chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

পটিয়া পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় কিশোর গ্যাং, সহিংসতার আশংকা!

প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় মুখর পৌর সদর

রাজীব সেন প্রিন্স : চতুর্থ ধাপে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন ধার্য্য করা হয় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবসের দিন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের প্রতিশ্রতি আর প্রচার-প্রচারণায় পুরো পৌর এলাকা মুখরিত হয়ে উঠছে।

তবে নির্বাচনী লড়াইয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম ঘোষণার পর থেকেই স্থানীয় কিশোর গ্যাং সদস্যদের উৎপাত বাড়ছে। এতদিন পুলিশের ভয়ে অনেকেই পলাতক থাকলেও বর্তমানে পৌর নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে।

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে পটকা ফুটিয়ে এলাকাবাসীর মনে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করতে তৎপর রয়েছে এসব সদস্যরা। এক একটা গ্রুপে ২০-৩০ জন কিশোর জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে।

নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে রাতের বেলায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার ছিড়ে ফেলার অভিযোগও উঠেছে একাধিক কাউন্সিলর প্রার্থীর মুখে।

পৌর সদর ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের বেপরোয়া তৎপরতা স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে বিভিন্ন দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হেভিওয়েট মেয়র প্রার্থী ও স্থানীয় বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের হয়ে কাজ করছে বেশিরভাগ কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ছে এলাকার ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ।

পটিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বকুল অভিযোগ করে বলেন, পৌর নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে উঠতি বয়সি তরুণ ও যুবসমাজ ধ্বংস দিকে ধাবিত হবে বলে মনে করেন অ্যাডভোকেট মো. জমিউর আলম।

এদিকে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে আনুষ্ঠানিক প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। পৌষ-মাঘের শীত উপেক্ষা করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা।

লক্ষ্য যেকোনো উপায়ে ভোটারদের ভোট নিজেদের বাক্সে আনা। প্রার্থীরা বিভিন্ন সভা ও সমাবেশ এবং গণসংযোগকালে সুন্দর আচরণ মাদকমুক্ত সমাজ গঠন অপরাধ দমনের কথা বললেও বাস্তবে তা উল্টো পরিনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমদ নুর ও গোলাম কিবরিয়া শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে পৌর সদরের স্টেশন রোড, বাস স্ট্যান্ড, খলিলুর রহমান স্কুল, পটিয়া বাইপাস ও ক্লাব রোডসহ বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে কিশোর গ্যাংয়ের আনা গোনা বেড়েছে।

তারা ধারণা করছেন নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কমবেশি কিশোর গ্যাং সদস্যরা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সাথে মিশে গিয়ে যেকোনো ধরনের বড় ঘটনা ঘটাতে পারে।

এদিকে পুলিশ ইতিমধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজন সক্রিয় সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হলেও বেশিরভাগ এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফলে হাট বাজারে কেনাকাটা করতে আসা বাইক চালকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

অভিযোগ রয়েছে, গ্যাংয়ের কোন সদস্যকে আটক করা হলে থানায় বা কোর্টে জামিনের জন্য কিছু অসাধু নেতা ও জনপ্রতিনিধি তাদের ছাড়িযে নিতে লবিং ও অর্থ ব্যয় করেন।

কিশোর গ্যাং ও বহিরাগত সন্ত্রাস রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে উর্ধ্বতন পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।

এ বিষয়ে পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান বলেন, পটিয়া উপজেলা সদরে কিশোর গ্যাং কিংবা কোনও অপরাধীর স্থান নেই। পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে কোন রকমের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারি যে বা যে দলেরই হোক না কেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ৩৯ হাজার ৭শ ৮৭ জন ভোটার নিয়ে পটিয়া পৌরসভায় এবার মেয়র পদে মোট ৪ জন প্রার্থী নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ গ্রহণ করছেন।

এবারের পটিয়া পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতিক নিয়ে মো. আইয়্বুব বাবুল, ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন নুরুল ইসলাম সওদাগর।

তাছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে সামশুল আলম মাস্টার ও মোমবাতি প্রতিক নিয়ে ইসলামী ফ্রন্ট থেকে মোহাম্মদ আলী হোসাইন নির্বাচন যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করছেন।

পৌরসভায় মোট ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড সদস্য (নারী) পদে ৯ জন নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন। এদের মধ্যে ৫ নং ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্ধী কোন প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন জসিম উদ্দিন।

চখ/রাজীব সেন প্রিন্স

এই বিভাগের আরও খবর