chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

ঝাঁজ বাড়ছে পেঁয়াজের, এক সপ্তাহে দাম বেড়ে দ্বিগুণ

সিন্ডিকেটের কারসাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক : একদিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে আরও ১০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৫-৪০ টাকায়। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে পেঁয়াজ কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা।

পর্যাপ্ত সরবরাহ ও মজুদ থাকা সত্বেও হঠাৎ কেন পেঁয়াজের দাম বাড়ছে তার কোন সদুত্তর নেই ব্যবসায়ীদের কাছে।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করতে হয়। ভারতে বিভিন্ন প্রদেশে অতিবৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কম হয়েছে। এতে বুকিং রেট বাড়ায় দেশে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম বেশি পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রামের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম বাজার  খাতুনগঞ্জের পাইকারী আড়তে মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৫৩-৫৫ টাকায়, মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা আর দেশিয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়।

তবে ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর এই অজুহাত মানতে নারাজ কৃষি সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র বলেছে, প্রতি বছর দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮ লাখ টন। যার মধ্যে দেশে উৎপাদন হচ্ছে ৩৩ লাখ টন। সংরক্ষণের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ৩০ শতাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হলেও বাকি থাকে ২৩ লাখ টন। আর প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। ফলে চাহিদার চেয়ে বেশি পরিমাণে পেঁয়াজ সবসময় উদ্বৃত্ত থাকে। তাই হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই।

সূত্র বলেছে, ভারত, মিয়ানমারসহ অন্যান্য যেসব দেশ থেকে বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে, সেসব দেশ পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেনি। এছাড়া বড় কোনো সমস্যাও নেই। তাহলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেন ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়বে? এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া কিছুই না বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে নগরীর রিয়াজুদ্দিন বাজার, বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার, চকবাজারসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে এক সপ্তাহ আগে তা বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়।

পেঁয়াজের এই অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা। কেউ কেউ আবার বিক্রেতার সাথে জড়াচ্ছেন বাক-বিতন্ডায়।

কথা হয় চকবাজার এলাকায় বাজার করতে আসা হামিদা বেগম নামে এক কর্মজীবি মহিলার সাথে।তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, চাল, চিনি, তেলের পর এবার দাম বেড়েছে পেঁয়াজের। সামনে যে পরিস্থিতি আসতেছে আমাদেরতো খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।

বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার এলাকায় কথা হয় হাবিব হোসেন নামে আরেক ক্রেতার সাথে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে একটির পর একটি নিত্য পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এসব দেখার কি কেউ নেই? এভাবে সাধারণ মানুষদের পকেট কাটার মানে কি? আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাচ্ছি দয়া করে যেন তারা দ্রুত দাম কমাতে ব্যবস্থা নেয়।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের ৪৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের ২৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।

ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করে। এটা সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া আর কিছুই না। পেঁয়াজের ব্যবসা এক ধরনের পেপারলেস ব্যবসা। খাতুনগঞ্জের পাইকারী আড়তের ব্যবসায়ীরা কোন মেমো রাখে না। মোবাইল কোর্ট গেলে বলে আমরা তো কমিশন এজেন্ট। ব্যবসায়ীদের পেঁয়াজ বিক্রি করে কমিশন নিয়ে থাকি। আর ব্যবসায়ীদের দেশের বাইরে থাকে। এটা কোন সমাধান না।

পেঁয়াজসহ ভোগ্যপণের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি থেকে এটা মনিটরিং করতে হবে। আর মেমো ছাড়া পেঁয়াজ বিক্রি করলে জরিমানা করতে হবে। তাহলে বাজার স্থিতিশীল হবে বলে মত দেন তিনি।

এসএএস/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর