chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

আজ শুভ মহালয়া-দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু

ডেস্ক নিউজ: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। কৈলাস ছেড়ে কন্যা রূপে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে, ঘোড়ায় চড়ে এবার বাবার বাড়িতে আসছেন মা দুর্গা। শ্রদ্ধা ভরে তিনি পূজিত হবেন মণ্ডপে মণ্ডপে। সে পূজার প্রস্তুতিই চলছে দেশজুড়ে

আজ বুধবার (৬ অক্টোবর) দেবীপক্ষের শুরুর দিন, শুভ মহালয়া। স্বাভাবিক ভাবেই মহালয়ার দিন থেকেই পুজোর আনন্দে মেতে উঠে ভক্তরা। পিতৃ পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞলি জানিয়ে আজ থেকেই শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব।

মহালয়ার এদিন নতুন করে মন্দির আর পূজামণ্ডপে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিমা স্থাপন করা হবে। এবার দেশ জুড়ে ৩২ হাজারেরও বেশি মন্দির ও মণ্ডপে অনুষ্ঠত হবে দুর্গাপুজার অনুষ্ঠান।

শাস্ত্র মতে, পিতৃপক্ষের অবসান বা দেবীপক্ষের পূর্ববর্তী অবস্হাকে বলা হয় মহালয়া। এই ব্যাপারে অবশ্য মতান্তরও রয়েছে। মহ শব্দটির মানে পূজা। আবার মহ বলতে উৎসব ও বোঝায়।

অন্যদিকে মহান ও আলয় নিয়ে মহালয়। এর সঙ্গে আ যোগ করে পূজার আলয়। আলয় শব্দের অর্থ আশ্রয়। আবার মহালয় বলতে বোঝা যায় পিতৃলোককে, যেখানে স্বর্গত পিতৃপুরুষদের অবস্হান রয়েছে।

পিতৃপক্ষের অবসানের পরই শুরু দেবীপক্ষের সূচনা। প্রথমে পিতৃপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রণাম ও সম্মান নিবেদন। দীর্ঘকাল ধরে কোটি কোটি মানুষ মহালয়ার পুণ্যপ্রভাতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে জল অঞ্জলি দিয়ে স্মরণ করে চলেছেন, তাদের পূর্বপুরুষদের বিদেহী আত্মার উদ্দেশ্যে।

মহালয়ার এই দিনে বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি সনাতন ধর্মালম্বী মানুষ মহালয়ার পূণ্য প্রভাতে ‘ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যান্ত ভুবনত্রয়ম, আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্যন্তং তৃপ্যন্তু’- এই মন্ত্র উচ্চরণ করে তিন গন্ডুষ জল অঞ্জলি দিয়ে বিদেহী পিতৃপুরুষদের স্মরণ করেন।

এছাড়া মহালয়ার ভোরে চন্ডীপাঠের রীতি রয়েছে। মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। পূর্বপুরুষকে যে খাদ্য উৎসর্গ করা হয় তা সাধারণত রান্না করে রুপো বা কলাপাতার ওপরে দেওয়া হয়। শ্রাদ্ধকর্তাকে স্নান করে ধুতি পরে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে হয়।

বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে, দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান।

শিবের বর অনুযায়ী কোন মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম হ্মমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতারিত করে এবং বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়।

ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী সন্মিলিত ভাবে ‘মহামায়া’র রূপে অমোঘ নারীশক্তি সৃষ্টি করলেন এবং দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সুসজ্জিত সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা নয় দিনব্যাপি যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করে।

মহালয়ার দিনে কৈলাস থেকে মা দুর্গা পিতৃগৃহে আগমন করবেন। দেশজুড়ে মন্দিরে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ শুরু হয়। ভক্তদের মাঝে শুরু হলো দুর্গা পূজার দিন গোনা। মহালয়ায় দেবী দুর্গার চক্ষুদান করা হয়।

শ্রী শ্রী চন্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনই মহালয়া হিসেবে পরিচিত। আর এই ‘চন্ডী’তেই আছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এই মহালয়া। মহালয়া উপলক্ষে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভ্ন্নি মন্দিরে মন্দিরেও বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

গত বছর করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে দুর্গাপূজা ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অনুষ্ঠিত হলেও এবার সেই বিধিনিষেধ অনেকটা শিথিল করা হচ্ছে।

পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী দুর্গা মর্তে এসেছেন ঘোড়ায় চেপে, আর বিদায় নেবেন দোলায়। মহালয়ার পাঁচদিন পর ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে শুরু হবে মূল দুর্গোৎসব।

এদিন (১১ অক্টোবর) ষষ্ঠী তিথিতে বোধনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনের পূজার শুরু হবে। ১২ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১৩ অক্টোবর অস্টমী, ১৪ অক্টোবর নবমী আর শুক্রবার ১৫ অক্টোবর দশমী তিথিতে দেবী বিদায় নেবেন। দশমী তিথিতে দেবী বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সমাপ্তি হবে।

এই বিভাগের আরও খবর