chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

পাইকারীতে কমলেও, খুচরায় চড়া চালের দাম

রকিব কামাল: ধানের ভরা মৌসুমেও বেশ কয়েক মাস অস্থির ছিল দেশের চালের বাজার। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে পাইকারীতে বস্তা প্রতি হাজার টাকার বেশি গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। ফলে খুচরা বাজারে সাধারণ ক্রেতাদের বস্তা প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বাড়তি দামে চাল কিনতে হয়েছে। তবে সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা ও সরু সব ধরনের চালের দাম বস্তা প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কমেছে।

চালের শুল্ক হার কমানোর সরকারি সিদ্ধান্তে বাজারে স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দাম কমলেও মিল মালিক, মধ্যসত্ত্বাভোগী ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর কারসাজি নিয়ে চিন্তিত আমদানিকারক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা। এদিকে পাইকারীতে দাম কমে এলেও, এর সুফল মিলছে না খুচরা পর্যায়ে।

চট্টগ্রামের পাইকারী ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, দু থেকে তিনদিনের মধ্যে খুচরা বাজারেও চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে। চট্টগ্রামে চালের প্রধান দুই পাইকারি চালের বাজার চাক্তাই ও পাহাড়তলী বাজারের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী চালের দাম কমে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও চাল আমদানির সুযোগ থাকায় আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলছেন ব্যবসায়ীরা।

আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এলসির করা চাল বাজারে আসবেন বলেও ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় রয়েছে। তখন এসব চাল পাইকারী গুদামে আসলে পাইকারী বাজারে আরও কবরে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে।

গত ১২ আগস্ট সরকার ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ শুল্ক হার কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল।

খাতুনগঞ্জের আনাস রাইস পাইকারী এজেন্সীর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টলার খবরকে বলেন, কৃষকদের হাতে কোনো ধান নেই। এর আগেই মিল মালিক ও বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামে ধান কিনে মজুদ রেখেছে। অথচ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব ধান সংরক্ষণের সুযোগ নেই। সেখান থেকে চাল আসছে না। চট্টগ্রামের কোনো ব্যবসায়ীর হাতে চাল নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই। দক্ষিণ অঞ্চলের মিল মালিকদের কারসাজিতে বাজার অস্থিতিশীল ছিল। বাজার স্বাভাবিক করতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভারত ও মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি করতে হবে।

কয়েকদিন আগেও পাইকারীতে দেশি মিনিকেট আতপ চাল বস্তা প্রতি বিক্রি হতো ২৬০০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তায় ৫০ টাকা কমে এই জাতের চাল এখন ২৫৬০ টাকায় কেনাবেচনা হচ্ছে। মানভেদে ভালো মানের নাজিরশাইল সিদ্ধ ১৬৫০ থেকে ১৬০০ টাকা, এবং ১৫০০ থেকে ১৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে দেশি মিনিকেট ২৮০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ২৬৫০ থেকে ২৭৫০ টাকা, মানভেদে ভালো মানের জিরাশাইল সিদ্ধ ২৯৫০ থেকে ২৯৭০ টাকা, মিনিকেট সিদ্ধ ২৪২০ থেকে ২৪৭০ টাকা, স্বর্ণা সিদ্ধ মানভেদে ২১০০ থেকে ২১৫০ টাকা ও ২৪২০ থেকে ২৪৭০ টাকা, বাসমতি সিদ্ধ ২৯০০ থেকে ২৯৫০ টাকা, দিনাজপুরী পাইজার ২৪৫০ থেকে ২৫০০ টাকা, কাটারিভোগ ২৯০০ থেকে ২৯৫০ টাকা, চিনিগুড়া ৩৬০০ থেকে ৩৬৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ৩৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তবে লকডাউন তুলে দেওয়ায় বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান বাড়লে চিনিগুড়ার দাম কিছুটা বাড়বে বলে ধারণা করছেন ব্যবসায়ীরা। পর্যাপ্ত চালের মজুদ থাকায় দেশি বিন্নি চাল বস্তায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

দেশের বিভিন্ন এলাকা অঞ্চল ছাড়াও চট্টগ্রামের চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, পাহাড়তলী থেকে বিপুল পরিমান চাল কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চাহিদা পূরণ করতে হয়। ফলে স্থানীয়ভাবে সংকট দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন মেসার্স এস.বি এন্টারপ্রাইজের পরিচালক কাজল দাশ।

তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, চাক্তাই থেকে প্রতিদিন ২০ টির বেশি ট্রাকে ছয় হাজারের বেশি চাল নিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছায়। এছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও সেখান চাল পাঠাতে হচ্ছে। স্থানীয় সংকটকে কাজে লাগিয়ে মধ্যস্তকারী একটি পক্ষচাল মজুত করে রাখে। টেন্ডার করে বাজার জিম্মি করে রাখে। যাতে করে পাইকারীতে দাম বাড়ায় খুচরা পর্যায়েও, সাধারণ ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্থ হন। ১০ লাখ টন চাল আমদানিতে কিছুই হবে না, টনে টনে চাল আমদানি করতে হবে।

এদিকে শুল্ক কমানোর বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন।

তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, শুল্ক কমানোর কারণে বাজারে স্বস্তি ফিরেছে। এতদিন বিশাল একটি সিন্ডিকেটের কারণে বাজার অস্থিতিশীল ছিল। তারা লকডাউনকে পুঁজি করে কৃত্রিম সংকট তৈরী করেছিল। এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অফিস চলছে। এমন সময়ে সরকারের কার্যকরী সিদ্ধান্তে বাজারে চালের চাহিদা বাড়বে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীরা সরকারকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

এদিকে পাইকারি বাজারের চালের দাম সুফল পাচ্ছে না সাধারণ ক্রেতারা। খুচরায় প্রতি কেজি চালের গত সপ্তাহের মতোই দুই থেকে ছয় টাকা বাড়তি। আগে মিনিকেট আতপ চাল খুচরায় ৪৮ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৫৪ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশাইল সিদ্ধ কেজিতে চার তিন টাকা বেড়ে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, মিনিকেট সিদ্ধ দুই টাকা বেড়ে ৫৪ থেকে ৫৬ চাকা, দিনাজপুরী পাইজাম প্রতি কেজিতে ছয় টাকা বেড়ে ৬২ থেকে ৬৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে দুদিন পর পাইকারীর ন্যায় খুচরায় পর্যায়ে দাম কমে আসার কথা জানিয়েছেন পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন।

আরকে/চখ/এনএনআর

এই বিভাগের আরও খবর