chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামের পিসি রোডের কান্না এখনো থামেনি, ভোগান্তি চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগস্থল ও নগরীর অন্যতম জনগুরত্বপূর্ণ সড়কের নাম পোর্ট কানেক্টিং (পিসি) রোড। বছরের পর বছর যায় কিন্তু পিসি রোডের কান্না যেন থামে না।

এক এক করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে একাধিক পরিবর্তন এসেছে। তবে এখনো এ সড়কের ভোগান্তি কমেনি। দুর্ভোগ যেন নিত্য সঙ্গী হয়েছে এখানকার এলাকাবাসীর।

জানা যায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দীন থাকাকালে ২০১৬ সালের শুরু থেকেই পিসি রোডের নিমতলা থেকে বড়পোল পর্যন্ত অংশের কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় আকারের গর্তের সৃষ্টি হয়।

এরপর সড়কটির নয়াবাজার পর্যন্ত বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই বছরের মাঝামাঝি থেকে সড়কটিতে যান চলাচল দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।

পরে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের দিকে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে জাপানের দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়ন এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) ‘সিটি গভর্নেন্স প্রকল্পের’ আওতায় সড়কটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

পাঁচ দশমিক সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১২০ ফুট প্রস্থের পিসি রোডটি নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিলো প্রায় একশ কোটি টাকা। তবে কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে প্রকল্পটির কাজ গত বছরের জুনে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু সড়কটির নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি।

এর আগে ২০২০ সালের ৪ জুলাই তৎকালীন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ওই সড়কের নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে গিয়ে আড়াই বছর আগে শুরু হওয়া পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের তাসফিয়া থেকে অলংকার মোড় পর্যন্ত অংশের কাজ সে বছরের নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ঠিকাদারদের গাফিলতিতে তা বাস্তবায়ন হয়নি।

মাঝে প্রশাসক হিসেবে সাময়িক চসিকের দায়িত্ব পালন করেছেন আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন। তিনি বেশ কয়েকবার পিসি রোড পরিদর্শন করে কাজ শেষ করার তাগাদা দিয়ে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের হুমকিও দিয়েছিলেন। তাতেও আশানুরূপ উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ সড়কে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, করপোরেশনে একের পর এক ক্ষমতার হাত বদল হয়েছে কিন্তু সড়কটি উন্নয়নে আশানুরূপ কোন অগ্রগতি আসেনি। সময়ের কাজ সময়ে শেষ না হওয়ায় দিন দিন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এ সড়কটি। পাশাপাশি অপচয় হচ্ছে প্রকল্পের অর্থ। বাড়ছে ব্যয়।

চলতি বছরের ১ মার্চ পরিদর্শনে গিয়ে পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের নির্মাণ কাজ শেষ করতে সময় বেঁধে দিয়েছেন নতুন মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

তিনি ঠিকাদারদের হুঁশিয়ার করে বলেন, “অতীতে কী করেছেন, তা ভুলে যান। চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে কাজ শেষ না করার ফলে জনভোগান্তি হলে আমি কাউকে ছাড় দেব না।

তার এ হুঁশিয়ারিও যেন কাজে আসলো না। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক। খানাখন্দে ভরা সড়কের বিভিন্ন অংশে বৃষ্টি হলেই জমে যায় পানি।

ফলে বেগ পেতে হয় বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে বের হওয়া কন্টেইনারবাহী পরিবহনগুলোর। ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে বন্দর থেকে আসা পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়িগুলোকে।

আজ বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) নগরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের বেশ কয়েকটি অংশ সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের বেহাল দশার কারণে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে।

কয়েকটি জায়গায় পানি জমে বিটুমিনও ওঠে যায়। সড়কের বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় খানা-খন্দ। অনেক কষ্টে গতি কমিয়ে সড়কের এক পাশ হয়ে চলাচল করছে কাভার্ডভ্যান-প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন যানবাহন। এমনকি সাধারণ মানুষ পায়ে হেটে চলারও যোগান নেই অনেক অংশে।

উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অবহেলা আর কাজের ধীরগতিকে এই দুর্ভোগের জন্য দায়ী করছেন এই সড়কে চলাচল করা লোকজন।

তবে করপোরেশন দাবি করছে সড়কটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। করোনার কারণে কাজের গতি কিছুটা কম। তাছাড়া বৃষ্টিতে কিছু এলাকার নালায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় সড়কে পানি জমেছে। একই সঙ্গে কয়েকটি স্থানে বিটুমিন ওঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কিছু ঠিকাদার এখনো কাজ বুঝিয়ে দেননি।

করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, পিসি রোডে চারটি ভাগে কাজ চলছে। এখানে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্স, ম্যাক কর্পোরেশন ও রানা বিল্ডার্স। তাহের ব্রাদার্সের কাজ প্রায় শেষ। বাকি রয়ে গেছে রানা বিল্ডার্স ও ম্যাক কর্পোরেশনের অংশের কাজ।

আরএস/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর