পাবজি কি সত্যিই বন্ধ হয়েছে?
প্রযুক্তি ডেস্ক: উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পেয়ে পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ অনলাইন গেমস ও টিকটক, বিগো লাইভের মতো অ্যাপস বন্ধের কার্যক্রম শুরু করে বিটিআরসি। কিন্তু তাই বলে কি সত্যি পাবজি খেলা বন্ধ হয়ে গেছে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিটিআরসি পাবজি বন্ধ করে দিলেও এখনও দিব্যি গেমসটি খেলে যাচ্ছেন এর ব্যবহারকারীরা। রাজধানীর অলিগলি কিংবা বাসার ছাদে দল বেধেই গেমসটি খেলতে দেখা যাচ্ছে অনেককেই।
মূলত বিটিআরসি গেমসটি ব্লক করে দিলেও বিকল্প ব্যবস্থা ভিপিএন এর মাধ্যমে পাবজি এখনো সচল রয়েছে। অনেকেই আগে থেকেই ভিপিএন নামিয়ে রেখেছিলেন পাবজি খেলার জন্য। তবে প্রথম প্রথম ভিপিএন দিয়ে খেলতে সমস্যা হলেও পরবর্তীতে সেটিও সমাধান হয়ে গেছে। এখন ভিপিএন দিয়েও আগের মতই ব্যবহার করা যাচ্ছে গেমসটি।
বিকল্প নেটওয়ার্কে অনলাইন গেম পাবজি ও ফ্রি ফায়ার চালু থাকায় একে ‘প্রাযুক্তিক ব্যর্থতা’ বলছেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, শিশুদের মনোবিকাশে বাধা ও উগ্র মানসিকতা তৈরি করে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার গেম। সেজন্যই বন্ধ করাটা জরুরি ও সময় উপযোগী ছিল। কিন্তু গেম দুটি পুরোপুরি বন্ধের সক্ষমতা বিটিআরসির নেই। যে কারণে বন্ধের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মাহফুজা খানম গণমাধ্যমকে বলেন, অতিরিক্ত হিংস্রতা শিশু-কিশোরদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। পরবর্তী জীবনে শিশুদের হিংস্র করে তুলতে পারে এ গেম। আলোচিত ‘ব্লু হোয়েল’ গেমের মতোই এ দুটি গেম শিশু-কিশোরদের পারিবারিক, সামাজিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত করতে পারে, ভায়োলেন্ট হয়ে যেতে পারে। মানসিক নানা রোগের কারণও হতে পারে।
এদিকে বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র গণমাধ্যমকে বলেন, নির্দেশনা পাওয়ার পরই বাংলাদেশে পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থায় এখনো গেমসগুলো খেলা যাচ্ছে। দেশে ভিপিএন বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে ভিপিএনের গতি কমিয়ে দিয়ে খেলায় বিঘ্ন ঘটানো সম্ভব।
এদিকে দেশে বর্তমানে ব্যবহৃত ইন্টারনেটের অর্ধেকই খরচ হচ্ছে পর্নোগ্রাফি, টিকটক, ফ্রি-ফায়ার কিংবা পাবজির পেছনে। জাতীয় প্রেসক্লাবে নিরাপদ ইন্টারনেট বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে উঠে আসে উদ্বেগজনক এমন তথ্য।
তবে বিটিআরসি বলছে, ফ্রি-ফায়ার-পাবজির পর, টিকটক-লাইকির মতো অ্যাপ বন্ধের প্রক্রিয়া চলছে। সবার জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট নিশ্চিতে আইন করার কথাও ভাবা হচ্ছে।
করোনাকালে দেশে হঠাৎ করে আলোচনায় টিকটক ও লাইকি। এসব অ্যাপে তারকা বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে নারী পাচারসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়।
ফ্রি-ফায়ার ও পাবজির মতো অনলাইন গেম কিশোর-তরুণদের আগ্রাসী করতে তুলছে বলে নানা মহল থেকে অভিযোগ ওঠার পর বন্ধ করা হয়েছে এগুলো। বন্ধ করা হয়েছে ২০ হাজারের বেশি পর্ন সাইটও।
তবে শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক দাবি করলেন, বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত ২৬শ’ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের অর্ধেকই ব্যয় হচ্ছে ভার্চুয়াল গেম, টিকটক, লাইকি ও পর্নোগ্রাফি দেখার পেছনে।
তিনি বলেন, শতকরা ৫০ শতাংশই ব্যবহার হচ্ছে পর্ন, গেমিং, বুলিংয়ে।
দেশে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতে নতুন আইন করার তাগিদ মুঠোফোন অপারেটরদের। চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানালেন বিটিআরসির শীর্ষ কর্মকর্তা।
তারা বলেন, চতুর্থ শ্রেণী থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত ইন্টারনেট এডুকেশন চালু করা উচিত। সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক গাইডলাইন দিতে হবে। আমরা এখন যে যার মতো কাজ করে যাচ্ছি।
বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় বলেন, সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক একটা পলিসি এখন আসলেই দরকার। আমাদের স্থায়ী সমাধানে যেতে হবে।
বর্তমানে দেশে মুঠোফোন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১১ কোটি ৩৬ লাখ। আর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন এক কোটি গ্রাহক।
এন-কে