chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সরকারি সহায়তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ, বাড়ি ফিরছেন জেলেরা

রকিব কামাল: তপ্ত গরমেও ছাতা মাথায় নিয়ে বুনে চলেছেন জাল, আগাম প্রস্তুতি হিসেবে মাছ সংরক্ষণের বক্স মেরামত করছেন কেউ। কেউবা আবার একটু প্রশান্তির খোঁজে ঝিমিয়ে নিচ্ছেন। দলবেঁধে আড্ডায় মেতেছেন কেউ কেউ।

সরকারি সহায়তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ
নদী থেকে জাল তুলে ডাঙায় ফিরেছেন জেলেরা। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

বুধবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রামের ফিশারিঘাট, অভয়মিত্র ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও উপকূলে মাছ ধরেন এমন জেলেরা কর্ণফুলী নদীর আশপাশে অবস্থান করছেন। মাছ ধরার সেই ব্যস্ততা নেই। জেলেদের হাঁকডাক নেই।

নদীর পাড়ে নোঙর করে আছে হাজারো ট্রলার। গত ৪ অক্টোবর থেকে টানা ২২ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞার পর এমন জেলেপল্লীতে নীরবতা ঘিরে ধরেছে। এই নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত।

জেলেদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞার পর দুদিনে ৮০ শতাংশ জেলে বাড়িতে ফিরে গেছেন। আজকেও অনেক জেলে বাড়ি ফেরার কথা রয়েছে। এসব জেলেদের পরিবার চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, কক্সবাজারের চকরিয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলা ও ময়মনসিংহে।

সরকারি সহায়তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ
কাজে নেই, এই ফাঁকে জালের ওপর ঘুমিয়ে নিচ্ছেন এক জেলে। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

মাছ ধরার বন্ধ থাকায় কার্যত বেকার হয়ে পড়েছে জেলেপল্লীর হাজারে জেলে। অধিকাংশ জেলে কোনো সরকারি সহায়তা পাননি বলে জানান। তাদের অভিযোগ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মেম্বার-চেয়ারম্যানরা পছন্দের ব্যক্তিদের এসব সহায়তা দিচ্ছেন। যারা জেলা পেশার সাথে সম্পৃক্ত নন। এমনকি অনেকে দীর্ঘদিনেও কার্ড পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ধার দেনা করে পরিবার চালাতে হবে বলে জানিয়েছেন জেলে পেশায় সম্পৃক্ত শ্রমিকরা। এখানে ছোট বড় মিলিয়ে ৬৭ হাজার ট্রলার রয়েছে। ছোট ট্রলারে ১০ থেকে ১২ জন এবং বড় ট্রলারে ২০ থেকে ২৫ জন জেলে থাকে।

নতুন ফিশারিঘাট এলাকায় জাল বুনছিলেন ৬৮ বছর বয়সী ভোলার চরফ্যাশন এলাকার বাসিন্দা মো. খুরশীদ আলম। কড়া রোদে হাঁফিয়ে উঠছিলেন কিছুক্ষণ পর পর। পাঁচ সন্তানের জনক খুরশীদ দেড় মাস আগে ফিশারিঘাটে আসেন। প্রথমদিকে সাগরে মাছ ধরার কাজ করলেও, এখন নিয়মিত জাল বুনার কাজ করেন। কথা বলতে কাছে যেতেই মুখে একরাশ হাসির ঝিলিক।

তিনি বলেন, সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জাল বুনার কাজ করি। পুরনো ফিশারিঘাটে কাজ করলে পাই ৬০০ টাকা। নতুন ফিশারিঘাটে করলে ৭০০ টাকা দেয়। কাজ নেই, বউ-ছেলেমেয়ের কাছে চলে যামু। কোনো সরকারি সহায়তা আমি পাইনি। সহায়তা চাইতে গেলে চেয়ারম্যান বলে আমি নাকি বিএনপি করি।

সরকারি সহায়তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ
২২ দিনের ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞাতে সাগরে নামতে পারছে না জেলেরা। তাই তীব্র গরম উপেক্ষা করে ছাতা মাথায় নিয়ে জাল মেরামত করছে জেলেরা। নগরীর নতুন ফিশারিঘাট এলাকা থেকে তোলা। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

সরকারি সহায়তা পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্ন করেছিলাম আরেক জেলে মো. আকবরের কাছে। তার বাড়ি ময়মনসিংহে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছোট বেলায় শুনেছিলাম আওয়ামী লীগ গরিবের বন্ধু, বিএনপি ধনীর বন্ধু। এখন দেখছি বিএনপি গরিবের বন্ধু, আওয়ামী লীগ ধনীর বন্ধু হয়ে গেছে।

‘রোদ-বৃষ্টি প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে আমরা কাজ করি। কাজ করে খাই, পরিবার চালাই। আমরা বিএনপি-আওয়ামী লীগ বুঝি না। ১২ বছর কাজ করে এখনও কার্ড নেই। নিবন্ধিত জেলের কার্ড করাতে ১০ হাজার টাকা খরচ লাগে। সরকারের পছন্দের লোকরা এসব সহায়তা পায়। গুটি কয়েকজনের কাছে কার্ড থাকলেও কোনো সহায়তা পাচ্ছে না।’

দুয়েক জায়গায় সরকারি সহায়তায় বরাদ্দে অনিয়ম হয়ে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী মৎসজীবী লীগ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আলহাজ্ব মো. আমিনুল বাবুল।

তিনি বলেন, সরকারি সহায়তা নিশ্চিতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। দুয়েক জায়গায় জেলেদের সরকারি সহায়তা নিয়ে অভিযোগ এসেছে। তবে জেলেরা যাতে ভালোভাবে থাকতে পারে সে লক্ষে সার্বিকভাবে কাজ করা হচ্ছে। সবাই সরকারি সহায়তা পাবেন।

পুরনো ফিশারিঘাটে মো. নুরুল কবিরসহ বেশ কয়েকজন জেলে ট্রলার থেকে মাছ নামানোর কাজ করছিলেন। কক্সবাজারের চকরিয়ার বাসিন্দা নুরুল তিন মাস আগে ফিশারিঘাটে জেলের কাজ শুরু করেন। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, মাছ ধরা বন্ধ থাকায় কাজ নেই। জেলেদের মধ্যে কেউ জাল বুনছেন, ৮০ শতাংশ শ্রমিক বাড়ি চলে গেছেন। আজকে অনেকে চলে যাবে। সরকারি কর্মকর্তারা এখানে এসেছেন, তবে কোনো সহায়তা আমরা পাইনি। ট্রলারের মালিকের কাছ থেকে ধার-কর্জ করে চলতে হবে।

এ বিষয়ে বক্তব্যের জন্য চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা লাভলীকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

আরকে/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর