

পরে ১৯৮৮ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে এবতেদায়ী মাদ্রাসা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০৫ সালের দিকে বাড়ি ছেড়ে রুহুল আমিন চট্টগ্রাম শহরে চলে গেলে স্থানীয় হাজী মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন গংরা তা দখল করে নেয়।

পরে মাদ্রাসা ভবনে মুরগী, গরু ও ছাগলের খাদ্য রাখার গোডাউন হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এছাড়াও মাদ্রাসাটির নাম পরিবর্তন করে জামাল উদ্দিনের মাতা পিতার নামে কবির-জরিনা সুন্নীয়া মাদ্রাসা নামকরন করে মাদ্রাসার দেয়ালে নাম লিখে দেয়।

এ ঘটনায় রুহুল আমিন ও জামাল গংদের সাথে বিরোধ সৃষ্ঠি হয়। এ বিরোধ মীমাংসার জন্য স্থানীয়রা সামাজিকভাবে বেশ কয়েকবার বৈঠক করেও মীমাংসা করতে পারেনি। পরে

রুহুল আমিন গত ৬ অক্টোবর পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগটি ইউএনও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার জন্য নির্দেশ দেন। এরই প্রেক্ষিতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম শুক্রবার জুমার নামাজ উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে রুহুল আমিনের অনুসারীরা কবির-জরিনা সুন্নীয়া মাদ্রাসার নাম মুছে দিয়ে আশিয়া আহমদীয়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসার নতুন সাইবোর্ড টাঙ্গিয়ে দেয়। এ টাঙ্গানোর জের শুক্রবার সকাল থেকে উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় বাগবিতন্ডা ও উত্তেজনা দেখা দেয়।

এসময় সকাল ১১ টার দিকে দুই পক্ষের উত্তেজনা থামাতে গিয়ে রুহুল আমিন অজ্ঞান হয়ে মাঠিতে পরে যায়। পরে তাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিতসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিতসক সানজানা  খানম জানিয়েছেন, নিহতের শরীরে কোন ধরনের আঘাতের চিহ্ন নেই। হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু ঘটে।

নিহত রুহুল আমিনের চাচাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ার নাছির জানিয়েছেন, দীর্ঘ ৩০ বছরের প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার সাইনবোর্ডের নামকরনের বিরোধের জের ধরে বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে রুহুল আমিন অসুস্থ হয়ে পরে। অসুস্থবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিতসক মৃত ঘোষনা করে।

জামাল উদ্দিনের চাচাতো ভাই ও স্থানীয় ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আলমগীর জানিয়েছেন, মাদ্রাসায় থাকা সাইনবোর্ডটি রাতের আধাঁরে সরিয়ে অন্য নাম দেয়ায় এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্ঠি হয়। সুজন নামের এক সন্ত্রাসী সকাল থেকে অস্ত্র শস্ত্র নিয়ে এলাকায় শোডাউন দিতে থাকে। এসব দেখে আতংকিত হয়ে জ্ঞান হারান রুহুল আমিন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম বলেন, মাদ্রাসার বিরোধীয় বিষয় নিয়ে নিহত রুহুল আমিন ইউএনও নিকট লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। ইউএনও আমাকে উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠক বসার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুক্রবার বিকেলে বৈঠকও নির্ধারিত ছিল। তার আগে উভয় পক্ষের উত্তেজনায় প্রান হারায় রুহুল আমিন।

পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানান, মূলত মাদ্রাসার নামকরনের বিরোধের জের ধরে উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্ঠি হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখনো পর্যন্ত কোন ধরনের লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায় নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানিয়েছেন, রুহুল আমিন একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিল। তা তদন্ত করে আমাকে রিপোর্ট দেয়ার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম।

এসএএস/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর