chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

বাড়ছে রোগীর সংখ্যা, আইসিইউ সংকটে হাসপাতালগুলো

রকিব কামাল: ২০ জুন, রাত নয়টা। শ্বাসকষ্টসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন হাবিবুর রহমান। পরিস্থিতি অবনতি দেখে তাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটেন ছেলে গোলাম মাওলা মুরাদ। পর্যবেক্ষণ শেষে চিকিৎসরা তাকে আইসিইউতে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।

কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা না থাকায় বিপত্তি বাধে। একদিকে অসুস্থ বাবা, অন্যদিকে আইসিইউ শয্যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান রোগীর পরিবার।

গোলাম মাওলা মুরাদ চট্টলার খবরকে বলেন, বাবার শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসে সমস্যা বেশি ছিল। ডাক্তাররা অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে উনাকে আইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দেন। চিকিৎসকরা ধারণা করছেন তিনি করোনা সংক্রমিত হয়েছেন।

‘কিন্তু বেশ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়েও আমরা আইসিইউ পাইনি।বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়। সেখানেও ভর্তি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় আমাদের।’

কেবল হাবিবুর রহমান নন, করোনা উপসর্গসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় রোগী ও রোগীর স্বজনরা ছুটছেন হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে। আইসিইউ’র কুলকিনারা করতে না পেরে স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে হাসপাতালের পরিবেশ।

অনেকে হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে পথেই ঢলে পড়ছেন মৃত্যুর কোলে। বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে চিকিৎসকদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে করোনা সংকটের অবনতিতে আইসিইউ যেনো ধরা দিয়েছে সোনার হরিণ হয়ে।

হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েকদিনে হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ রোগীর চাপ বেড়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি অনেক হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ।

‘তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। হাসপাতালগুলোতে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ কোভিড বেডে অক্সিজেন ও হাই ফ্লো জোন দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সংক্রমণ ঝুঁকি রোধে জনসমাগম এড়িয়ে চলার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে জোর দিয়েছেন সিভিল সার্জন।

সিভিল সার্জন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো সর্বশেষ সাত দিনের প্রতিবেদনে দেখা যায়, নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মৃত্যুর সংখ্যা।

ফলাফলে দেখা দেয়, ২২ জুন ৯৯০ টি নমুনা পরীক্ষায় ২২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়, মারা যান এক রোগী। ২১ জুন ৯৯২ টি নমুনায় ১৯০ জনের করোনা ধরা পড়ে, মৃত্যু হয় চার রোগীর। ২০ জুন ৬৪২ টি নমুনায় ১৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়, মারা যান এক রোগী, ১৯ জুন ৯৮০ টি নমুনায় ধরা পড়ে ১৫৭ করোনা আকা্ন্ত এবং মারা যান ২ রোগী।

১৮ জুন ১ হাজার ১৫১টি নমুনা পরীক্ষায় ২২২ জনের শরীরে করোনা ধরা পড়ে। মৃত্যুবরণ করেন চার রোগী। ১৭ জুন ১ হাজার ১৭০ নমুনায় ১৬৯ জনের করোনা ধরা পড়ে, মারা যান দুই রোগী, ১৬ জুন ৬৪৭ টি নমুনা পরীক্ষায় ১০৭ জনের করোনা ধরা পড়ে, মারা যান তিনজন।

চট্টগ্রাম মেডিকলে কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির চট্টলার খবরকে বলেন, রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেলেও আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছি। দশটি আইসিইউ বেডের মধ্যে দুটি খালি আছে। কখন এটি পূর্ণ হয়ে যায় পরিস্থিতি বলে দিবে। এরমধ্যে অনেককে রেড অ্যালার্টে রাখা হয়েছে। এ ছাড়াও ১০০ বেডের কোভিড সিট ৩০০ সিটে রূপান্তরের কাজ করছি।

অপরদিকে আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তানজিম আহমেদ চট্টলার খবরকে বলেন, ১৬টি আইসিইউ বেডের মধ্যে কোনটি খালি নেই। কয়েকদিন আগে কয়েকটি বেড খালি ছিল। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রোগীর চাপ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। অনেকে এসে ফিরে যাচ্ছেন।
এদিকে সরকারি হাসপাতালে শয্যা না পেয়ে রোগীরা দ্বারস্থ হচ্ছেন বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে রোগীর চাপে টইটম্বুর।

নগরের পার্ক ভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম চট্টলার খবরকে বলেন, হঠাৎ করেই যেনো পরিস্থিতি নাজুক হয়ে গেছে। দশটি আইসিইউ বেডের মধ্যে কোনোটি খালি নেই। বাধ্য হয়ে রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

দশটি আইসিইউ বেডের মধ্যে দুইটি খালি থাকার কথা জানিয়েছেন ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপক রঞ্জন প্রসাদ দাশ। তিনি জানান, হাসপাতালে দশটি আইসিইউ এবং ২৯টি সাধারণ কোভিড বেডসহ ৩৯টি বেড রয়েছে। এর মধ্যে একটিমাত্র সাধারণ কোভিড বেড খালি রয়েছে।

এদিকে সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়ে মানুষের উদাসীনতাকে দোষারোপ করেছেন বিআইটিআইডি ল্যাবের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মামুনু রহমান। তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আমরা করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছি। সাধারণ মানুষ এর বিভিন্ন ধরন খেয়াল করেছেন।

‘এটি একেক সময় একেক রকম আচরণ করছে। অতি সংক্রমিত এই ভাইরাস দ্রুত মানুষকে আক্রান্তের পরও বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছেন না। সচেতন না হলে এটি আরও মহামারি আকার ধারণ করতে পারে।’

আরকে/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর