chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি যেভাবে বুঝবেন

চট্টলা ডেস্ক: হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখা ছাড়াও দেহের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে প্রয়োজন ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম কেনো প্রয়োজন তা জানতে চাইলে মানুষ এক বাক্যে বলবে হাড়ের জন্য। আর তা বিন্দুমাত্র ভুল নয়।

তবে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই খনিজ উপাদান। যেমন রক্ত জমাট বাঁধা, পেশির সংকোচন প্রসারণ এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখা।

ক্যালসিয়ামের ঘাটতি আছে, নাকি নেই সেটা একজন মানুষ কীভাবে বুঝবে? তার আগে জানা দরকার ক্যালসিয়াম শরীরে ঠিক কীভাবে কাজ করে।

এই বিষয়ে ম্যানহ্যাটনের সনদপ্রাপ্ত পুষ্টিবিদ এবং ‘সার্টিফায়েড ইনটিউইটিভ ইটিং কাউন্সিলর’ ব্রিটানি মোডাল ‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “নতুন অস্থিকোষ তৈরি করতে এবং হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ক্যালসিয়াম চাই-ই চাই। বয়স যত বাড়তে থাকে শরীরে এই খনিজ উপাদানের গুরুত্ব আরও বাড়তে থাকে। আর ৯৯ শতাংশ ক্যালসিয়ামই জমা থাকে হাড়ে।

হাড়ের জন্য ক্যালসিয়ামের গুনগান করলেই শুধু হবে না, ভিটামিন ডি নিয়েও জানতে হবে। ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ডি এই দুইয়ে মিলে তৈরি হয় শক্তিশালী একটা জুটি।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল অস্টিওপোরোসিস ফাউন্ডেশন (ওডিএস)’য়ের মতে, ভিটামিন ডি’র কাজ হল শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস শোষণে সাহায্য করা। আর সেখান থেকেই তৈরি হয় শক্তিশালী হাড়।

মোডাল বলেন, এছাড়াও ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম আর পটাশিয়ামের সঙ্গে মিলেও হাড় শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে ক্যালসিয়াম।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেসিকস’য়ের মতে, ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সিদের প্রতিদিন ন্যূনতম ১০০০ মি.লি.গ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। আর হাড় যেহেতু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হতে থাকে, সেহেতু নারীদের বয়স ৫০ পার হওয়ার পর আর পুরুষের বয়স ৭০ পার হওয়ার পর দৈনিক ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে হবে ১২০০ মি.লি.গ্রাম।

আরেকটা বিষয় যা মনে রাখতে হবে তা হল, ক্যালসিয়ামের ক্ষেত্রে বেশি মাত্রা মানেই ভালো নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ অফিস অফ ডায়েটারি সাপ্লিমেন্টস (ওডিএস)’য়ের মতে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণের হার মারাত্মক হারে কমে যায়।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যানুসারে, অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম শরীরের কোষে গিয়ে জমা হয়। আর সেই জমে যাওয়া ক্যালসিয়াম ডেকে আনতে পারে বৃক্কে পাথর হওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃদরোগ ইত্যাদির ঝুঁকি।

আর একারণে দৈনিক ন্যূনতম মাত্রার পাশাপাশি দৈনিক ক্যালসিয়াম গ্রহনের সর্বোচ্চ মাত্রাও বেঁধে দেওয়া হয়।

ওডিস’র তথ্য অনুযায়ী, “১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সিদের সর্বোচ্চ ক্যালসিয়াম গ্রহণের মাত্রা হবে ২৫০০ মি.লি.গ্রাম। এর বেশি বয়সের মানুষের জন্য দৈনিক সর্বোচ্চ মাত্রা হবে ২০০০ মি.লি.গ্রাম।”

ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণ

শরীর ঠিক কীভাবে ক্যালসিয়াম ব্যবহার করে সেটা বোঝা জরুরি। তবে দৈনিক চাহিদা পূরণ হল কি-না সেটা বোঝা বেশ জটিল।

মোডাল বলেন, রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয় শক্ত ভাবে। রক্তে শর্করার অভাব থাকলে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম নিঃসরণ হয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করবে শরীর। এভাবেই শরীর তার অভ্যন্তরীন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের অজান্তেই। তবে দীর্ঘদিন ধরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

ক্যালসিয়াম ঘাটতির লক্ষণগুলো হলো:

– পেশিতে ব্যথা ও দুর্বলতা

– অনিয়মিত হৃদস্পন্দন

– আঙ্গুলে অসাড়তা, ঝিনঝিন অনুভূতি হওয়া

– স্মৃতিশক্তি হারানো বা মতিভ্রম

– হাতের নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া

ক্যালসিয়ামের উৎস

দুধের কথাই প্রথম মাথায় আসে ক্যালসিয়ামের উৎস হিসেবে, আর তাতে ভুল নেই বিন্দুমাত্র।

তবে মোডাল বলেন, উদ্ভিজ্জ উৎস থেকেও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় যথেষ্ট। সবুজ পত্রল শাকসবজিতে দুধের থেকেও বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া সম্ভব। আর সেগুলো থেকে পাওয়া ক্যালসিয়ামের সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শরীরে শোষণ হওয়া সম্ভব।

আর ‘সাপ্লিমেন্ট’ নিতে হলে অবশ্যই আগে পুষ্টিবিদের সঙ্গে আলাপ করে নেওয়া উচিত, পরামর্শ দেন মোডেল।

জেএইচ/চখ