chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

একদিনেই লিটারে বাড়ল ৯ টাকা, অস্থিতিশীল ভোজ্যতেলের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক: নগরের একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা নুসরাত খন্দকার। পরিবারসহ ভাড়া বাসায় থাকেন ওয়াসার পশ্চিম হাই লেভেল রোড এলাকায়। স্কুল শেষে ফেরার পথে মেয়ের ফোন পেয়ে তিনি দোকানে ঢুকেন প্রয়োজনীয় সদাই সারতে। সয়াবিন তেলের দাম শুনেই নুসরাতের হাসিমুখ যেনো ফিকে হয়ে যায়।

হতাশ পাঁচ লিটারের জায়গায় দুই লিটার তেল নিয়ে বাসার পথে হাঁটা দেন নুসরাত। দুদিন আগেও তিনি প্রতি লিটার সয়াবিন তেল কেনেন ১৪২ টাকায়। আজ তার কাছ থেকে লিটারে ৫ টাকা বাড়তি চান দোকানি।

নুসরাত খন্দকার চট্টলার খবরকে বলেন, কয়েকদিন ধরেই সব জিনিসের দাম বাড়তির দিকে। চাল, চিনি, ডিমসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমছে না, উল্টো সয়াবিন তেল ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়তি চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই, বাধ্য হয়ে কিনতে হচ্ছে।

নুসরাতের বক্তব্যের সত্যতা খুঁজতে বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরের বৃহৎ রিয়াজউদ্দীন ও অভিজাত কাজীর দেউড়ি কাঁচাবাজারে খোঁজ নেওয়া হয়। এদিন বাজারে খোলা সয়াবিন তেল ১২৮ থেকে ১৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর পাম ওয়েল খুচরায় ১২০ টাকা কেনা বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, মানভেদে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ২ লিটার তেল ২৯০ থেকে ২৯৭ টাকা এবং ৩ লিটার সয়াবিন তেল ৪৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রুপচাঁদা ব্র্যান্ডের পাঁচ লিটারের তেল ৭০০ থেকে ৭১০ টাকা, তীর, পুষ্টি ও বসুন্ধরা ব্র্যান্ডের তেল ৬৯০ থেকে ৬৯৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে বাজারে আসা পাঁচ লিটারের এসব ব্র্যান্ডের নতুন সয়াবিন তেল ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত বাড়বে। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৭২৭ টাকা দরে কিনতে হবে ক্রেতাদের।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েকদিন ধরে পরিবেশনকারী কোম্পানিগুলো তেলের দাম বাড়াতে চেয়েছিল। লকডাউন খুলে দেওয়ার পর কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে দেয়। গত বছর পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। এ বছর তা দেড়গুণ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৯০ থেকে ৭০০ টাকায়। মে মাসে লিটারে ৯ টাকা বাড়লেও, জুনের শেষের দিকে লিটারে ৪ টাকা কমানো হয়েছিল।

নতুন করে সয়াবিনের দাম বাড়ায় অন্যান্য তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা। কাজীর দেউড়ির খান স্টোরের মুদি দোকানি রহিম চট্টলার খবরকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গতকাল মঙ্গলবার বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ৯ টাকা বেড়েছে। কাল থেকেই বাড়তি দামে সয়াবিন তেল কিনতে হবে। নতুন পণ্য এলেও দাম স্বাভাবিক হবে না। কিন্তু আপনি দেখেন কারো কোনো সাড়াশব্দ নেই। কেউ এটি নিয়ে বিন্দুমাত্র কথা বলছে না। চালের দাম বেড়েছে, চিনির দাম বাড়ালো এখন তেলও বেড়েছে। এ দেশে নীরবে সব কিছুর দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা যায়। আমাদের ক্রেতাদের টাকা বেশি, তারা কিনতে পারছেন।

মেসার্স জীবন গ্রোসারির আরেক বিক্রেতা চট্টলার খবরকে বলেন, এ যেনো মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। বাজারের সব কিছুর দাম বেশি। আমাদের বিক্রি তো বাড়েনি। বরং ক্রেতাদের সাথে আমাদের বাকবিতণ্ডা হয়। ৫ থেকে ১০ লিটার কেনা ক্রেতা এখন ২ লিটার তেল কিনছে। পত্র-পত্রিকায় তেলের সিন্ডিকেটের কথা শুনলেও এদের বিরুদ্ধে কোনা ব্যবস্থা নিতে দেখছি না। বড় ব্যবসায়ীদের আরও আন্তরিক হতে হবে।

অপরদিকে আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের ইচ্ছের ওপর ভোজ্যতেলের দাম গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান রিয়াজউদ্দীন কাঁচাবাজারের মুদি দোকানী মো. আব্দুল আজিজ। তিনি দাবি করেন, তেল আমদানিতে জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাজারদর উঠানামা করছে। সয়াবিনের দাম বাড়লে অন্য তেলের দামও বাড়বে।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নগরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাকে করে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করছে। সেখানে তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জামাল উদ্দীন চট্টলার খবরকে বলেন, আমরা খোলা পর্যায়ে কোনো তেল বিক্রি করি না। নগরের নির্ধারিত স্থান থেকে ক্রেতারা লিটার প্রতি ১০০ টাকায় সয়াবিন তেল কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। আমরা চেষ্টা করছি গ্রাহকদের স্বল্পমূল্যে পণ্য পৌঁছে দিতে।

আরকে/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর