chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সুযোগ-সুবিধার অভাব, তবুও নিরলস পরিশ্রম অ্যাম্বুলেন্স চালকদের

ইফতেখার নিলয় : মোহাম্মদ রনি। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে অসুস্থ রোগী আনা-নেওয়ার পেশায় কাজ করে যাচ্ছেন। কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন এ জীবনের নানা তুচ্ছ রূপ। নিষ্ঠুর এই দুনিয়ায় টিকে থাকার জন্য মানুষের ছটফট করা দৃশ্য এখনও স্মৃতিতে নিয়মিতই ঘোরপাক খায়, কখনও বা হয়ে যান আবেগ তাড়িত। মহামারিকালীন সময়ে সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকলেও তাই তীব্রে ঝুঁকি নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন করোনাসহ সকল রোগী আনা-নেওয়ার কাজ

দেশে করোনা সংক্রমণ চলছে প্রায় দেড় বছর ধরে। দিনকে দিন করোনার ঊর্ধ্বমুখী হারে বিপর্যস্ত যখন সাধারণ মানুষের জন-জীবন, সে মূহুর্তেও সেবাখাতের এই সৈনিকরা পিছপা হয়ে যায়নি করোনা রোগী আনা-নেওয়ার কাজ থেকে। অ্যাম্বুলেন্স চালকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনা রোগীর স্বজনদের চেয়েও রোগীর কাছে তারাই আপন হয়ে যান।

শুধুমাত্র রোগী বহন করার কাজ করেই থেমে নেই। রোগীর মৃত্যু হলে সেই লাশের দাফন কার্য সম্পাদনেও এগিয়ে আসেন তারা। করোনার শুরুর সময়ে তো করোনা রোগীকে বহন করার কাজে রোগীর স্বজনদের চেয়ে তাদেরই রাখতে হয় মুখ্য ভূমিকা। আতঙ্কে অসুস্থ বাবাকে স্পর্শ করেনি ছেলে-মেয়েরা, এমন পরিস্থিতিতে বৃদ্ধ রোগীকে নিজেরাই চারতলা থেকে নিজেদের হাতে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে নেন ঝুঁকি নিয়ে।

আতঙ্ক থাকলে কাজ করা সম্ভব হয়না তাই আতঙ্ককে দূরে ঠেলেই কাজ করে যাচ্ছি। নিজেদের গাড়িতে করোনা রোগীর মৃত্যুও দেখেছি। আমাদের চিন্তা থাকে কিভাবে রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিবো সেটা নিয়ে। এই পেশা ঝুঁকির অভাব নেই এবং একইসাথে কষ্টের হলেও, মানুষেরা সেবা করে যাচ্ছি এটাই তৃপ্তির বলে, আমাদের জানান চমেক এলাকার অ্যাম্বুলেন্স চালক রিপন।

সুযোগ-সুবিধার অভাব, তবুও নিরলস পরিশ্রম অ্যাম্বুলেন্স চালকদের

মোহাম্মদ সাগরের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে, সেবামূলক কাজে জড়িত থেকে পূর্ণ সেবাই প্রদান করেছেন তিনি। গত দুদিন আগেও এক করোনা রোগীর লাশ নিজ হাতে গোসল দিয়ে নোয়াখালীর বসুরহাটে নিয়ে পৌঁছে দেন। দীর্ঘ এই যাত্রায় রোগীর স্ত্রী ছাড়া আর কেউই ছিলোনা সাথে। তাই দায়িত্ববোধ থেকেই নিজ হাতে গোসল দেন সেই রোগীর।

সারাদেশে করোনার এমন দুঃসময়ে চট্টগ্রামের অবস্থাও ব্যতিক্রম নয়। করোনা ছাড়াও অন্যান্য রোগীদের অধিকতর সেবার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা নেওয়ার প্রস্তাব এলেও আপোষ করেননা দুঃসময়ের এই সম্মুখসারির যোদ্ধারা। তাই নেই কোনো ছুটি, নেই সময়ের বাছ-বিছারও। যেকোনো সময়েই ছুটে যান রোগীর সেবায়।

চমেক এলাকার অ্যাম্বুলেন্স কমিটির সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণের কাজ নিয়োজিত আব্দুল্লাহ আল সুমন চট্টলার খবরকে বলেন নিজেদের দুর্দশার কথা, ‘আমরা কাজ করলেও পর্যাপ্ত সম্মান নাই, আমরা স্বল্প শিক্ষিত হতে পারি কিন্তু এই যে এত ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি এখানেও আমারা বেশি ভাড়া নিচ্ছি বলে অনেকেই প্রশ্ন তোলে। ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাও আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। গ্লাভস কিংবা পিপিইও আমাদের সরবরাহ করা হয়নি।‘

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অ্যাম্বুলেন্স মালিক কল্যাণ সমিতির আহবায়ক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে ১৩১ জন সদস্য আমাদের নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। সবাই নিষ্ঠারব সাথে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। করোনার কারণে আমাদের নির্বাচন থমকে আছে। নির্বাচনটা হয়হে গেলে চালকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয় নিয়ে আলাদা বৈঠক হবে।‘

প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এমন কঠিন পরিস্থিতিতেও সামনে জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়েও কাজ করে যাওয়া এসকল অ্যাম্বুলেন্স চালকদের দাবি পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার।

এই বিভাগের আরও খবর