chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সাতদিন ধরে হাসপাতাল বেডে সত্তরোর্ধ মা, দেখা নেই স্বজনের

দায়িত্ব নিতে নারাজ সন্তান

নিজস্ব প্রতিবেদক: চোখ দুটি বিদীর্ণ, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পড়েছে অসংখ্য ভাজ।বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে শরীর। হাসপাতালের বেডে শুয়ে বসে দিন কাটাচ্ছেন।আর অপেক্ষায় আছেন স্বজনের। কেউ কথা বলতে এলে চেয়ে থাকেন চোখের চাহনিতে।কথা বলার সময় ঘটছে স্মৃতিভ্রম।

বলছিলাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি এক বৃদ্ধা মা স্বরসতী ধরের (৭০) কথা। মাইল্ড স্টোকের জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন গত সাতদিন ধরে। সেখানে নিউরোলজি ওয়ার্ডে চলছে তার চিকিৎসা। হাসপাতালে ভর্তির পর স্বরসতীর সিটিস্ক্যান পরীক্ষা থেকে যাবতীয় খরচ বহন করে হাসপাতাল ও চিকিৎসক ডা. পিযুষ মজুমদার।

সাত দিন পার হতে চললেও একটি বারের জন্যও স্বরসতীর খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি স্বজনরা। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও পড়েন আছেন হাসপাতালে। পরিবারের কোনো সদস্যের দেখা না মেলায় স্বরসতীকে নিয়ে বেকাদায় পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের গিয়ে দেখা যায়, একপাশের একটি বেডে শুয়ে পরিবারের সদস্যের পানে চেয়ে আছেন স্বরসতী। তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বলছিলেন, ‘কেউ তো নো আইয়ির কেনে যাইতাম?’ কথাটি বলতেই তার চোখ দুটি জলে টলমল করছিল।

ওয়ার্ড সূত্রে জানা যায়, গত ৮ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন স্বরসতী ধর। স্বামী রণজিত ধরসহ থাকেন নগরের হালিশহর থানার সবুজবাগ এলাকায়। স্বরসতীকে হাসপাতালের আনার পর স্বামী রনজিত ধর ওয়ার্ডে মূর্ছা যান। তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন।

স্বরসতী জানান, তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায়। বপন ধর নামে তার এক ছেলে রয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে কেউ তার খোঁজ নেয়নি। কথা বলার ফাঁকে প্রায় সময় স্বরসতীর কণ্ঠে ঝড়ে হা-হুতাশ। আর চোখে-মুখে ছিল চাপা কান্না। ওয়ার্ডে আসা অন্য রোগীর স্বজনদের দেখে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন।

পরিবার সদস্যের না পেয়ে হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী, ওয়ার্ডবয় আর চিকিৎসকদের সাথে কষ্টের সময় পার করছেনে একাকি। সুবজবাগে যেতে চাইলেও টাকা না থাকায় যেতে পারছেন না বলে কান্নায় চোখ ভিজে আসে স্বরসতীর। স্বরসতীর পাশে বসে কথা বলার সময় আশেপাশের বেডের অনেক রোগী ও স্বজনরা তার কথা শুনে আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন। তার পরিচর্যা করার স্বাস্থ্যকর্মীরাও কেঁদেছেন তার দুঃখে।

নিউরোমেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. পীযুষ মজুমদার চট্টলার খবরকে বলেন, তিনি এখন সুস্থ আছেন। তার সিটি স্ক্যান থেকে শুরু করে যাবতীয় খরচ আমরা বহন করেছি। গতকাল হাসপাতালে থেকে ছাড়পত্র দিয়েছে। কিন্তু পরিবার ও আত্মীয়স্বজন না আসায় তাকে ছাড়তে ভরসা পাচ্ছি না। সঠিকভাবে ঠিকানা বলতে পারছেন না। কার ভরসায় ছেড়ে দিব? হাসপাতালের ভর্তি হওয়া রোগী তথ্য বিররণীর তালিকা থেকে যোগাযোগ করা হয় স্বামী রণজিতের সঙ্গে। গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় তিনি হাসপাতালে আসতে পারছেন না জানিয়ে ছেলে বপনের সাথে কথা বলতে বলেন। স্বরসতী এক ছেলের কথা বললেও, বপন ধর বললেন তারা দুই ভাই, দুই বোন। এক বোন কক্সবাজার ও আরেক বোন কুমিল্লায় থাকেন।

বপন ধর চট্টলার খবরকে বলেন, ভর্তির আগে আমাকে কিছু জানায়নি। হাসপাতাল থেকে ফোন আসার পর বুঝতে পারি মা হাসপাতালে ভর্তি। খুলনায় চাকরি করার কারণে কিছু করতে পারছি না। আমার আব্বু এখন দায় এড়াতে চাইছে। উনি অসুস্থ না। উনাকে জমির ব্যাপারে ফোন করেন দেখবেন আপনার সাথে দেখা করবে। তার স্ত্রী হওয়ায় দায়িত্ব আমাদের চেয়ে বেশি। ছেলে হিসেবে মার প্রতি আপনার দায়িত্ব কী ছিল এমন প্রশ্নে মুঠোফোন বিচ্ছিন্ন করে দেন বপন। এরপর ফোন করেও তার সাথে সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।

আরকে/জেএইচ/চখ

এই বিভাগের আরও খবর