chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

সুজনের আহ্বানে ঘরে ঘরে আলোর মিছিল কর্মসূচি পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম সৃষ্টিকর্তার অপরূপ সৃষ্টি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য, নদ-নদী, পাহাড়, ছোট ছোট টিলায় পরিবেষ্টিত মনোরম সুন্দর চট্টগ্রাম। কিন্তু জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে চট্টগ্রাম প্রতিনিয়ত জোয়ারে ডুবছে, ভাটায় ভাসছে।

চট্টগ্রামের এই প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হলে বাংলাদেশের হৃদপিন্ড চট্টগ্রাম মৃত নগরীতে পরিণত হবে। চট্টগ্রাম মৃত নগরীতে পরিণত হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই যেকোন মূল্যে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।

অর্থলিপ্সু হায়েনাদের হাত থেকে সিআরবিসহ চট্টগ্রামের ভূপ্রকৃতি রক্ষায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচির প্রক্কালে এসব কথা বলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।

আজ শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যা ৭ টায় চট্টগ্রামের ভূপ্রকৃতি রক্ষায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক সুজনের আহবানে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে একযোগে মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রতিবাদী কর্মসূচী পালন করেন নগরবাসী।

সুজন বলেন এটা চট্টগ্রামের ভূপ্রকৃতি বাঁচানোর আন্দোলন। চট্টগ্রামের সকল জনগণ এ আন্দোলনের সাথে আছে। সুতরাং এ আন্দোলনকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, ৩০ লক্ষ শহীদদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের প্রতিটি সম্পদ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ আব্দুর রবের কবরকে যারা বুলডোজার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করতে চায় তারা স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারের প্রেতাত্মা।

এরা বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের সাথে জনগনের দূরত্ব সৃষ্টি করতে চায়। এদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া যাবেনা বলে হুশিয়ারি উচ্চারন করেন তিনি।

সুজন বলেন, চট্টগ্রামের আদি বাসিন্দাদের জায়গা একসময় বিভিন্ন সরকারী সংস্থা নামমাত্র মূল্যে হুকুম দখলের নামে অধিগ্রহণ করে। হুকুম দখলকৃত জায়গার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূপ্রকৃতি রেলওয়ের দখলে।

ফয়েসলেক, সিআরবি, টাইগারপাস, জোড় ঢেবা, রেলওয়ে একাডেমী, জিলাপী পাহাড়, বাটালী হিল, আগ্রাবাদ ঢেবা, আমবাগানসহ সৌন্দর্যমন্ডিত এসব জায়গা বর্তমানে রেলওয়ের দখলে রয়েছে।

এসব জায়গা রেলের কাজে ব্যবহার করার কথা বলে অধিগ্রহণ করলেও বর্তমানে জায়গাগুলি রেলওয়ের কোন কাজে ব্যবহার হচ্ছেনা বিধায় এসব জায়গা রেলওয়ে বিভিন্ন অর্থলিপ্সু হায়েনাদের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছে।

এসব জায়গায় অপরিকল্পিত বাণিজ্যিক স্থাপনার ফলে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হতে চলেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বলে অবশিষ্ট আর কিছু থাকবেনা।

তিনি আরো বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে রেলের কর্তাব্যক্তিরা যাত্রীসেবা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে রেলের সম্পত্তি হরিলুট করে তাদের পকেট ভারী করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাদেরকে কঠোরভাবে প্রতিরোধ করতে হবে এবং এসব দুর্নীতিবাজ তস্করদের হাত থেকে রেলকে রক্ষা করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানান তিনি।

তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন আগস্ট মাস শোকের মাস। এ মাসে বাঙ্গালির জাতির জনককে স্বপরিবারে হত্যা করেছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা। তাই শোকের মাসে আমরা কোন কর্মসূচী দিতে চাইনা। এ মাসকে আমরা ভাবগম্ভীর্যভাবে পালন করতে চাই।

কিন্তু জনগনের ভাবগম্ভীর্যকে কাজে লাগিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ যদি সিআরবিতে কোন ধরনের নির্মাণ কাজ করতে চায় তাহলে চট্টগ্রামবাসী লাঠি হাতে তাদের প্রতিহত করবে বলে জানান তিনি। তিনি চট্টগ্রামবাসীকে লাঠি নিয়ে প্রস্তুত থাকারও আহবান জানান।

তিনি বলেন, সিআরবি নিয়ে যদি কেউ কোন হটকারী সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে চট্টগ্রামবাসী শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তা প্রতিহত করবে। তিনি সরকারের কাছে শুধু চট্টগ্রামে নয় সারা বাংলাদেশে রেলওয়ের যতো অব্যহৃত জায়গা আছে সেগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার অনুরোধ জানান। নচেৎ অর্থলিপ্সু হায়েনাদের হাত থেকে এসব মূল্যবান জায়গা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।

সংবিধান সরকারকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়েছে এসব জায়গা জমি সংরক্ষণের। তাই দেশের ভূপ্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র রক্ষায় সরকারকে এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

তিনি চট্টগ্রামবাসীকে নিয়ে রেলের ডিজির উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের নিন্দা জানিয়ে বলেন চট্টগ্রামবাসী ঝাড়ু ও জুতো নিয়ে অপেক্ষা করছে, রেলের ডিজি চট্টগ্রামে আসার দুঃসাহস দেখালে চট্টগ্রামবাসী তাকে কঠোরভাবে প্রতিহত করবে।

সন্ধ্যা ৭ টা হতে শুরু হয়ে ১০ মিনিট পর্যন্ত মোমবাতি প্রজ্জ্বলন কর্মসূচীতে স্বস্ব অবস্থানে ও নগরী এবং নগরীর বাহিরে বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্পটে নানাবিধ শ্রেণীপেশার ব্যক্তিবর্গদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

আরএস/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর