chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

খোঁজ মিলছে না সেই মিনুর বড় ছেলের

নিজস্ব প্রতিবেদক : যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির পরিবর্তে প্রায় তিন বছর কারাগারে জেল খেটে মুক্তি পাওয়ার ১২ দিন পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মিনু আক্তার। সেই মিনুর বড় ছেলে ইয়াসিনকে (১২) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তার মামা।
চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর এলাকায় একটি দোকানে কাজ করত ইয়াসিন।

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) ইয়াসিনের মামা রুবেল ষোলশহর এলাকার ওই দোকানে গিয়ে তার কোনো সন্ধান পাননি। রুবেল বলেন, সকালে ভাগিনা ইয়াসিনের খোঁজে ষোলশহর গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি ইয়াসিন যে দোকানে কাজ করত সেই দোকানটি ভাঙা। দোকানের মালিকও নেই, ভাগিনা ইয়াসিনও নেই। তাদের কারও নম্বর নেই আমার কাছে।

এই বিষয়ে কোনো জিডি করেছেন কি-না জানতে চাইলে মিনুর ভাই বলেন, আরও খুঁজে দেখি। তারপর না পেলে জিডি করব। পুলিশকে জানাব।
উল্লেখ্য, মিনুর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে ছেলেরা মায়ের কাছেই থাকত।
এর আগে গত ২৮ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার পর আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম মিনুর মরদেহ দাফন করে। বোনের মৃত্যু সম্পর্কে রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, পুলিশ বলছে বোনের মৃত্যু সড়ক দুর্ঘটনায় হয়েছে। এরপরও আমাদের দাবি বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হোক। যাদের কারণে আমার বোন বিনা অপরাধে জেলে ছিলেন তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।

চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামি থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেছিলেন, ২৮ জুন দিবাগত রাতে বায়েজিদ লিংক রোডে গাড়ির ধাক্কায় এক নারী মারা যান। তার পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে ২৯ জুন আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে তার দাফন করা হয়। ওই নারীর পরিচয় বের করতে আমরা কাজ করছিলাম। পুলিশের একটি টিম সীতাকুণ্ড এলাকায় কয়েকজনকে ওই নারীর ছবি দেখালে তারা মিনুর ভাইয়ের কথা বলেন। পরে মিনুর ভাই ছবিটি দেখে এটি তার বোন বলে শনাক্ত করেন।

কামরুজ্জামান আরও বলেন, মিনু ওই দিন রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করার সময় তাকে কয়েকবার সড়ক থেকে সরিয়ে দিয়েছিল পুলিশের মোবাইল টিম। এছাড়া মিনুকে যে সময় গাড়ি ধাক্কা দেয় তখন কয়েকজন ঘটনাটি দেখেছেন। এ রকম দুজনের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারাই বলছেন, ঘটনাটি সড়ক দুর্ঘটনা। ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। সেই রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি।
তবে মিনুর আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বলেছিলেন, মিনুর মৃত্যুর বিষয়টি তদন্ত করা উচিৎ। তার লাশটি আবার ময়নাতদন্ত করার জন্য আবেদন করছি। এছাড়া মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করার জন্য আদালতে আবেদন করার চিন্তা করছি।
আসামি না হয়েও তিন বছর সাজা খেটে ১৬ জুন বিকেল ৪টার দিকে চট্টগ্রাম কারাগার থেকে মুক্তি পান নিরপরাধ মিনু। যাদের কারণে প্রায় ৩ বছর জেলে থাকতে হয়েছে, কারাগার থেকে বের হয়ে তাদের বিচারও দাবি করেছিলেন মিনু আক্তার।

মোবাইল ফোন নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পোশাককর্মী কোহিনুর বেগমকে হত্যা করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর এ মামলার রায়ে আসামি কুলসুমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। রায়ের দিন কুলসুমা আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
প্রকৃত আসামি কুলসুমা আক্তার মামলার সাজা হওয়ার আগে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। সাজা ঘোষণা হওয়ার পর ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুমা সেজে মিনু আক্তার কারাগারে আসেন। চলতি বছরের ২১ মার্চ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের পক্ষ থেকে আদালতে একটি আবেদন করা হয়। এই আবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে কারাগারে পাঠানো আসামির সঙ্গে প্রকৃত আসামির মিল নেই। এছাড়া কারা রেজিস্ট্রারে থাকা দুজনের ছবির মিল নেই।
এ আবেদনের শুনানি শেষে কারাগারে থাকা মিনুকে আদালতে হাজির করে তার জবানবন্দি নেওয়া হয়। তখন তিনি জানান, তার নাম মিনু, তিনি কুলসুমা নন।

আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারগুলো দেখে হাজতি আসামি কুলসুমা ও সাজাভোগকারী আসামির চেহারায় অমিল খুঁজে পান। তখন আদালত কারাগারের রেজিস্ট্রারসহ একটি নথি হাইকোর্ট বিভাগে আপিল নথির সঙ্গে সংযুক্তির জন্য পাঠিয়ে দেন।
পরে হাইকোর্ট গত ৭ জুন নিরপরাধ মিনুকে মুক্তির নির্দেশ দেন। এরপর ১৬ জুন মুক্তি পান মিনু।
এসএএস/

এই বিভাগের আরও খবর