chattolarkhabor
চট্টলার খবর - খবরের সাথে সারাক্ষণ

আলোচিত চেয়ারম্যান আমজাদ হত্যার রায় কাল : স্বামী হত্যার একুশ বছর পর বিচার পাচ্ছে স্ত্রী!

নিজস্ব প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে স্বামী হত্যার বিচারের জন্য এক আদালত থেকে অন্য আদালত ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে একুশ বছরের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে এক স্ত্রীর।

নানা আইনী জটিলতায় স্বামী হত্যা মামলার রায় তথা আসামিদের বিচার আদৌ দেখে যেতে পারবেন কিনা তা নিয়ে স্ত্রী সৈয়দা রওশন আক্তারের মনে যে সংশয় তৈরি হয়েছিলো তার অবশান হয়তো ঘটবে আগামীকাল রবিবার।

এদিন চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে চাঞ্চল্যকর আমজাদ হোসেন চেয়ারম্যান হত্যার বিচারাধীন মামলার রায় ঘোষণার চুড়ান্ত দিন ধার্য করা হয়।

জানা যায়, আলোচিত চেয়ারম্যান আমজাদ হত্যা মামলায় ২০ আসামির মধ্যে ১ নং নম্বর আসামী লুৎফর রহমান চৌধুরী মৃত্যু বরণ করেছেন। বাকি ১৯ আসামির ৯ জন পলাতক ও ১০ আসামী বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

রায় ঘোষণার চুড়ান্ত তারিখ আগামীকাল রবিবার কারাগারে থাকা আসামীদের আদালতে উপস্থিত করা নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

কারাগারে থাকা আসামীরা হলেন নেজাম উদ্দিন, সাতকানিয়া সদরের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন রফিক, ইদ্রিস, জাহেদ, ঠোট কাটা মানিক, আবু মো. রাশেদ, ফোরক আহমদ, হারুনুর রশিদ, জিল্লুর রহমান ও আবু তাহের।

তাছাড়া এই মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত পলাতক আসামীরা হলেন, বশির আহমদ, ইদ্রিস পিং সাহেব মিয়া, তারেক, আইয়ুব, মোর্শেদুল আলম, আবদুল মালেক, জসিম উদ্দিন, খায়ের আহমদ ও মো. মোস্তাক।

জানা যায়, হত্যা মামলায় ২০ আসামির মধ্যে ১২ জন বিভিন্ন সময়ে জামিন নিলেও শুরু থেকেই পলাতক ছিলেন ৮ জন। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি আদালত এই ৮ আসামির বিরুদ্ধে ‘ফ্রেশ ওয়ারেন্ট’ জারির আদেশ দেন।

কিন্তু এ পর্যন্ত ওই ৮ আসামির কেউই গ্রেফতার হয়নি। এরমধ্যেই জামিনে থাকা আরো এক আসামী আদালতের জামিন নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

নিহত চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের স্ত্রী সৈয়দা রওশন আক্তার বলেন, স্বামী হত্যার বিচারের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা এবং এক মামলা নিয়ে এক আদালত থেকে অন্য আদালতে ঘুরতে ঘুরতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।

তিনি বলেন, মনে সংশয় ছিল স্বামী হত্যার বিচার আদৌ দেখে যেতে পারব কিনা? তবে আল্লাহ’র অশেষ কৃপায় আগামীকাল হয়তো অপেক্ষার পালা শেষ হবে। মনের সংশয়ও কাটবে।

উল্লেখ্য : গত ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর রাত ১২ টা ১৫ মিনিটের সময় সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে সাতকানিয়া উপজেলার ১৭ নং সোনাকানিয়া ইউনিয়নের দুইবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হোসেনকে। মীর্জাখীল দরবার শরীফের ওরশ চলাকালীন সময়ে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে।

সন্ত্রাসীরা দরবার শরীফের উত্তর গেইট সংলগ্ন নাছিরের চায়ের দোকানে স্থানীয়দের সাথে আলোচনায় থাকাবস্থায় চেয়ারম্যান আমজাদকে চতুর্দিকে ঘিরে উপর্যুপুরি গুলি করার পর মৃত্যু নিশ্চিত হলে দরবার শরীফের গেইট দিয়ে পালিয়ে যায়।

হত্যার পরদিন ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবর হিতের স্ত্রী সৈয়দা রোশনা আকতার বাদী হয়ে ২০ জন আসামীর নাম উল্লেখ করে সাতকানিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। (মামলা নং-১, তারিখ: ৪১/১০/১৯৯৯ ইং, ধারা ৩০২/ ৩৪।

মামলাটি প্রথমে সাতকানিয়া থানা পুলিশ তদন্ত করেন পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে সিআইডি পুলিশের কাছে তদন্তের জন্য ন্যস্ত হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সিআইডি পুলিশ কর্মকর্তা ২০০০ সালের ২২ ডিসেম্বর বিশ আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে।

মামলাটি ২য় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে এস/টি নম্বর ২৫৮/ ০৪ হিসেবে বালামভূক্ত হয়। গত ২০০৪ সালের ২৫ অক্টোবর বিশ আসামীর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অপর এক আদেশে বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে প্রেরণ করা হয়।

দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে একুশ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ গ্রহণক্রমে নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে বিচার কার্যক্রম সমাপ্ত না হওয়ায় পুনরায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতে ফেরত আসে।

২য় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে বিচার কার্যক্রম নিষ্পত্তি না হওয়ার ফলে আরেক আদেশে পুনরায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুানালে স্থান্তারিত হয়। ২০০৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২০০৬ সালের ৯ মার্চ পর্যন্ত বাদীসহ একুশ জন স্বাক্ষীর পুনরায় জবান বন্দি রেকর্ড করা হয়।

এরপরও ট্রাইব্যুনালে বিচার নিষ্পত্তি না হওয়ায় পুনরায় অতিরিক্ত দায়রা জন ২য় আদালতে ফেরত আসে। সেখানেও মামলাটির বিচার কার্যক্রম নিস্পত্তি না হওয়ার চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের ৮৫ নম্বর আদেশ ও ২৬৬ নং স্মারকমূলে বিচার নিস্পত্তির জন্য পুনরায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৬ষ্ঠ আদালতে প্রেরণ করা হয়।

গত ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল উক্ত আদালতে আসামীদের ৩৪২ ধারা পরীক্ষা সমাপ্ত করে তৎকালীন জজ মাসুদ করিম যুক্তি তর্ক শেষে রায়ের পর্যায়ে আসলে তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় আর রায় প্রচার করা হয়নি।

পরে উক্ত আদালতে বিচারক শূন্য থাকার ফলে ভারপ্রাপ্ত বিচারকের দায়িত্ব পান ৪র্থ আদালতের বিচারক গোলাম কবীর। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত বিচারক গোলাম কবীরের আদালতে অধিকতর যক্তি তর্ক সম্পূর্ণ শেষ হলেও চার মাস পর চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলার পুনরায় শুনানীর জন্য তারিখ ধার্য করেন।

এভাবে এক আদালত হতে অন্য আদালতে বিচার কার্যক্রম নিস্পত্তি না হওয়ায় মামলার বাদী অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হন। পরে মামলার বাদী পক্ষে বর্তমান জেলা ও দায়রা জজ ইসমাঈল হোসেনের আদালতে এক আবেদনের প্ররিপ্রেক্ষিতে এক আদেশে এ বছরের প্রথমার্ধে পুনরায় বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার নিস্পত্তির জন্য প্রেরণ করা হয়।

কবে করোনার কারণে ট্রাইব্যুনালে চার মাস বিচার কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও গত তিন মাস পূর্ব থেকে অল্প সময়ের ব্যবধানে তারিখ ধার্যের মাধ্যমে ( সর্বশেষ ১১ নভেম্বর) দীর্ঘ সময় অধিকতর যুক্তিতর্ক শুনানী শেষে মামলার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

এজাহার চার্জশীট ও চার্জগঠনভূক্ত বিশ আসামীর মধ্যে আদালতে উপস্থিত দশ আসামীকে জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণ করেন বিচারক এ কে এম মোজাম্মেল হক চৌধুরী। ২৬ নভেম্বর মামলার রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন।

তবে রায় লেখা সম্পন্ন না হওয়ায় পুনরায় ৭ ডিসেম্বর রায়ের তারিখ ধার্য হয়। এভাবে দুবার রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে অবশেষে আগামীকাল রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটির রায় প্রচারের জন্য চূড়ান্ত তারিখ ধার্য করেন বিচারক।

চখ/রাজীব প্রিন্স

এই বিভাগের আরও খবর