নিত্যপণ্যের মতো ফলের দামও চড়া
চাহিদা সংকটের অজুহাত
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাজারে হরেক রকমের ফলের সমাহার। স্বাদ আর গন্ধে মন জুড়িয়ে যায়। ঘুরে ঘুরে ভালো ও সতেজ ফল কিনতে বাজারে ভিড় করছেন ক্রেতারা। কিন্তু দাম শুনেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অধিকাংশ মানুষকে।
নগরে নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যেই শুধু নয়, ফলের দামেও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সরবরাহ সংকটের অজুহাতে কয়েক মাসের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের ফল দুই থেকে তিনগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বিত্তবানরা দামের সঙ্গে চাহিদার সমন্বয় করতে পারলেও খেটে খাওয়া মানুষ এসব পণ্য কেনার চিন্তাও করতে পারছে না।
বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) নগরের বেশ কয়েকটি খুচরা-পাইকারি বাজার ঘুরে ও আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্রেতার চাহিদার ওপর নির্ভর করে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বাড়ছে পছন্দসই ফলের দাম। দাম বৃদ্ধির পেছনে সরবরাহ সংকটকে দুষছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর পাইকারি ও আমদানিকারকরা বলছেন, লকডাউনের পর সব ধরনের পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। বাজার পর্যালোচনা করে আমদানির ওপর জোর দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া কনটেইনার চার্জ অধিক হওয়ায় বেশি দামে পণ্য কেনায় দামও বাড়তি।
নগরের বৃহৎ রিয়াজউদ্দীন ও অভিজাত কাজীর দেউড়ি খুচরা বাজারে এদিন প্রতি কেজি মিশরীয় মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, যা একমাস আগেও ছিল ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। চাহিদার শীর্ষে ও সুস্বাদু হওয়ায় এ ফলের স্বাভাবিক দাম ছিল ১২০-১৩০ টাকা। অথচ লকডাউনকে পুঁজি করে এই ফলের দাম ৩০০ টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকে।
প্রতি কেজি পাকিস্তানি কমলা ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা এবং চায়না ছোট জাতের কমলা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও কমলার দাম রাখা হয়েছিল ২২০ টাকা। মানভেদে চায়না আপেল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পনের দিন আগেও এর দাম ছিল ১২০ টাকা। লাল রঙের আপেল আকারভেদে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পনের দিন আগেও যা বিক্রি হতো ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা।
ডালিম বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা। অথচ এই ডালিম গত মাসে ছিল ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা। লাল রঙের সুস্বাদু আঙ্গুরের দাম রাখা হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। এই দাম গত সপ্তাহে ছিল ৩২০ টাকা। আর সাদা রঙের আঙ্গুর চাওয়া হচ্ছে ৩১০ টাকা।
দুদিন আগেও এর দাম ২৮০ থেকে ২৯০ টাকা ছিল। নাসপতি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। এই ফলটিও গত সপ্তাহে ছিল ২০০ টাকা।
অন্যান্য ফলের মধ্যে বড় জাতের একশ পিস আনারস ৬ হাজার টাকা, বিভিন্ন আকারভেদে ডাবের দাম ৪০ থেকে ৮০ টাকা, রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জের আশ্বিনী জাতের আম কেজি প্রতি ২৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই আম আরও ১৫ থেকে ২০ দিন বাজারে থাকবে বলে জানান এক খুচরা ব্যবসায়ী। স্থানীয়ভাবে চাষ হওয়া ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা। ভালো জাতের বাংলা কলা ডজন ১২০ থেকে ১২৫ টাকা চাওয়া হচ্ছে। আকারভেদে প্রতি পিস তাল ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সূত্র জানায়, লকডাউনের কারণে অনেক ব্যবসায়ী আমদানি থেকে বিরত ছিলেন। চাহিদা কাজে লাগিয়ে কেবল মাল্টা আমদানি করে বেশ কয়েকজন আমদানিকারক গত মাসে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন।
জানতে চাইলে রিয়াজউদ্দিন বাজারের খুচরা ফল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রুবেল চট্টলার খবরকে বলেন, পেঁয়াজ, চাল ও তেলের দাম বাড়লে সবাই হইচই শুরু করে দেয়। কিন্তু ফলের দাম বাড়লে আমরা কোনো টুঁ শব্দ দেখি না। গতকাল একজন রিকশাওয়ালা দোকানে এসে আপেলের দাম জিজ্ঞেস করেছিলেন। দামে মিল না হওয়ায় তিনি আপেল নিতে পারেননি। ১২০ টাকার মাল্টা এখন ২৮০ টাকা দাম। চিকিৎসকরা প্রেসক্রিপসনে এ ফলের নাম লিখে দেন। রঙ ও সুস্বাদু হওয়ায় এ ফলের দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। বাজারে চায়না মাল্টা ও কমলা ঢুকতে শুরু করেছে। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে দাম কমে আসবে।
রুবেল আরও বলেন, প্রতিদিন বন্দর থেকে ৪০ কনটেইনারে পণ্য বের হয়। এসব কনটেইনারের ৮০ গাড়ির মধ্যে ৫০টির মতো পণ্য ফলমণ্ডিতে বিক্রি হয়। বাকি মাল বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট কমিশনে ঢাকায় বিক্রি করে দেয়। সেখানে যে দামে বিক্রি করবে সেটাই তাদের লাভ। যার কারণে ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে সব ধরনের ফলের দাম সবচেয়ে বেশি। অনেক ভালো মানের পণ্য ফলমণ্ডিতে না এনে ঢাকায় নিয়ে যায়।
এদিকে চাহিদার সংকটের কথা বলা হলেও নগরের অলিগলিতে হাঁকডাকে ফল বিক্রি করছেন ভাসমান দোকানি থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা।
দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ও আড়ত রেলওয়ে ফলমণ্ডীতে এদিন সাউথ আফ্রিকার প্রতি ঝুড়ি (১৫ কেজি) মাল্টা পাইকারিতে ৩ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রত ঝুড়ি কমলা ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, মিশরীয় আপেল ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে ৩০০ টাকা কমে ভারতের কমলা (২২ থেকে ২৬ কেজি) ২ হাজার ৬০০ থেকে ২৭০০ টাকায় টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিন দিন আগেও এ দাম ছিল ২ হাজার ৯০০ টাকা।
দাম ওঠানামার বিষয়ে জানতে চাইলে কে এন এস করপোরেশন এর এক স্বত্বাধিকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টলার খবরকে বলেন, এই মুহূর্তে কনটেইনারের ক্রাইসিস ও দাম বেশি। আগে কনটেইনারে খরচ পড়তো ৪ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা)। এখন কনটেইনারে ১ লাখ ৮০ থেকে ৯০ হাজার বেড়েছে। পণ্য আনতে গিয়ে আমদানিকারদের বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। যার কারণে পণ্যের স্বল্পতার কারণে দাম অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করছে। এ ছাড়া সাউথ আফ্রিকা, মিশর ও চীনে ফলের দাম আন্তর্জাতিকভাবে বেশি। আমদানি বাড়লে দাম কমে আসবে বলেও জানান তিনি।
আরকে/এমআই