chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

চট্টগ্রামে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ

সচেতনতায় জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে গেল কয়েকদিনে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নগর ছেড়ে উপজেলায়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে নতুন করে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।

পরিস্থিতি বিবেচনায় লকডাউনের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছেন তারা। তবে সংক্রমণ রোধে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের ওপর জোর দিয়েছেন।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায় হাটহাজারী, রাউজান, ফটিকছড়ি ও রাঙ্গুনিয়ায় সংক্রমণের হার উঠানামা করছে।

এরমধ্যে ১৫ জুন হাটহাজারী উপজেলায় ১৬ জন, ফটিকছড়ি উপজেলায় ১৭ জন, রাউজানে ৬ জন ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়।

১৪ জুন হাটহাজারীতে ২১ জন, ফটিকছড়িতে ৩৬ জন, রাউজানে ৪ জন ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়।

এ ছাড়া ১৩ জুনের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাউজান ও ফটিকছড়ি উপজেলায় কোনো রোগী শনাক্ত না হলেও হাটহাজারী ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হন।

এর আগে ১২ জুন হাটহাজারীতে ১২ জন, ফটিকছড়ি উপজেলায় ২৩ জন, রাউজানে ৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হন।

১১ জুন হাটহাজারীতে ৮ জন, ফটিকছড়ি উপজেলায় ৬ জন, রাউজানে ১ জন ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ১২ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন।

সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডাঃ সেখ ফজলে রাব্বি চট্টলার খবরকে বলেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়টি সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যবিভাগের পক্ষ থেকে পর্যালোচনায় রাখা হচ্ছে।

‘বিভাগীয় কমিশনারকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানতে অভিযান চালাতে বলেছি।’

তিনি বলেন, যেকোনা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ুক না কেনো সেটি আতঙ্ক ও উদ্বেগের। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধিকে উপেক্ষা করা হলে এই ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়বে।

সোমবার (১৪ জুন) মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে লকডাউন দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে একজন রোগীর বাড়ি ফটিকছড়ি উপজেলায়।

এ বিষয়ে মনোযোগ আর্কষণ করা হলে সিভিল সার্জন বলেন, অধিক সংক্রমিত উপাজেলাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসনকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা রেড এলার্ট হিসেবে চিহ্নিত করছি। এখনই লকডাউনের মতো সিদ্ধান্তে যাচ্ছি না।

‘তবে জনসাধারণকে সচেতন করতে মাইকিং, প্রচারণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। প্রয়োজনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় লকডাউনে যাব।’

এদিকে অতি দ্রুত সময়ে ছড়িয়ে পড়া ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া।

তিনি চট্টলার খবরকে বলেন, এখন পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার বারের মতো করোনা জিনোম সিকুয়েন্স পরিবর্তন হয়েছে। এটি বিশ্বের একেক জায়গায় একেক রকম আচরণ করছে।

‘ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার মাত্রা ৬০ শতাংশের বেশি। এমন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষতির শঙ্কা বেশি। এ অবস্থায় সচেতন না হলে স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্ভাবনা রয়েছে।’

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষক। গবেষক দল মনে করছেন চট্টগ্রামে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে।

জানতে চাইলে গবেষণায় যুক্ত থাকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ফাংশনাল জিনোমিক্স অ্যান্ড প্রোটিওমিক্স ল্যাবরেটরির প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-ফোরকান চট্টলার খবরকে বলেন, হঠাৎ বৃষ্টি আর গরমের হেয়ালিপনায় অনেকে জ্বর, সর্দি, কাশি, পিঠে ব্যথাসহ বিভিন্ন উপসের্গে ভুগছেন।

‘কিন্তু এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বরের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক মাত্রা লক্ষ্য করা গেছে। যা অল্প সময়ের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দুর্বল করতে সক্ষম। উপসর্গ দেখা দিলেই অবশ্যই করোনা টেস্ট করাতে হবে।’

এ ছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এ গবেষক।

আরকে/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর