ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েও হয়নি শেষরক্ষা, টাকাসহ গ্রেফতার দুই বন্ধু
ক্লিপটন গ্রুপের পিয়নের কান্ড
নিজস্ব প্রতিবেদক : ক্লিফটন গ্রুপের ১০ লাখ টাকার চেক হাতিয়ে নেয়ার জন্য ছিনতাইয়ের নাটক সাজিয়েছিল প্রতারক পিয়ন মো. আব্দুল রহিম। চেক ভাঙ্গিয়ে নগদ ১০ লক্ষ টাকা তুলে রেখেছিল বন্ধু মো. সেলিমের বাসায় আর বন্ধুর কথামতো নিজে গিয়ে ভর্তি হয় একটি প্রাইভেট হাসপাতালে। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি তার। পুলিশের বারংবার জিজ্ঞাসাবাদে অবশেষে বেরিয়ে এলো ঘটনার আদ্যোপান্ত। পরে তার দেয়া তথ্যে গরমিল পাওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকালে এ ঘটনায় পুলিশ পিয়ন মো. আব্দুল রহিম প্রকাশ রিপন (৩১) ও তার বন্ধু মো. সেলিমকে (৩৫) গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্যে সেলিমের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ব্যাগভর্তি সেই ১০ লাখ টাকা।
জানা যায়, ক্লিফটন গ্রুপের হিসাবরক্ষক মো. সাহেদ পিয়ন রিপনকে দিয়ে ১০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়ে টাকা উত্তোলনের জন্য পাঠায়। সে চেক নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকে গেলে অফিসে আর ফিরে আসেনি। এদিকে টাকা উত্তোলনের পর সেই টাকা বন্ধুর কাছে রেখে দিয়ে ছিনতাইয়ের নাটক সাজায় সে।
পুলিশ জানায়, রিপনের দাবি অনুযায়ী সে ১২ সেপ্টেম্বর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার জন্য নগরীর স্টেশন রোডস্থ নুপুর মার্কেট এলাকায় যায়। নুপুর মার্কেটের সামনে ডিবি পরিচয়ধারী ২ জন ব্যক্তি তার ওয়ারেন্ট আছে বলে জোরপূর্বক একটি অজ্ঞাতনামা সিএনজিতে তুলে নেয়। পরবর্তীতে তাকে বিআরটিসি মোড়ে নিয়ে সিএনজি’র ভিতর তার কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। একপর্যায়ে তাকে বায়েজিদ লিংক রোডে নিয়ে গেলে সে পানি খেতে চায়। পানি খাওয়ার পরে আসামী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এর পরে সে কিছুই জানে না।
পরদিন ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে অলংকার এলাকার একটি ঝোপ ঝাড়ের ভিতরে পড়ে আছে দেখতে পায়। সে বুঝতে পারে যে, তার কাছে থাকা ১০ লাখ টাকা ভর্তি ব্যাগ, মোবাইল ও মানিব্যাগ ডিবি পরিচয়ধারী ২ জন ব্যক্তি নিয়ে গিয়েছে। সে একজন বৃদ্ধ লোকের সহযোগিতায় একটি সিএনজি অটোরিক্সায় করে বাসায় চলে যায়।
একপর্যায়ে আসামী নিজেই তার বাসায় গিয়ে পরিবারের লোকজনের সাথে দেখা করে এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ ও মাথায় আঘাত পাওয়ার অভিনয় করে। আসামীর শারীরিক অবস্থা দেখে তার পরিবারের লোকজন আসামীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চমেক হাসপাতালে আসামীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ভর্তি করাতে বললে আসামীর পরিবারের লোকজন উন্নত চিকিৎসার জন্য নগরীর বেসরকারী ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতালে গিয়ে তাকে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। পরবর্তীতে কর্তব্যরত ডাক্তারের সাথে কথা বললে শারীরিক অবস্থা ভাল বলে জানা যায়।পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়। কিন্তু তার বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার মিল না পাওয়ায় তাকে বারংবার জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইয়ের ঘটনা মিথ্যা বলে স্বীকার করে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে আসামী ছিনতাইয়ের ঘটনা নাটক বলে স্বীকার করলে তাকে গ্রেফতারপূর্বক আদালতে প্রেরণ করা হয়। সেখানে আদালত একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ডে সে ওই টাকা তার বন্ধুর কাছে আছে বলে জানায়। পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে টাকাসহ তার বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।
এসএএস/জেএইচ/চখ