chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চায় চবি শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার মহামারীর মধ্যে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ রয়েছে প্রায় দেড় বছর ধরে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে পরীক্ষা দিতে চাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-২০১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান। নিয়ম অনুযায়ী চতুর্থ বর্ষে থাকার কথা থাকলেও তিনি এখনো দ্বিতীয় বর্ষ শেষ করতে পারেননি। বিভাগ থেকে কয়েক বার রুটিন তৈরি হলেও পরীক্ষা শুরুর আগেই সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি, লকডাউন নানা কারণে পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়।

মাহমুদুল হাসান বলেন, ২০১৯ সালের পরীক্ষা এখন পর্যন্ত আটকে আছে। এক বর্ষে আর কত বছর পড়ে থাকব? এই মুহূর্তে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছে। চবি প্রশাসন থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য অনুরোধ থাকবে। এ ছাড়া উপায় নেই আমাদের।

একই অবস্থা দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রাহুল দাসের। তিনিও চতুর্থ বর্ষে তিন বছর ধরে আটকে আছেন। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাচের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছে সেই কবে। অথচ আমরা স্নাতকেই থেমে আছি। কিছুই করতে পারছি না। চবি প্রশাসন সশরীরে পরীক্ষা নিতে চায় কিন্তু পরিস্থিতি তো সেরকম দেখা যাচ্ছে না। তাহলে আর কত অপেক্ষা? অনলাইনে যেকোনোভাবে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা অন্তত করুক।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া অনুষদের ডিনবৃন্দ সশরীরে পরীক্ষার ব্যাপারে মতামত জানিয়েছেন। গত ৬ মে ইউজিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে এবং সশরীরে পরীক্ষা নিতে পারবে বলে জানায়। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিস্থিতির আলোকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ মে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমিটির এক সভায় অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দেকে আহ্বায়ক ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার (একাডেমিক) সৈয়দ মনোয়ার আলীকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে সব অনুষদের ডিন, আইসিটি সেলের পরিচালক ও রেজিস্ট্রারকে সদস্য করা হয়। এরপর ২৭ মে কমিটির সদস্যরা প্রথম সভায় মিলিত হন।

১৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় চবির সব পরীক্ষা সশরীরে গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে কিছু বিভাগ পরীক্ষা শুরু করলেও পরে স্থগিত ঘোষণা করে। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েছেন। তারা বলছেন, যেহেতু সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণ কঠিন সেক্ষেত্রে অনলাইনে যেন পরীক্ষা নেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে অনিহার কথা বলা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, অনলাইনে পরীক্ষা নিতে তাদের আগ্রহের কথা। তারাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের মতামত ব্যক্ত করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীমউদ্দিন অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে নিয়মিত লিখছেন। তার মতে,বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা এখন সময়ের দাবি। প্রয়োজনে সাময়িক সময়ের জন্য অর্ডিন্যান্স পরিবর্তন করা দরকার।

ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সালামত উল্ল্যা ভুঁইয়া বলেন, করোনা পরিস্থিতি খুব সহজে স্বাভাবিক হবে না। এক্ষেত্রে সশরীরে পরীক্ষা গ্রহণ কঠিন। সেজন্য শিক্ষার্থীদের স্বার্থে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি চিন্তা করতে হবে আমাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে বলেন, অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী সুযোগ নেই। নিতে চাইলে এটা পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী দেশের নানা প্রান্তে রয়েছে। অনলাইনে পরীক্ষায় সবার অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। তবে সব শিক্ষার্থীর টিকা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কাজ করছে।

এসএএস/নচ

এই বিভাগের আরও খবর