chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে মৃত্যুর ঘটনা, এ দায় কার?

নিজস্ব প্রতিবেদক: সালেহ আহমেদ (৫০)। নগরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা। সেখানেই সবজি বিক্রি করে চালাতেন সংসার। গত বুধবার (২৫ আগস্ট) বৃষ্টি মাথা নিয়ে বের হয়েছিলেন ফটিকছড়ির মাইজভান্ডারীর উদ্দেশ্যে। মুরাদপুরে এসেছিলেন ফটিকছড়ির বাসের জন্য। তবে  রাতভর বৃষ্টিতে মুরাদপুর এলাকায় হাঁটু পরিমান পানি জমেছিল। ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পা পিছলে তিনি নালায় পড়ে যান।  সালেহ আহমেদকে পড়ে যেতে দেখে অনেকে এগিয়ে এলেও, তীব্র পানির স্রোতে  মুহূর্তের মধ্যে তিনি তলিয়ে যান।

নগরীর জলাবদ্ধতা মুরাদপুরে নালায় পড়ে নিখোঁজ ব্যবসায়ী
বুধবার (২৫ আগস্ট) নগরীর জলাবদ্ধতা মুরাদপুরে নালায় পড়ে নিখোঁজ সবজি ব্যবসায়ী।

ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের যৌথ অভিযানের ৩০ ঘণ্টায়ও তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যমে সালেহের নালায় পরে যাওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। মর্মান্তিক ঘটনাটি অনেকের মাঝে দাগ কাটে। দিনভর চট্টগ্রামবাসী অপেক্ষায় ছিল তার সন্ধ্যানের। তার পরিবারও তাকিয়ে রয়েছে তাকে জীবিত কিংবা মৃতদেহ হলেও পাওয়ার জন্যে।

গত ৩০ জুন নগরের মেয়র গলির টি অ্যান্ডটি এলাকায় খালে পড়ে যায় সিএনজি অটোরিকশা। এতে দুইজনের মৃত্যু হয়।

শুধু কি সালেহ আহমেদ। গত ৩০ জুন নগরের মেয়র গলির টি অ্যান্ডটি এলাকায় ঘটে আরকেটি মর্মান্তিক ঘটনা। চিকিৎসক দেখাতে সিএনজি অটোরিকশা চেপে বের হয়েছিলেন তিন আরোহী। তবে খালের ওপর নির্মিত লোহার ব্রিজ পার হওয়ার সময় অটোরিকশাটি খালে পড়ে যায়। খালে বৃষ্টির পানির স্রোতে অটোরিকশাটি পানিতে ডুবে যায়। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা দুজনকে উদ্ধার করলেও, ভেতরে আটক পড়ে সিএনজি অটোরিকশার চালকসহ এক নারী। পরে তাদের মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। নগরবাসীর প্রশ্ন এই মৃত্যুর দায় কে নেবে।

কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে অধিকাংশ এলাকায় জলজটে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে।  বৃষ্টির পানিতে সড়ক আর ফুটপাত একাকার হয়ে যায়। থৈ থৈ পানিতে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে খানাখন্দ সড়ক, ভঙ্গুর ম্যানহলে মাড়িয়ে পথচারীদের ছুটতে হয় গন্তব্যস্থলে। তবে সামান্য ভুলেই পা পিছলে গেলেই মৃত্যুর ঘটনা যেনো নতুন করে উদ্বেগের কারণ নগরবাসীর কাছে। নালা ও খালের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী আর ফুটপাতের ম্যানহোল সংস্কার না হওয়ায় এখন গলার কাঁটা হয়েছে দাঁড়িয়েছে।  বরাবরের ন্যায় এসব ঘটনার দায় এড়াতে ব্যস্ত সেবা সংস্থা চসিক ও সিডিএ। নালা ও খালা পাশের নিরাপত্তা বেষ্টনী রেলিং করা না হলে মৃত্যু ও দুর্ঘটনা দুই বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে মৃত্যুর ঘটনা, এ দায় কার?
পতেঙ্গা থানার সামনে ড্রেনের স্লাব ভাঙ্গা থাকায় ভোগান্তি পোহাচ্ছে এলাকার মানুষজন। থানা থেকে বের হলে গেটের বাম পাশেই গর্ত থাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় পথচারীদের। আলোকচিত্রী – এম ফয়সাল এলাহী

নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া চট্টলার খবরকে বলেন, দায়িত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে নাগরিকদের জন্য করণীয় বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। কিন্তু আমরা অনেকক্ষেত্রে পাশ কেটে যেতে চাই। যেসব ফুটপাত ও সড়কের পাশে নালা-ড্রেন আছে, সেখানে অবশ্যই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে রেলিং করে দিতে হবে।  এটি তাদের রুটিন কাজ। কিন্তু আমরা দেখতে পাই ফুটপাতে ম্যানহলগুলো ঠিকভাবে সংস্কার হয় না, সড়কে খানাখন্দ। যার কারণে বৃষ্টিতে পাথচারী ও গাড়ি উল্টে গিয়ে মৃত্যু ও দুর্ঘটনার ঘটছে। সংস্কার ও রেলিং করা না হলে বর্ষায় ছাড়াও বছরের অন্য সময়ে এমন ঘটতে অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।

তবে সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী চট্টলার খবরকে বলেন,  এসব কাজ এখন আমাদের হাতে নেই।  জলাবদ্ধতাসহ নালা ও খাল সংস্কারের মেগা প্রকল্পের কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।  যাবতীয় বিষয়গুলো তারাই দেখভাল করছেন।

নালা ও খালের পাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী করপোরেশনের রুটিন ওয়ার্ক কাজের মধ্যে পড়ে এমন প্রশ্নে মেয়র বলেন, এখন মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে আমরা পরিকল্পনা করে এসব কাজ করব।

জানতে চাইলে সিডিএর মেগা প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আহমেদ মঈনুদ্দিন চট্টলার খবরকে বলেন, মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে। অন্তত পক্ষে যেসব ফুটপাতের পাশে খাল ও নালা উন্মুক্ত রয়েছে সেখানে আমরা রেলিং ও স্ল্যাব বসানোর চিন্তা করছি। যাতে করে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াও কেউ ময়লা ফেলতে না পারে। এক্ষেত্রে সুফল পেতে নগরবাসীকে কিছুটা ধৈর্য ধরার অনুরোধ করছি। তবে এসব রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের ওপর বর্তায়।

আরকে/এসএএস/চখ

এই বিভাগের আরও খবর