chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

এমন কোনো অঙ্গ নেই যেখানে যক্ষ্মা হয় না: সিভিল সার্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ও আন্দরকিল্লা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেছেন, টিউবারকুলোসিস (টিবি) বা যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসের ব্যাধি নয়, এটি মস্তিস্ক থেকে শুরু করে ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি ও হাড়সহ শরীরের যেকোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সংক্রমিত হতে পারে।

তিনি বলেন, ফুসফুসে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হলে টানা কয়েক সপ্তাহ কাশি ও কফের সাথে রক্ত যায়। আমাদের এমন কোন অঙ্গ নেই যেখানে যক্ষ্মা হয় না। যক্ষ্মা হচ্ছে একটি বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি যেটা মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর সংক্রমণে হয়ে থাকে।

বুধবার (২৪ মার্চ) নগরীর আন্দরকিল্লাস্থ চট্টগ্রাম জেলা বিশ্ব যক্ষা দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- ‘মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার, যক্ষ্মামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার’।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, সিভিল সার্জন অফিস ও সহযোগী সংস্থা সমূহ সভার আয়োজন করে।

সিভিল সার্জন বলেন, বর্তমান সরকারের আন্তরিকতার কারণে যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসায় দেশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসা সামগ্রী রয়েছে। পরিবারে যক্ষা রোগী থাকলে শিশুসহ অন্য সবাইকে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যক্ষা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সমন্বিত উদ্যোগের ফলে যক্ষা নির্মূল সম্ভব।

তিনি বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ জন্মগতভাবে যক্ষ্মা রোগের জীবাণু বহন করে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের এ রোগের ঝুঁকি বেশি। পরিবেশ দূষণ, দরিদ্রতা, মাদকের আসক্তি ও অপুষ্টি যক্ষার হার বাড়ার অন্যতম কারণ।

‘এ রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ভয় না করে সঠিক সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে এ রোগ পুরোপুরি সেরে যাবে।’

সিভিল সার্জন বলেন, সারাদেশে সরকারি হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার কারণে সাধারণ জনগণ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশাপাশি যক্ষা রোগীদের জন্যও সারাদেশে নির্ধারিত কিছু হাসপাতাল রয়েছে।

‘সরকার আগামীতে জনবল আরও বৃদ্ধি করলে সকল সরকারি হাসপাতালে সেবার মান আরো দৃশ্যমান হবে। মাঠ পর্যায়ে জনগণের কাঙ্খিত স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হলে সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভাবমূর্তি আরো উজ্বল হবে।’

সভার পূর্বে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে বিশ্ব যক্ষা দিবসের স্ট্যান্ডিং র‌্যালি উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বির সভাপতিত্বে ও টিবি ক্লিনিকের কনসালট্যান্ট ডা. মোস্তফা নুর মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় মূল বিষয় উপস্থাপন করেন বিভাগীয় টিবি এক্সপার্ট ডা. বিশাখা ঘোষ।

সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম আন্দরকিল্লা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) ডা. মোঃ আবদুর রব, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আসিফ খান, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রাগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোঃ নুরুল হায়দার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এসআইএমও ডা. এস.এম জাহিদ, আইসিডিডিআরবি’র মেডিকেল অফিসার ডা. শাওন বড়ুয়া, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক’র জেলা ম্যানেজার জামাল আহমদ ও মমতা’র পরিচালক শিবগাতুল আরিফ।

শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া ও যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির প্রোগাম অর্গানাইজার গাজী মোঃ নুর হোসেন।

বিভাগীয় টিবি এক্সপার্ট ডা. বিশাখা ঘোষ জানান, ২০২০ সালে চট্টগ্রাম জেলায় মোট যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয় ১৪ হাজার ১১৬ জন, তন্মধ্যে ক্যাটাগরী-১ যক্ষা রোগীর সংখ্যা ১৩ হাজার ২২৯ জন ও পূনঃ আক্রান্ত যক্ষা রোগীর সংখ্যা ৮৮৭ জন। প্রতিবছর প্রতি এক লক্ষ জনসংখ্যায় ফুসফুস আক্রান্ত জীবাণুযুক্ত নতুন যক্ষা রোগী শনাক্তকরণের হার ৬৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীদের মধ্যে সাফল্যের হার ৯৬ শতাংশ।

চট্টগ্রাম নগরী-জেলায় ডটস্ কর্ণার রয়েছে ৯৮টি ও কফ পরীক্ষার কেন্দ্র রয়েছে ৬৫টি। ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষা রোগী শনাক্ত হয় ৮৭০ জন ও চিকিৎসায় সাফল্যের হার ৬৯ শতাংশ। বর্তমানে চিকিৎসাধীন ডিআর-টিবি রোগীর সংখ্যা ১৭২ জন ও শনাক্তকরণের পরীক্ষাগার রয়েছে ৭টি।

এগুলো হচ্ছে-আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতাল, ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, গোলপাহাড় মোড়ের আইসিডিডিআরবি, অক্সিজেন, বন্দর ও বাকলিয়া এলাকার ব্র্যাক টিবি ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

এই বিভাগের আরও খবর