chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

এসব বলে আর লাভ আছে!

ইফতেখার নিলয়: ক্যামেরায় মুখ দেখাতে আপত্তি! করোনার আগে প্রবাস ফেরত একজন বাবলু দাসের এই আপত্তির আড়ালে লুকিয়ে আছে শত কষ্ট, বেদনা আর ব্যর্থতার গল্প।

করোনার আগে প্রবাস জীবন থেকে দেশে ফিরে আসেন সাতকানিয়ার বাবলু। ফিরে এসে নিজ ভাইকে সাথে নিয়ে শুরু করেছিলেন দোকানদারি। স্বপ্ন ছিলো এবার দেশেই রোজগারের ব্যবস্থা করার। করোনার থাবায় বিপর্যস্ত সেই ব্যবসাও, বাধ্য হয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানের ভরণপোষণের চাপ সামলাতে তাই নেমেছেন ভিন্নধর্মী রং পেন্সিল ও স্লেটের ব্যবসায়।

রবিবার (৮ আগস্ট) নগরীর আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে আখতারুজ্জামান সেন্টারের নিচে ক্রেতার অপেক্ষায় স্লেট ও রঙ পেন্সিলের গুণাগুণ রেকর্ডিংয়ে বাজিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় বাবলু দাসকে।

ক্রেতা বেশে সামনে গিয়ে ভিন্নধর্মী এই স্লেটের ব্যাপারে জানতে চাইলে সুন্দর করেই ব্যাখ্যা করেন গুণাগুণ। বাংলা, ইংরেজি বর্ণমালার পাশাপাশি অঙ্কের ঘরও তৈরি করা আছে ভেতরে। একইভাবে জাতীয় পতাকা, জাতীয় ফুল, আম ও গাছ আঁকার সুব্যবস্থার কথাও ব্যাখ্যা করেন।

ব্যাখ্যার মাঝখানে ব্যবসার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কেমন যেন মুখ শুকিয়ে আসে তার। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় তার ব্যবসার সাম্প্রতিক অবস্থা।
একেকটি স্লেট বিক্রি করে পান একশো টাকা। প্রতিদিন ৮-১০ টি বিক্রি হলে দেখা মিলে হাজার টাকা অথবা তার কাছাকাছি। যদিও লাভের পরিমাণ খুবই কম। তারপরেও পেটের দায়ে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করেই রাস্তায় বসে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ক্রেতার।

যার অপেক্ষায় বসে থাকা সেই ক্রেতার দেখা মিলছে কালেভদ্রে দুয়েকবার। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় এই বস্তুর ক্রেতার তীব্র সংকট। মূলত এই স্লেটের ব্যবহারকারী শিশুরা। অক্ষরজ্ঞান লাভের প্রথম পর্যায়ে এটি ব্যবহার হয়।

নতুন শিশুর অক্ষরজ্ঞান লাভের অধ্যায়ও এখন জুম অ্যাপসে আবদ্ধ। তাই পরিবার চালাতে রাস্তায় স্লেটের ব্যবসায় নামা বাবলু দাসের আর্থিক অবস্থাও সংকটাপন্ন।

প্রবাস জীবনের গল্প জানতে চাইলে আক্ষেপে তা মুখে আনেননি। আগের দিনগুলোই যে সুখের ছিলো এতেই তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। নিজেই বললেন, ‘এসব বলে আর লাভ আছে?’ তারপর মুখটা ঘুরিয়ে নিলেন অন্যপাশে। কয়েক সেকেন্ড মুখ লুকিয়ে আবারও মনযোগ রাস্তার দিকে। প্রত্যাশা ক্রেতার।

ক্রেতা এসে স্লেট কিনলেই পকেটে জুটবে টাকা। টাকা দিয়ে কেনা হবে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। তবে মেটানো সম্ভব নয় দুই সন্তানের আবদার। করোনা মহামারিতে এভাবেই কতশত বাবা প্রতিনিয়ত সন্তানের আবদার মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তার কোনো সঠিক হিসেব বোধহয় কারোরই জানা নেই।

ইনি/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর