chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সাধারণ ওয়ার্ডে রোগী কমলেও হাহাকার আইসিইউতে

রকিব কামাল: করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোকে ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেবা পেতে হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে সাধারণ রোগীদের। একজন রোগীর মৃত্যু সংবাদ এলে দৌড়ঝাঁপ শুরু হতো আরেক রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করাতে।

গত কয়েক দিনে সংক্রণের হার কমে আসায় এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। স্বস্তি ফিরেছে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে। তবে হাসপাতালে সাধারণ ওয়ার্ডে রোগী কমলেও, আইসিইউতে একটি সিটের জন্যও হাহাকার চলছে। অধিকাংশ হাসপাতালগুলোর আইসিইউ শয্যা রোগীতে পরিপূর্ণ। হাসপাতালে জটিল রোগী ঘিরে চিকিসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাঁসফাঁস অবস্থা।

সংক্রমণ কমে আসলেও কমেনি মৃত্যু হার। এক্ষেত্রে সংক্রমণ কমার বিষয়টিকে সংশ্লিষ্টরা ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও, আগামী দুই সপ্তাহ বাড়তি পর্যবেক্ষণে রাখার দাবি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস’র (বিআইটিআইডি) ল্যাব ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান ড. মামুনুর রহমান চট্টলার খবরকে বলেন, লকডাউনের বিধিনিষেধের কারণে সংক্রমণ হার কমে এসেছে। এটিকে আমরা ইতবাচক হিসেবে দেখছি। তবে হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে রোগী কমলেও, আইসিইউ কিন্তু কোথাও খালি নেই।

করোনা সংক্রমণ শুরুর পর গত বছর বিআইটিআইডিতে ৫টি আইসিইউ ও ৪৫টি সাধারণ ওয়ার্ড নিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৪৫টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ভর্তি আছেন ২১ জন। তবে আইসিইউ খালি নেই।

ড. মামুনুর রহমান বলেন, লকডাউন এবং ভ্যাকসিন প্রদানে মানুষ সচেতন হওয়ায় হয়তো আমরা সুফলটা পাচ্ছি। কিন্তু এটিকে আত্মতৃপ্তি ভেবে উদাসীন হলে চলবে না। আগামী দুই সপ্তাহ নাগরিকদের বাড়তি পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এই পিক আওয়ারাটাই সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। গ্রাম-শহর সর্বত্র মাস্ক পরিধান করতে হবে, অবশ্যই তিন ফুট সামাজিক দূরত্ব মানতে হবে। সবাইকে ভ্যাকসিন নিতে হবে।

শ্বাসকষ্টের জটিলতায় মাকে নিয়ে জেনারেল হাসপাতালে এসেছিলেন ব্যাক কর্মকর্তা শহিদুর রহমান। আইসিইউ না থাকায় শহিদুরকে পড়তে হয় বিপত্তির মধ্যে। বাধ্য হয়ে অসুস্থ মাকে নিয়ে তিনি ছুটেন বেসরকারি একটি হাসপাতালে। করোনাসহ জটিল উপসর্গের রোগীদের জন্য আইসিইউ ঈদের চাঁদ হয়ে ধরা দিয়েছে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গত দু’মাস ধরে শ্বাসকষ্টসহ জটিল রোগীদের আইসিইউ নিয়ে হাহাকারের কথা জানালেন হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তানজিম আহমদে।

তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, সর্বশেষ ১৫ দিনে একটি আইসিইউ শয্যার জন্য রীতিমেতা ঘাম ঝরাতে হয়েছে রোগীর স্বজনদের। এই মুহূর্তে ১৮টি আইসিইউ শয্যার সব কয়টি পরিপূর্ণ। ইতোমধ্যে পাঁচজনকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অপেক্ষমান রাখা হয়েছে। তবে সাধারণ ওয়ার্ডে রোগীর চাপ কিছুটা কম। বর্তমানে সাধারণ ওয়ার্ডে ২২টি সিট খালি রয়েছে।

অপরদিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে দুইটি আইসিইউ শয্যা খালি থাকার কথা জানিয়েছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারলে হুমায়ুন কবির। একই সঙ্গে হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ডে রোগীর চাপ কিছুটা কমে আসার কথা স্বীকার করেন তিনি।

তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করি মুমূর্ষু রোগীসহ করোনা শেষ পর্যায়ে আসা রোগীদের আইসিইউ সেবা দেওয়ার। কয়েকদিন আগেও বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের অমানবিক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। এখন পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। গত দুদিনে রোগীর চাপ কম। বর্তমানে হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় ২১৭ জন ভর্তি রয়েছেন।

সংক্রমণ কমায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও সাধারণ রোগীর চাপ কমেছে। কিছুদিন আগেও নগরের পার্ক ভিউ হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তিতে স্বজনদের দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয়েছে। বর্তমানে ২২টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে বেশ কয়েকটি খালি থাকার কথা জানিয়েছেন হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম। তবে সাধারণ ওয়ার্ডে রোগী নেই বললে চলে। একই অবস্থা ম্যাক্স হাসপাতালেও। হাসপাতালটিতে গত সাতদিনে রোগীর চাপ আগের চেয়ে কম।

করোনাকে সাধারণ সর্দি-কাশি ভাবছে গ্রামের মানুষ

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ২৩০ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় ও সাতজনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন উপজেলার।

এক্ষেত্রে সংক্রমণ কমলেও, মৃত্যুহার কমছে না। এর কারণ হিসবে অসচেতনতাকে দুষলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস’র (বিআইটিআইডি) ল্যাব ও মেডিসিন বিভাগের প্রধান ড. মামুনুর রহমান।

তিনি বলেন, এখনও গ্রামের মানুষ এটিকে সাধারণ সর্দি-কাশি হিসেবে দেখছে। অনেকে ভ্যাকসিন নিতে অপারগতা প্রকাশ করছে। সাধারণ ফার্মেসি থেকে ওষুধ এনে খাচ্ছে। যখন শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে, তখন হাসপাতালে আসছে। লাস্ট স্টেজে থাকার কারণে অনেকে হাসপাতালে আনার পথে কেউবা দুয়েকদিন পর আইসিইউতে মারা যাচ্ছে। সচেতনতা বাড়াতে জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব নেওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভূমিকা রাখতে হবে।

আরকে/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর