chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

খেলোয়াড়রা খারাপ খেললে নির্বাচক প্যানেলের দোষ খোঁজা হয় বেশি !

চট্টগ্রামের লাভ লেনের আবেদীন কলোনীতে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক ও ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। যার হাত ধরেই এসেছে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়। প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচে অর্ধশতক হাঁকানোর অনন্য কীর্তি গড়েছিলেন। অথচ এই ব্যাটসম্যানকে ১৯৯৯ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে তৈরি হয়েছিলো অনিশ্চয়তা। পরবর্তীতে দেশব্যাপী তাকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্তির আন্দোলন শুরু হলে, সিদ্ধান্ত পাল্টাতে বাধ্য হয় বিসিবি।

বাংলাদেশের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণীর লিগে নিয়মিত রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের এই কৃতি সন্তান। ৫২ ছুঁই ছুঁই ব্যাটিং গড় নিয়ে শেষ করেছিলেন ঘরোয়া লিগের ক্যারিয়ার। একই ম্যাচে দ্বিশতক এবং অন্য ইনিংসে শতক হাঁকিয়ে বিস্ময়েরও জন্ম দিয়েছিলেন। এটি শুধু বাংলাদেশে নয়! বিশ্ব ক্রিকেটেও এক অনন্য রেকর্ড। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাচক পদে নিযুক্ত রয়েছেন।

চট্টলার খবরের ক্রীড়া প্রতিবেদক ইফতেখার নিলয়ের সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি তুলে ধরেছেন চট্টগ্রামে তার শৈশবকালীন স্মৃতি, চট্টগ্রামের ক্রীড়াক্ষেত্রের নানা সমস্যা ও সম্ভাবনার কথার পাশাপাশি তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের টুকিটাকি।

চট্টলার খবর : কেমন আছেন শারীরিক ও মানসিকভাবে ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : জ্বী, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

চট্টলার খবর : বাংলাদেশ দল যখন মাঠের পারফরম্যান্সে হতাশ করে, তখন কেমন থাকেন ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : অবশ্যই খারাপ লাগে। এটা তো অনেক চ্যালেঞ্জিং জব। খেলোয়াড়রা খারাপ খেললে নির্বাচক প্যানেলের দোষ খোঁজা হয় বেশি। বাংলাদেশে এই সংস্কৃতি চলে এসেছে, এটা তো আর কখনো পরিবর্তন করা যাবেনা। তারপরও চেষ্টা করছি কিভাবে দলের র‌্যাকিংয়ে উন্নতি করা যায়। বিশেষ করে টেস্ট র‌্যাকিংয়ে কিভাবে আগানো যায়। ইতোমধ্যেই দলের একটা অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি আমরা।

চট্টলার খবর : চট্টগ্রামের লাভ লেনের আবেদীন কলোনীর শৈশবের স্মৃতি নিয়ে যদি কিছু বলতেন!

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : আবেদীন কলোনী তো স্পোর্টস কার্নিভাল এলাকা। সেই হিসেবে ছোটবেলা থেকেই আমরা খেলাধুলার পরিবেশে বড় হয়েছি। আমার বাবা-চাচারাও ক্রীড়ানুরাগী ছিলেন। সিজেকেএসের সকল ইভেন্টেই আমরা সকল কাজিনরা অংশগ্রহণ করতাম। এছাড়া পিটিআই ও কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া করেছি। কলেজিয়েট স্কুলের বড় মাঠেও খেলাধুলা করেছি। চট্টগ্রামে শৈশবকালীন সময় খুব দারুণ কেটেছে।

চট্টলার খবর : ঢাকায় অবস্থান করে চট্টগ্রামের কোন স্থান আপনাকে বেশি আবেগতাড়িত করে ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : চট্টগ্রাম কে তো অবশ্যই মিস করি। বিশেষ করে আবেদীন কলোনী। ওখানে শৈশবের স্মৃতি জড়িত। কলোনীর পুরোনো সংস্কৃতি মিস করি। এখন তো অনেক অ্যাপার্টমেন্টে হয়েছে, আগে তো সব-ই ছোটো ঘর ছিলো। তাই আবেদীন কলোনীর আগের পরিবেশ ও সংস্কৃতি মিস করি। আর চট্টগ্রামের বিমানবন্দর থেকে বাসায় যাওয়ার রাস্তাটা পাড়ি দেওয়া অনেক কষ্টসাধ্য। চট্টগ্রামের যেভাবে উন্নয়ন আশা করেছিলাম! সেভাবে আসলে হয়নি। যেহেতু বাণিজ্যিক রাজধানী, উন্নতি হওয়া উচিত। আশা করছি আগামী পাঁচ বছরে উন্নয়ন হবে চট্টগ্রামের।

 

খেলোয়াড়রা খারাপ খেললে নির্বাচক প্যানেলের দোষ খোঁজা হয় বেশি !

চট্টলার খবর : মুক্তিযুদ্ধে বাবা কে হারানোর সময় খুব ছোটো ছিলেন, কিছু কি মনে পড়ে ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : অনেক ছোটো ছিলাম। সেভাবে তো মনে নেই। তবে গর্ব হয় বাবার জন্য। শহীদ পিতার সন্তান হিসেবে, ১৯৮৬ এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমি ও আমার বড় ভাই (নুরুল আবেদীন নোবেল) একসাথে মাঠে নেমেছিলাম দেশ কে প্রতিনিধিত্ব করতে।

চট্টলার খবর : আপনার দাদার অবদান রয়েছে এম.এ.আজিজ স্টেডিয়াম নির্মাণের পেছনে, সেই গল্পটা যদি বলতেন!

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : চট্টগ্রামের ক্রীড়াক্ষেত্রে আমাদের পরিবার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্টেডিয়াম নির্মাণ, বড় বড় দল তৈরি করা। এখনও মনে আছে — ১৯৭৪ সালে আমি স্কুলে পড়ি, আমার দাদা চার্টার্ড প্লেনে করে আবাহনী কে নিয়ে এসেছিলো। শেখ কামালও আমাদের চট্টগ্রামের আবেদীন কলোনীর বাসায় অবস্থান করে খেলেছে।

চট্টলার খবর : ঘরোয়া ক্রিকেটে আবাহনী-মোহামেডানের মত উত্তেজনা কিভাবে ফিরিয়ে আনা সম্ভব ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : ঘরোয়া লিগের সংস্কৃতি উন্নত করতে হবে। আমি যখন খেলা শুরু করি, তখন আমি ক্লাস সেভেনের ছাত্র। তখন নিয়মিত তিন দিনের ম্যাচ হতো। এখন তো সেই সংস্কৃতি নেই। এগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। বিশেষ করে চট্টগ্রামে।

চট্টলার খবর : চট্টগ্রামে ক্রিকেটের উন্নয়নে বর্তমানে সবচেয়ে জরুরী কোন বিষয়টি ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি, খেলার আগ্রহও বেড়েছে। চট্টগ্রামে খুব জরুরী ভিত্তিতে ক্রিকেটের মাঠ প্রয়োজন দুটি। আর একটা মাঠ প্রয়োজন শুধুমাত্র শিশুদের ক্রীড়াক্ষেত্রে বিকাশ ঘটানোর জন্য। মাঠের ব্যবস্থা হলেই ক্রিকেট, ফুটবল, হকি সর্বক্ষেত্রেই এগিয়ে যাবে চট্টগ্রাম।

চট্টলার খবর : ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর আপনার ক্যাপ খোয়া গিয়েছিলো সেই মজার গল্পটা যদি শেয়ার করতেন !

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : আমরা সবাই পাকিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যান স্যাকলাইন মুশতাকের রান আউট আবেদনের, থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আকস্মিক মাঠে মানুষ প্রবেশ করা শুরু করে দিয়েছিলো। হঠাৎ করে দুজন আমার মাথায় খুব জোরে বাড়ি দিলো। পেছন ফিরে দেখলাম আমার মাথায় ক্যাপ নেই, ভীড়ের মধ্যে আর খেয়ালও করতে পারিনি কে ক্যাপ নিয়ে গেলো। জয়ের উত্তেজনায় সেদিকে তেমন নজর দেওয়ারও সুযোগ হয়নি।

 

খেলোয়াড়রা খারাপ খেললে নির্বাচক প্যানেলের দোষ খোঁজা হয় বেশি !

চট্টলার খবর : স্মরণীয় ক্যাপ হারিয়েছেন! নিশ্চয়ই খারাপ লাগে ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : সেটা তো অবশ্যই। পাকিস্তানের মত বড় দলের বিপক্ষে জয়ের স্মৃতি হিসেবে থাকতে পারতো। তবে যিনি নিয়েছেন, তার জন্য এটা অনেক বড় স্মৃতি হয়ে থাকবে; বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়ের।

চট্টলার খবর : ১৯৯৯ বিশ্বকাপে নিজের কোন ইনিংসটি বেশি পছন্দের ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : অবশ্যই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষের ইনিংসটি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষের ইনিংসও পছন্দের। তবে স্কটল্যান্ডের ইনিংসটি এগিয়ে রাখবো বিশ্বকাপে আমাদের প্রথম জয় হিসেবে। যদি সেদিন হেরে যেতাম তাহলে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়া মুশকিল হয়ে যেতো। মূলত সেই জয়ের ধারাবাহিকতায় আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করেছি।

চট্টলার খবর : চট্টগ্রামের ক্রিকেটীয় অবকাঠামো উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কি ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : চট্টগ্রামে এখন প্রধান চাহিদা হলো মাঠ। চট্টগ্রামের ক্রিকেটের উন্নতিতে মাঠ খুব-ই জরুরি হয়ে পড়েছে। সংকীর্ণ পরিবেশে কোনো ক্রীড়াক্ষেত্রেই উন্নতি সম্ভব নয়। ক্রিকেট, ফুটবলের জন্য আলাদা মাঠ প্রয়োজন। শিশুদের জন্যেও আলাদা মাঠ দরকার। শহরে সম্ভব না হলে, শহরের বাইরে করা হোক। বর্তমানে তো কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই খেলোয়াড়দের জন্য। এক্ষেত্রে যারা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন তারা আশা করছি নজর দেবেন। এবং বিত্তবানরাও এগিয়ে আসবেন আশা করি। তাহলেই উন্নতি সম্ভব।

চট্টলার খবর : বর্তমান সময়ে তামিম ইকবালের পর ভবিষ্যতে চট্টগ্রামের কোন ক্রিকেটার জাতীয় দলে দীর্ঘদিন সার্ভিস দিবে বলে মনে করেন আপনি ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : চট্টগ্রামে অনেক তরুণ মেধাবী খেলোয়াড় রয়েছে। যাদের প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা। তাহলেই এই তরুণরা ভবিষ্যতে দারুণ কিছু করতে সমর্থ হবে। সঠিক সুযোগ-সুবিধা পেলেই তারা উচ্চ পর্যায়েও তাক লাগিয়ে দিতে পারবে। আগে জাতীয় দলে নিয়মিত ৬/৭ জন চট্টগ্রামের ছিলো, নবাগত তরুণদের পরিচর্যা করা হলে চট্টগ্রামের সেই সুদিন আবারও ফিরে আসবে।

চট্টলার খবর : অবসরে কি করতে পছন্দ করেন আপনি ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : আমি সবসময় লং ড্রাইভে যেতে পছন্দ করি।

গাড়ি ড্রাইভ করতে ভালো লাগে। এখনও নিয়মিত অবসরে লং ড্রাইভে যাওয়া হয়।

 

খেলোয়াড়রা খারাপ খেললে নির্বাচক প্যানেলের দোষ খোঁজা হয় বেশি !

চট্টলার খবর : নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দল সফল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু দেখছেন ?

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু : নিউজিল্যান্ড কন্ডিশন খুব-ই কঠিন যেকোনো দলের জন্য। আমাদের জন্য তো আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং। তারপরেও যেহেতু আমাদের ক্রিকেটাররা অভিজ্ঞ, তাই আশা করছি নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে ভালো কিছু হবে অবশ্যই।

এএমএস/চখ

এই বিভাগের আরও খবর